বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ব্যাংক হয়ত সোনা কেনা বাড়াচ্ছে, যাতে তারা মার্কিন ডলারের মজুদ কিছুটা কমিয়ে ঝুঁকি এড়ানোর জন্য নিজেদের রিজার্ভে বৈচিত্র্য আনতে পারে।
হতে সংগ্রহিত
ক্রিপ্টোকারেন্সি থেকে শুরু করে ট্রেজারি বন্ড, ২০২৫ সালে বিনিয়োগের জায়গার কোনো অভাব নেই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ইতিহাসের অন্যতম প্রাচীন বিনিয়োগ মাধ্যম সোনার দাম কেন রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে?
‘নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি’র অর্থনীতিবিদ বব ট্রায়েস্ট বলেছেন, “কিছু জিনিস কখনও পুরানো হয় না, সব সময়ই ক্লাসিক।
“সোনা হচ্ছে প্রচলিত ও ঐতিহ্যবাহী নিরাপদ বিনিয়োগের অন্যতম মাধ্যম। অর্থনীতির সঙ্গে এর মূল সম্পর্ক হল, যখন অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বাড়ে তখন সোনার দামও বেড়ে যায়।”
ট্রায়েস্ট বলেছেন, এ অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। আর এসব কারণই সম্ভবত সোনার দামের উত্থানকে প্রভাবিত করছে।
বিশ্ব বাণিজ্যে যে শুল্ক আরোপ হয় তা কত হবে বা তার প্রভাব কী হবে– বর্তমানে বিষয়টি স্পষ্ট নয়। পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনাও বেড়েছে। সব মিলিয়ে বিভিন্ন দেশের মুদ্রার দাম ওঠানামা করছে, যা অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা তৈরি করছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
ট্রায়েস্ট বলেছেন, “এসব কারণে সরকারের মুদ্রা ও স্বল্পমেয়াদি সরকারি বন্ডের চেয়ে অনেকেই নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে সোনায় বিনিয়োগ করছেন।”
ট্রায়েস্ট আরও বলেছেন, বাণিজ্যনীতির অনিশ্চয়তা ও ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতি নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি করছে।
“শুল্কের অনিশ্চিত প্রভাব ও যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের ওপর সুদের হার কমানোর জন্য রাজনৈতিক চাপের ফলে উদ্ভূত মার্কিন মুদ্রাস্ফীতির অনিশ্চয়তাও সম্ভবত এতে ভূমিকা রাখছে।”
তবে ট্রায়েস্ট স্বীকার করেছেন যে, ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই বাড়তে শুরু করেছিল সোনার দাম।
“ফলে ডনাল্ড ট্রাম্পের কর নীতির কারণে সাম্প্রতিক অনিশ্চয়তার বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি সোনার দামের ওপর কতটা প্রভাব ফেলেছে তা বলা কঠিন।”
তবে যে কারণেই হোক, বেসরকারি বিনিয়োগকারী ও বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজেদের অর্থ রাখার নিরাপদ জায়গা খুঁজছে– এ বিষয়টি সত্যি। আর সেই জায়গা হিসেবে সোনাকেই দেখছে তারা।
ট্রায়েস্ট বলেছেন, যখন অন্য ‘নিরাপদ বিনিয়োগ’, যেমন– মুদ্রার ওপর নির্ভরশীল বিভিন্ন স্বল্পমেয়াদি ট্রেজারি বন্ড মুদ্রাস্ফীতির ওঠানামার কারণে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে তখন সোনাকে নিরাপদ জায়গা হিসেবে ব্যবহার করেন কিছু বিনিয়োগকারী। এ ছাড়া, যখন অন্যান্য বিকল্প সম্পদকে ‘বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ বা অতিরিক্ত মূল্যায়িত’ ধরে নেওয়া হয় তখনও অর্থ সঞ্চয়ের জন্য সোনায় আশ্রয় খোঁজেন তারা।
ট্রায়েস্ট বলেছেন, অন্যদিকে, বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ব্যাংক হয়ত সোনা কেনা বাড়াচ্ছে, যাতে তারা ঝুঁকি এড়ানোর জন্য মার্কিন ডলারের মজুদ কিছুটা কমিয়ে নিজেদের রিজার্ভে বৈচিত্র্য আনতে পারে।
সোনার দামে এরইমধ্যে ভবিষ্যতের বন্ডে পরিবর্তন, ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার কমানোর প্রত্যাশিত ঘটনা, এমনকি নীতির পরিবর্তনের সম্ভাবনাও বিবেচনায় নেওয়া হয়ে থাকে।
তবে ট্রায়েস্ট বলেছেন, প্রত্যাশার চেয়ে কোনো ভিন্নতা হলে সোনার দামে প্রভাব পড়বে। যেমন– ফেডারেল রিজার্ভ যদি বর্তমান প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সুদের হার কমায় এবং এর ফলে বন্ড কমে যায় তবে সোনার দাম আরও বাড়ার সম্ভাবনা থাকবে। তেমনই যদি ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে অনিশ্চয়তা বেড়ে যায় তা-ও সোনার দামের উর্ধ্বগতি ঘটাতে পারে।
“পরিবারের সম্পদ বা উত্তরাধিকার হিসেবে পাওয়া বিভিন্ন জিনিসও নিরাপদ বিনিয়োগ হতে পারে। আপনি যদি সেগুলো পছন্দ না করেন তবে তা বিক্রির জন্য এখনই ভালো সময়!”
