
পিএসপি ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডে সাত-আট বছর আগে ৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন হোমিও চিকিৎসক আব্দুল গনি। ফান্ডটি নিয়ন্ত্রণ করে সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রেস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট। বর্তমানে তার পোর্টফোলিওতে বিনিয়োগের বিপরীতে ২ লাখ টাকার বেশি মূলধন ঘাটতি দেখাচ্ছে। তিনি ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের এই ফান্ডের প্রতিটি ইউনিট ১২ টাকা ৫০ পয়সা দরে কিনেছিলেন, যা এখন ৩ টাকা দরেও বিক্রি করতে পারছেন না।
ক্ষোভের সুরে তিনি বলেন, ‘ব্যাংকে না রেখে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করে জমানো টাকাগুলো নষ্ট করেছি। সাড়ে ১২ টাকায় কেনা ইউনিট এখন ৩ টাকাতেও বিক্রি করতে পারছি না। তিন-চার দিন সেল অর্ডার দিয়েছিলাম, তাও বিক্রি হয়নি। নিরাপদ লাভের আশায় মূলধনই হারিয়ে ফেলেছি।’
শুধু আব্দুল গনি নন, বাংলাদেশের মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগকারী অধিকাংশেরই গল্প অনুরূপ। এই খাত থেকে মুনাফা নিয়ে ফেরা যেন স্বর্ণালঙ্কার কুড়িয়ে পাওয়ার মতো সৌভাগ্যের বিষয়। বিনিয়োগ করবেন, চিন্তামুক্ত হয়ে ঘুমিয়ে থাকবেন আর কয়েক বছর পর মূলধনের বড় অংশ হারিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরবেন— বিগত বছরগুলোতে যেসব সাধারণ বিনিয়োগকারী মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করেছেন, তাদের বেশিরভাগের সঙ্গেই এমনটি ঘটেছে।
অথচ, বিশ্বজুড়ে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ হলো একটি নিরাপদ ও নিশ্চিত মুনাফার মাধ্যম। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে মিউচুয়াল ফান্ডের আকার মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ৬০ শতাংশের বেশি। অথচ বাংলাদেশে এই আকার জিডিপির ০.১০ শতাংশের কম। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও জিডিপি অনুপাতে মিউচুয়াল ফান্ডের আকার প্রায় ২০ শতাংশ। সম্প্রতি দেশটিতে মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে কোটিপতির সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। সেখানে আমাদের দেশে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ টানার কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই। বিপরীতে বিনিয়োগকারীদের আছে পুঁজি হারানোর ভয় ও অনাস্থা।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের মিউচুয়াল ফান্ডের ভবিষ্যৎ নষ্ট করেছে কিছু ‘দুষ্ট’ সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি ও তাদের সংশ্লিষ্টরা। আর নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিগত কমিশনের দুর্বল তদারকি এর জন্য অনেকটা দায়ী। বিশ্বের কোনো দেশেই মিউচুয়াল ফান্ড খাতে এতটা অব্যবস্থাপনা দেখা যায়নি, যতটা বাংলাদেশে হয়েছে।
বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যে ভয় জন্ম নিয়েছে, তা কাটিয়ে কতদিন বা কত বছরে মিউচুয়াল ফান্ড খাত আস্থার জায়গায় ফিরতে পারবে, তা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেটস (বিএএসএম)-এর মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সারা বিশ্বের খুচরা বিনিয়োগকারীরা (Retail Investors) মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে বিনিয়োগ করে থাকেন। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর চিত্রও তাই। তবে আমাদের দেশ এক্ষেত্রে ঠিক উল্টো পথে রয়েছে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে এই খাতটি কখনোই ভালো করতে পারেনি। ফান্ডগুলোর ব্যবস্থাপনায় যারা রয়েছেন তাদের অদক্ষতা কিংবা নিয়ন্ত্রক সংস্থার পূর্বের কমিশনে যারা ছিলেন তাদের কম গুরুত্বারোপ, যা-ই হোক, খাতটি আসলে সুযোগগুলো ঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারেনি।’
