সামাজিক মাধ্যম এক্স এ এক পোস্টে তালেবান মুখপাত্র জানিয়েছেন, এ হামলার ঘটনায় আরও শতাধিক আহত হয়েছেন।
হতে সংগৃহিত
আফগানিস্তানে পাকিস্তানি বাহিনীর হামলায় ১২ জনেরও বেশি বেসামরিক নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে কাবুলের তালেবান প্রশাসন।
সামাজিক মাধ্যম এক্স এ এক পোস্টে তালেবান মুখপাত্র জানিয়েছেন, বুধবারের এ হামলার ঘটনায় আরও শতাধিক আহত হয়েছেন।
রয়টার্স জানিয়েছে, এদিন দুই পক্ষের মধ্যে আবার নতুন করে লড়াই বেঁধেছে। এর আগে গত শনি, রবিবার সীমান্তে দুই পক্ষের মধ্যে লড়াইয়ে উভয়পক্ষের বহু নিহত হন।
এক্স এ তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, “আজ সকালে পাকিস্তানি বাহিনী হামলা শুরু করে। তাদের হামলায় ১২ জনেরও বেশি বেসামরিক নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন।”
তালেবান দাবি করেছে, তারা ‘অনেক পাকিস্তানি সেনাকে হত্যা করেছে’, তাদের অনেক সীমান্ত চৌকি ও কেন্দ্র দখল করেছে এবং তাদের অস্ত্রশস্ত্র ও ট্যাংক জব্দ করেছে আর তাদের অধিকাংশ সামরিক স্থাপনা ‘ধ্বংস’ করেছে।
পাকিস্তানি কর্মকর্তারা এই সংঘর্ষের জন্য তালেবানকে দায়ী করে জানিয়েছেন, এতে তাদের সীমান্তের এদিকে চার বেসামরিক আহত হয়েছেন।
পাকিস্তানের চমন জেলার আঞ্চলিক প্রশাসক হাবিব উল্লাহ বাঙ্গুলজাই রয়টার্সকে বলেছেন, “চমনের কাছে পাকিস্তানি সীমান্ত চৌকিগুলোতে হামলা চালিয়েছে তালেবান।”
তিনি জানান, বুধবার ভোররাতে শুরু হওয়া এ লড়াই পাঁচ ঘণ্টা ধরে চলে। পাকিস্তানি বাহিনী হামলা ‘প্রতিরোধ’ করেছে বলে দাবি করেন তিনি।
পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে ২৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত থাকালেও এর অনেক এলাকা অনির্ধারিত। এসব এলাকায় দুইপক্ষের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কিন্তু ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতা দখল করার পর থেকে সীমান্তে এবারই সবচেয়ে মারাত্মক লড়াই শুরু হয়েছে।
সম্প্রতি পাকিস্তানে জঙ্গি হামলার ঘটনা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে দেশটির উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখওয়া প্রদেশে। এসব হামলায় দেশটির সামরিক বাহিনীর বহু সদস্য নিহত হয়েছেন।
এসব হামলার জন্য আফগানিস্তান থেকে আসা জঙ্গিদের দায়ী করে পাকিস্তান। ইসলামাবাদের অভিযোগ, আফগানিস্তানের নিরাপদ আস্তান থেকে এসে জঙ্গিরা পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে। আফগানিস্তানের তালেবান প্রশাসনকে এসব জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চাপ দেয় ইসলামাবাদ।
কিন্তু অভিযোগ অস্বীকার করে তালেবান জানায়, আফগানিস্তানে কোনো পাকিস্তানি জঙ্গি নেই।
এর মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার রাতে মুহুর্মুহু বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দে কেঁপে ওঠে কাবুল। পাকিস্তান এ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটাই করেনি। কিন্তু তালেবান সরকার অভিযোগ করে, কাবুল ও আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশগুলোতে হওয়া হামলাগুলোর পেছনে আছে পাকিস্তান। তার প্রতিশোধ নেওয়ার প্রত্যয় জানায়।
এরপর গত শনিবার রাতে সীমান্তে দুইপক্ষের মধ্যে লড়াই শুরু হয়ে যায়। তালেবান সরকার দাবি করে, তারা ৫৮ জন পাকিস্তানি সেনাকে হত্যা করেছে। আর পাকিস্তান দাবি করে, তারা দুই শতাধিক তালেবনা যোদ্ধাকে হত্যা করেছে।
পরে পাকিস্তান স্বীকার করে, তাদের পক্ষে ২৩ জন সেনা নিহত ও আরও ২৯ জন আহত হয়েছেন। তারা দাবি করে, তাদের বাহিনীগুলো আফগানিস্তানের ২১টিরও বেশি সীমান্ত চৌকি দখল করে নিয়েছে।
কাবুল তাদের পক্ষে হতাহতের কোনো সংখ্যা নিশ্চিত করে জানায়নি।
এই লড়াইয়ের পর দুই প্রতিবেশী তাদের অনেকগুলো সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করে দেয়। এতে বাণিজ্য বন্ধ হয়ে দুই পাশে বহু মালবাহী ট্রাক আটকা পড়ে।
চারদিকে ভূখণ্ড বেষ্টিত আফগানিস্তানে পণ্য ও খাদ্য সরবরাহের প্রধান উৎস পাকিস্তান।
দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় চীন উদ্বেগ জানিয়ে উভয় দেশকে তাদের নাগরিক ও বিনিয়োগ সুরক্ষিত রাখার অনুরোধ জানিয়েছে। রাশিয়া দুই পক্ষকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। আর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, এই সংঘাতের সমাপ্তি ঘটাতে তিনি সাহায্য করতে পারবেন।