“এককভাবে নির্বাচন করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে জয়ী হওয়া বেশ কঠিন,” বলেন চাকসুর সাবেক এক নেতা।
হতে সংগ্রহীত
আওয়ামী লীগের দেড় দশকের শাসনামলে অন্যসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ পায়নি ইসলামী ছাত্রশিবির ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
গণঅভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নতুন বাস্তবতায় হতে যাওয়া এবারের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-চাকসু নির্বাচনে মূল লড়াইটা এই দুই সংগঠনের মধ্যে হবে বলে আভাস মিলছে।
এবারের নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের লক্ষ্য ৪৪ বছর পর চাকসুর নেতৃত্বে প্রত্যাবর্তন।
আর সবশেষ নির্বাচনে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের প্যানেল থেকে এজিএস পদে জয়লাভ করা ছাত্রদল এবার এককভাবে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে জেতার লড়াইয়ে নেমেছে।
এ লড়াইয়ের মীমাংসা হবে বুধবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণের পর।
১৯৯০ সালে চাকসু নির্বাচনে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য জয়ী হলেও নানা ঘটনা প্রবাহে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল ছাত্রশিবির।
এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়ের পর ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের আধিপত্য বাড়তে থাকে। ২০১৪ সালে ক্যাম্পাসের পুরো নিয়ন্ত্রণ নেয় আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনটি।
২০১৫ সাল থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র শিবিরের কমিটির বিষয়টি কখনো প্রকাশ্যে আসেনি এবং তাদের প্রকাশ্য কোনো কার্যক্রমও ছিল না। তখন ‘শিবির সন্দেহে’ অনেক শিক্ষার্থী হামলার শিকারও হয়েছিলেন। ছাত্রলীগের দাপটে ছাত্রদলও প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ পায়নি এ সময়।
২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নিষিদ্ধ হয় তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। এরপর ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে আসে ছাত্রশিবির ও ছাত্রদল।
সপ্তম চাকসু নির্বাচনে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ নেই। ছাত্রশিবির আর ছাত্রদলের এবার ভোটে লড়ছে বিভিন্ন ইসলামপন্থি ছাত্র সংগঠন ও বাম ধারার ছাত্র সংগঠনগুলো। মোট ১৩টি প্যানেল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন নাসির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা গণতান্ত্রিক পরিবেশে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিশ্বাসী। আমরা অতীতে ডাকসু ও জাকসু নির্বাচন দেখেছি। ডাকসু নির্বাচন বিতর্কিত হয়েছে, জাকসুতে অনিয়মের প্রতিবাদে ভোট বর্জন করেছি।”
তিনি বলেন, তারপরও গণতান্ত্রিক চর্চার অংশ হিসেবে চাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল অংশ নিচ্ছে। বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ আছে, বিশেষ রাজনৈতিক দলকে সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ আছে। তারপরও প্রশাসন সৎ ও নিরপেক্ষ থাকবে বলে আশা করছেন ছাত্রদল নেতা নাসির।
চাকসু নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের মতামতের জয় প্রত্যাশা করে ছাত্রদলের এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, “কোনো বিভ্রান্ত লোক যাতে চাকসুতে না আসে। আমাদের প্যানেল জেতার ব্যাপারে আমি আশাবাদী।”
ছাত্রশিবির সরাসরি প্রার্থী না দিয়ে ‘সম্প্রীতির শিক্ষর্থী জোট’ প্যানেলে নির্বাচন করছে।
এ প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী ইব্রাহীম হোসেন রনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আশাবাদী। নির্বাচনি প্রচারে চমৎকার পরিবেশ ছিল। শিক্ষার্থীদের কাছে থেকেও ভালো সাড়া পেয়েছি।”
সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের পক্ষেই রায় দেবেন বলে আশাবাদী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইতিহাস বিভাগের এই শিক্ষার্থী।
চাকসু র্নিাচনি প্রচারের সময়ে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের জিএস পদপ্রার্থী সংগঠনটির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক ও ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী সাঈদ বিন হাবিব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “আমরা বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অতীতেও শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলাম, এখনো আছি। সব মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভালো সাড়া আছে।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক এক চাকসু নেতা মনে করেন, ১৯৯০ সালের মতো এবারও ছাত্রদল যদি কয়েকটি বাম ও ইসলামী দলের ছাত্র সংগঠনের সাথে জোট করে নির্বাচন করত, তাহলে প্রত্যাশিত ফলাফল পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এককভাবে নির্বাচন করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে জয়ী হওয়া বেশ কঠিন। অতীত ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে, আশির দশক থেকেই ক্যাম্পাসে তাদের আধিপত্য প্রবল। তাদের নিজস্ব ভোটও আছে। বিশেষ করে হলগুলোতে।”
১৯৮১ সালে পঞ্চম চাকসু নির্বাচনে ভিপি-জিএসসহ বেশিরভাগ পদে জয়ী হয়েছিলেন ছাত্রশিবিরের প্রার্থীরা।
সেবার শীর্ষ দুই পদে নির্বাচিত হন ছাত্রশিবির নেতা জসিম উদ্দিন সরকার ও আবদুল গাফফার।
১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ৯৯টি পদের মধ্যে ৮৮টিতে জয় পায় ১২ সংগঠনের জোট সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য।
সেবার ভোটার ছিলেন ১০ হাজার ৫২৬ জন। চাকসুতে ২৭ পদে সেবার প্রার্থীর ছিলেন ১৫৮ জন। তখনকার ছয়টি হল সংসদের ৭২টি পদে প্রার্থী ছিলেন ৪৩৬ জন।
সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের প্রার্থী জাতীয় ছাত্রলীগের নাজিম উদ্দিন ৪৮৩১ ভোট পেয়ে ভিপি নির্বাচিত হন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রশিবিরের প্রার্থী হামিদ হোসেন পান ২৭৭৪ ভোট।
জিএস পদে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তৎকালীন সভাপতি আজিম উদ্দিন আহমদ ৪৯৬৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রশিবিরের মানছুর আহমদ পেয়েছিলেন ২৬২৫ ভোট।
এজিএস পদে ছাত্রদল নেতা মাহবুবের রহমান শামীম ৪৯৯১ ভোট পেয়ে জয়ী হন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হামিদুর রহমান পেয়েছিলেন ২৬২০ ভোট।
এবারে নির্বাচনে মোট ভোটার ২৭ হাজার ৫১৬ জন। যার মধ্যে ছাত্রী ভোট ১১ হাজার ৩২৯।
চাকসু নির্বাচনে মোট ১৩টি প্যানেলে ৪১৫ জন এবং ১৪টি হল ও একটি হোস্টেলের নির্বাচনে মোট প্রার্থী ৪৯৩ জন।