তালিকাভুক্ত মেয়াদি ফান্ডগুলোর অবস্থা
পুঁজিবাজারে লেনদেন হয় এমন ক্লোজড এন্ড বা মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের সংখ্যা ৩৭টি। এর মধ্যে ‘বাংলাদেশ রেস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট’ ও ‘আইসিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট’-এর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ১০টি করে মোট ২০টি ফান্ড। এর বাইরে ‘এল আর গ্লোবাল বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট’-এর ছয়টি, স্ট্যাটেজিক ইকুইটি ম্যানেজমেন্ট-এর তিনটি, এইমস বাংলাদেশ, ভ্যানগার্ড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ও সিএপিএম ক্যাপিটাল অ্যান্ড অ্যাসেট পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্ট-এর দুটি করে মোট ছয়টি এবং ‘এশিয়ান টাইগার ক্যাপিটাল অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট’ ও ‘ক্যাপিটেক অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট’-এর নিয়ন্ত্রণে একটি করে মোট দুটি ফান্ড রয়েছে।
এই ফান্ডগুলোর সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ (বাজারের পরিধি) বর্তমানে পাঁচ হাজার ৬৯০ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশ রেস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট-এর কাছে দুই হাজার ৮৮৪ কোটি ১৩ লাখ, এলআর গ্লোবাল-এর কাছে ৮৮৯ কোটি ৫৮ লাখ, আইসিবি-এর কাছে ৮০৩ কোটি ২০ লাখ, স্ট্যাটেজিক ইকুইটির কাছে ২৭২ কোটি ৯৫ লাখ, ভ্যানগার্ড-এর কাছে ২৬৩ কোটি পাঁচ লাখ, এইমস বাংলাদেশ-এর কাছে ২৪২ কোটি ৯২ লাখ, সিএপিএম ক্যাপিটাল-এর কাছে ১১৬ কোটি ৯৮ লাখ, ক্যাপিটেক-এর কাছে ১৫৫ কোটি ৬৮ লাখ এবং এশিয়ান টাইগার ক্যাপিটাল অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট-এর কাছে ৬১ কোটি ৭৯ লাখ টাকার সম্পদ রয়েছে।
শুধু আব্দুল গনি নন, বাংলাদেশের মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগকারী অধিকাংশেরই গল্প অনুরূপ। এই খাত থেকে মুনাফা নিয়ে ফেরা যেন স্বর্ণালঙ্কার কুড়িয়ে পাওয়ার মতো সৌভাগ্যের বিষয়। বিনিয়োগ করবেন, চিন্তামুক্ত হয়ে ঘুমিয়ে থাকবেন আর কয়েক বছর পর মূলধনের বড় অংশ হারিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরবেন— বিগত বছরগুলোতে যেসব সাধারণ বিনিয়োগকারী মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করেছেন, তাদের বেশিরভাগের সঙ্গেই এমনটি ঘটেছে
বর্তমান পরিস্থিতি
বর্তমানে লেনদেন হওয়া ইউনিট দর বিবেচনায় ফান্ডগুলোর সম্পদের বিপরীতে বাজার মূলধনের পরিমাণ অর্ধেকের নিচে নেমেছে। এই ৩৭টি ফান্ডের মধ্যে মাত্র চারটির দর অভিহিত মূল্য ১০ টাকার উপরে লেনদেন হচ্ছে। বাকি ৩৩টির ইউনিট দর ৩ টাকা থেকে ৮ টাকা ৭০ পয়সার মধ্যে রয়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-এর তথ্য অনুযায়ী, ফান্ডগুলোর মধ্যে ২৭টির রিজার্ভ ঘাটতি রয়েছে। সম্মিলিতভাবে এই ঘাটতির পরিমাণ ৬৫৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। বিপরীতে ১০টি ফান্ডের রিজার্ভে সামান্য পরিমাণ সঞ্চিতি রয়েছে। সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে ওই ১০টি ফান্ডেও রিজার্ভ ঘাটতির শঙ্কা রয়েছে এবং ২৭টি ফান্ডের ঘাটতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।
ফান্ডগুলোর মধ্যে ছয়টি গত দুই বছর ধরে আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে অনিয়মিত। সর্বশেষ সমাপ্ত হিসাব বছরে নতুন করে অনিয়মিত হয়েছে আরও ১১টি। অর্থাৎ সর্বশেষ হিসাব বছরে ২০টি ফান্ডের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র চারটি সামান্য পরিমাণ মুনাফা করতে সক্ষম হয়েছে। বাকি ১৬টি সর্বশেষ হিসাব বছরে লোকসান করেছে। যে ২০টি ফান্ডের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে, এর মধ্যে মাত্র দুটির ইউনিটহোল্ডারদের জন্য সামান্য পরিমাণ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে। বিপরীতে ১৮টির ইউনিটহোল্ডার লভ্যাংশ বঞ্চিত হয়েছেন।
