অনুভূতিতে প্রভাব ফেলে খাদ্যাভ্যাস। তাই মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে প্রয়োজন পুষ্টিকর খাবার।
হতে সংগৃহিত
নানান গবেষণায় দেখা গেছে অন্ত্রের সাথে মস্তিষ্কের যোগাযোগ রয়েছে। ফলে কী ধরনের অনুভূতি কাজ করছে সেটা খাদ্যাভ্যাসের ওপর অনেকটাই নির্ভর করে।
সাধারণভাবে মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসায় নানান ধরনের থেরাপি, কাউন্সেলিং বা পরামর্শ ও উপদেশ এবং ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
তবে এখন উদীয়মান চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে ‘নিউট্রিশনাল সাইকিয়াট্রি’ বা পুষ্টির মাধ্যমে মনোরোগের চিকিৎসার একটি ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।
হেল্থলাইন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়ে মার্কিন পুষ্টিবিদ সিসিলিয়া স্নাইডার বলেন, “কী খাবার বেছে নিচ্ছেন সেটার ওপর নির্ভর করে হজমতন্ত্রের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে। কারণ মস্তিষ্কের সাথে অন্ত্রের নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে।”
‘গাট’ বা অন্ত্রে কোটি কোটি অণুজীব বাস করে যারা দেহের নানান কার্যক্রম, যেমন- ‘নিউরোট্রান্সমিটার’ থেকে রাসায়নিক সংকেত পাঠানো, ঘুম ব্যবস্থাপনা, যন্ত্রণা, ক্ষুধা, মন, মেজাজ, অনুভতিতে প্রভাব ফেলে।
‘ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া’র গবেষকদের করা গবেষণার ফলাফল থেকে জানানো হয়- আমরা যা খাই তা অন্ত্রের অণুজীবের উপনিবেশের পরিবেশে সরাসরি প্রভাব ফেলে, যা থেকে মস্তিষ্কেও প্রভাব পড়ে; অর্থাৎ মানসিক স্বাস্থ্য এবং অনুভূতি নিয়ন্ত্রিত হয়।
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন
“গবেষণায় দেখা গেছে সবজি ও ফল খাওয়ার অভ্যাস গড়লে মন-মেজাজ উন্নত হয়”- বলেন স্নাইডার।
পুষ্টিকর খাবার হিসেবে কোন খাদ্যাভ্যাস বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত না নিতে পারলে, ‘মেডিটেরিয়ান ডায়েট’ অনুসরণ করার পরামর্শ দেন এই পুষ্টিবিদ।
কারণ ‘মেডিটেরিয়ান’ ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে আছে- ফল, সবজি, মাছ, বাদাম, ডাল, অলিভ অয়েল এবং দুগ্ধজাত খাবার।
আরও প্রতিবেদন
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাঁচ নীতি
ভূমধ্যসাগরীয় খাবারে ‘বিষণ্নতা প্রতিরোধ’
খাবার যেভাবে মনের ওপর প্রভাব ফেলে
আবার এই খাদ্যাভ্যাস থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে- ভাজাপোড়া খাবার, প্রক্রিয়াজাত মাংস, মিষ্টি পানীয় এবং বেইকড খাবার।
পাশাপাশি মানসিক চাপ ও প্রদাহ কমাতে বেছে নিতে হবে- উচ্চ আঁশ যুক্ত খাবার, যেমন- পূর্ণ শস্য, ওটস গাজর, বিটরুট, ব্রকলি, মিষ্টি আলু, নানান ধরনের ডাল ও মটর ইত্যাদি। ফল ও সবজি।
আনস্যাচুরেইটেড ফ্যাট, যেমন- অলিভ অয়েল, চিনাবাদামের তেল, নানান ধরনের বাদাম ও বীজ। ‘ফার্মেন্টেড’ বা গাঁজানো খাবার, যেমন- দই।
মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় সহজ কৌশল
সহজ কিছু বিষয় খেয়াল রাখলে স্বাস্থ্যকর খাবার বাছাই করা যায়। আর পুষ্টি গ্রহণের পরিমাণ বাড়াতে বেশ কয়েকটি খাবারের পরামর্শ দিয়েছেন পুষ্টিবিদ স্নাইডার।
ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস: আখরোট, চিয়া ও তিশির বীজ, স্যামন-সহ নানান ধরনের তৈলাক্ত মাছ।
ফোলেইট: গরুর লিভার (যকৃত), ভাত, মটর, পালংশাক, ব্রাসেল্স স্প্রাউটস।
লৌহ: ওয়েস্টার বা শামুক, গরুর যকৃত, পালংশাক, ডার্ক চকলেট, ডাল, টফু।
ম্যাগনেসিয়াম: পালংশাক, কুমড়া ও চিয়া’র বীজ, সয়া মিল্ক, মটর, কাঠবাদাম, কাজুবাদাম ও চিনাবাদাম।
জিঙ্ক: শামুক, মুরুগির মাংস, গরুর মাংস, বড় চিংড়ি মাছ, কুমড়ার বীজ।
বি ভিটামিন: গরুর যকৃত, গরুর দুধ, মিষ্টি আলু, গাজর।
ভিটামিন সি: লাল ও সবুজ ক্যাপ্সিকাম, কমলা, জাম্বুরা, লেবু, স্ট্রবেরি, ব্রকলি।
বেছে নিতে হবে প্রিবায়োটিকস এবং প্রোবায়োটিকস
অন্ত্রে থাকা ব্যাক্টেরিয়াদের পুষ্টি যোগায় প্রিবায়োটিকস। অন্যদিকে প্রোবায়োটিক মানে হল অন্ত্রের উপকারী ব্যাক্টেরিয়া।
এই ধরনের খাবারের মধ্যে আছে-
ফার্মেন্টেড বা গাঁজানো খাবার: দই, কেফির, বাটারমিল্ক, কিমচি, কাম্বুচা ইত্যাদি।
মসলা: রসুন, পেঁয়াজ।
সবজি: আর্টিচোক এবং অ্যাসপারাগাস।
ফল: আপেল ও কলা।
শস্য: বার্লি এবং ওটস।
এছাড়া নানান ধরনের সবজি, ফল ও পূর্ণ শষ্য খাওয়ার অভ্যাস গড়তে হবে। পাশাপাশি নানান প্রক্রিয়াজাত ও ভাজাপোড়া খাবার বাদ দিলে উন্নত হবে মানসিক স্বাস্থ্য।