দুর্বলতা ও প্রতিকার, বিশেষজ্ঞদের অভিমত
বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেট (বিআইসিএম)-এর নির্বাহী প্রেসিডেন্ট ওয়াজিদ হাসান শাহ মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের এই দুর্দশার প্রধানত দুটি কারণ উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো- ১. বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কম, ২. আস্থাহীনতা। তিনি বলেন, ‘মার্কেটে ফান্ডগুলোর ইউনিট দর প্রকৃত সম্পদমূল্যের (NAV) কাছাকাছি হওয়া উচিত ছিল। এটি NAV-এর সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ উপরে এবং সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ নিচে লেনদেন হওয়ার কথা। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা হচ্ছে না; বেশিরভাগ ইউনিটের দর এখন অর্ধেকের নিচে নেমেছে।’
ওয়াজিদ হাসান শাহের মতে, ‘সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানগুলো বিগত দিনে যেভাবে দুর্নীতি ও অর্থ পাচার করেছে, সেগুলো উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের এই ভয় দূর হবে না। বিনিয়োগকারীদের আস্থার জায়গাটি নিশ্চিত করা গেলে এবং NAV-এর প্রকৃত চিত্র প্রকাশ করা হলে বাংলাদেশেও মিউচুয়াল ফান্ড একটি সম্ভাবনাময় খাত হতে পারে।’
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ)-এর সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে আইনের ব্যর্থতার কারণে অনেক অনিয়ম হয়েছে। এখন বিএসইসি নতুন বিধিমালা করে তাতে জনমত আহ্বান করেছে। নতুন এই বিধিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানিগুলোর স্বচ্ছতা বাড়ানো সম্ভব হলে, আগামী দিনে মিউচুয়াল ফান্ড খাত একটা ভালো অবস্থানে ফিরবে বলে আশা করছি।’
বর্তমানে লেনদেন হওয়া ইউনিট দর বিবেচনায় ফান্ডগুলোর সম্পদের বিপরীতে বাজার মূলধনের পরিমাণ অর্ধেকের নিচে নেমেছে। এই ৩৭টি ফান্ডের মধ্যে মাত্র চারটির দর অভিহিত মূল্য ১০ টাকার উপরে লেনদেন হচ্ছে। বাকি ৩৩টির ইউনিট দর ৩ টাকা থেকে ৮ টাকা ৭০ পয়সার মধ্যে রয়েছে।
প্রস্তাবিত বিধিমালায় মেয়াদি ফান্ডের জন্য যা আছে
প্রস্তাবিত মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালায় বিদ্যমান মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডগুলোকে সংখ্যাগরিষ্ঠ ইউনিটহোল্ডারদের মতামতের ভিত্তিতে অবসায়ন কিংবা রূপান্তরের সুযোগ রাখা হয়েছে। খসড়া বিধিমালার বিষয়ে অংশীজনদের মতামত পাওয়ার পর এটি চূড়ান্ত করা হবে।
খসড়া বিধিমালায় বিদ্যমান মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড নামে একটি নতুন অধ্যায় সংযোজন করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিএসইসি প্রস্তাবিত মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালা ২০২৫ অনুযায়ী, সরকারি গেজেট প্রকাশের পর নতুন কোনো মেয়াদি স্কিম চালু করা যাবে না। ভবিষ্যতে শুধু বেমেয়াদি (Open-End) স্কিম অনুমোদনের সুযোগ পাবে। অর্থাৎ পুঁজিবাজারে ইউনিট লেনদেন হবে এমন কোনো মিউচুয়াল ফান্ড ভবিষ্যতে আর অনুমোদন দেওয়া হবে না।
তবে, বিদ্যমান মেয়াদি স্কিমের জন্য রাখা হয়েছে বিশেষ বিধান। গেজেট প্রকাশের ছয় মাসের মধ্যে যদি কোনো স্কিমের ইউনিটপ্রতি গড় লেনদেনমূল্য স্কিমটির ক্রয়মূল্য বা বাজারে ঘোষিত নিট সম্পদমূল্যের মধ্যে যেটি বেশি হয়, তার তুলনায় ২৫ শতাংশের বেশি কমে যায়, তাহলে ইউনিটহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষার্থে ফান্ডটির ট্রাস্টি বিশেষ সাধারণ সভা (EGM) আহ্বান করতে পারবে। ইজিএমে উপস্থিত ভোটদাতা ইউনিটহোল্ডারদের তিন-চতুর্থাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট এবং বিএসইসির অনুমোদন সাপেক্ষে স্কিমটিকে বেমেয়াদিতে রূপান্তর অথবা অবসায়ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। এক্ষেত্রে শর্ত হলো ছয় মাস শেষ হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে রেকর্ড ডেট ঘোষণা করতে হবে। রেকর্ড ডেটের ২১ দিনের মধ্যে ইজিএম করতে হবে।
এছাড়া, মিউচুয়াল ফান্ড বা এর স্কিমের অর্থ শুধু স্টক এক্সচেঞ্জের মূল বোর্ডে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করা যাবে। পাশাপাশি প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (IPO) বা পুনরায় গণপ্রস্তাব (RPO), রাইট শেয়ার ও সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করা যাবে। তবে, মূল বোর্ড থেকে তালিকাচ্যুত সিকিউরিটিজ, ATB বা SME প্লাটফর্মের সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করা যাবে না। তবে শর্ত রয়েছে, বিনিয়োগের পর মূল বোর্ড থেকে কোনো সিকিউরিটিজ তালিকাচ্যুত হলে বা ATB কিংবা SME বোর্ডে স্থানান্তরিত হলে তালিকাচ্যুতির ছয় মাসের মধ্যে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করতে হবে। ফান্ডের অর্থ ‘এ’ ক্যাটাগরির নিচের ক্রেডিট রেটিংসম্পন্ন কোনো বন্ড, ডেট সিকিউরিটিজ কিংবা ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করা যাবে না।
মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের ভবিষ্যৎ
পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের সদস্য আল-আমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে আইনের দুর্বলতার কারণে মিউচুয়াল ফান্ডের যেসব জায়গায় সমস্যা হয়েছে, সেগুলো রোধ করতে আমরা সুপারিশ দিয়েছে। আগে মিউচুয়াল ফান্ডগুলো অতালিকাভুক্ত কোম্পানি এবং তালিকাভুক্ত অনেক দুর্বল কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে পারত। আমরা নতুন বিধিমালায় তালিকাভুক্ত ‘এ’ ক্যাটাগরির শেয়ারে বিনিয়োগের সুপারিশ করেছি।’
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-এর তথ্য অনুযায়ী, ফান্ডগুলোর মধ্যে ২৭টির রিজার্ভ ঘাটতি রয়েছে। সম্মিলিতভাবে এই ঘাটতির পরিমাণ ৬৫৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। বিপরীতে ১০টি ফান্ডের রিজার্ভে সামান্য পরিমাণ সঞ্চিতি রয়েছে। সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে ওই ১০টি ফান্ডেও রিজার্ভ ঘাটতির শঙ্কা রয়েছে এবং ২৭টি ফান্ডের ঘাটতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের এই সহযোগী অধ্যাপক আরও বলেন, ‘বিগত দিনে সম্পদ ব্যবস্থাপক, কাস্টিডিয়ান, ট্রাস্টি ফান্ডগুলো থেকে যেভাবে অর্থ সরিয়ে নিতে পারত, সেই জায়গাগুলো বন্ধে আমরা সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছি। এছাড়া, ইউনিট দরের প্রকৃত সম্পদমূল্য (NAV) চর্চা যেন ফেরানো যায়, বিধিমালায় সেই বিষয়ে আমাদের সুপারিশগুলো আছে। ভবিষ্যতে বিনিয়োগকারীদের আস্থার মিউচুয়াল ফান্ড বাজার গঠনে যে জায়গাগুলোতে সংস্কার দরকার ছিল, আমরা সেটি করার চেষ্টা করেছি।’
এ বিষয়ে বিএসইসি পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমরা প্রস্তাবিত মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালায় মেয়াদি ফান্ডের জন্য এমন কিছু বিধান প্রস্তাব করেছি, যাতে ফান্ডগুলো এনএভির কাছাকাছি দরে ট্রেড (লেনদেন) হতে পারে। যদি তা সত্ত্বেও কোনো ফান্ড এটি করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে হয়তো বেমেয়াদি ফান্ডে রূপান্তর হবে, অন্যথায় অবসায়নে যাবে। এছাড়া আমরা ট্রাস্টি, কাস্টিডিয়ান ও সম্পদ ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব নির্দিষ্ট করে আলাদা করে দিয়েছি, যাতে কেউ এখন আর ফান্ডের অর্থ নিজেদের সম্পদ মনে করে যা-তা ভাবে ব্যবহার করতে না পারে।’
সংগৃহিত