এআই সিস্টেমকে প্রশিক্ষণ দিতে হাজার হাজার বই চুরি ও ইন্টারনেট থেকে বেআইনিভাবে নেওয়া অন্যান্য কপিরাইট লঙ্ঘনকারী উপাদান ব্যবহার করেছে অ্যাপল।
হতে সংগৃহিত
সেই স্টিভ জবসের সময় থেকেই বড় গলায় যে একটি বিষয় অ্যাপল বরাবরই বলে এসেছে, সেটি হচ্ছে অ্যাপল নীতি মেনে চলা একটি কোম্পানি, যারা প্রাইভেসির বিষয়ে কোনো আপস করে না। সেই অ্যাপলের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হচ্ছে অনুমতি ছাড়া লেখকদের বই ব্যবহারের।
কপিরাইটওয়ালা বই ব্যবহার করে অ্যাপলের নিজস্ব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই মডেল প্রশিক্ষণের অভিযোগে আইফোন নির্মাতা কোম্পানিটির বিরুদ্ধে এবার মামলা করেছেন দুই স্নায়ুবিজ্ঞানী।
রয়টার্স লিখেছে, ক্যালিফোর্নিয়ার এক ফেডারেল আদালতে অ্যাপলের বিরুদ্ধে মামলায় তাদের অভিযোগ, নিজেদের ‘অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স’ নামের এআই মডেলটি তৈরির সময় হাজার হাজার কপিরাইটওয়ালা বই অনুমতি ছাড়াই ব্যবহার করেছে অ্যাপল।
বৃহস্পতিবার দায়ের করা ক্লাস অ্যাকশন মামলায় আদালতকে নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনে অবস্থিত ‘সানি ডাউনস্টেট হেলথ সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটি’র অধ্যাপক সুসানা মার্টিনেজ-কন্ডে ও স্টিফেন ম্যাকনিক বলেছেন, নিজেদের এআই মডেলকে প্রশিক্ষণের জন্য অবৈধভাকে ‘শ্যাডো লাইব্রেরি’ থেকে চুরি করা বই ব্যবহার করেছে কোম্পানিটি।
এর আগে, গত মাসে আরও একদল লেখক অভিযোগ করেছেন, তাদের লেখা অনুমতি ছাড়াই এআই মডেল প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহার করেছে অ্যাপল। এ অভিযোগে তারাও অ্যাপলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।
শুক্রবার দায়ের করা নতুন মামলাটি নিয়ে রয়টার্সের মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি অ্যাপল, লেখক বা তাদের আইনজীবীরা।
অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইভিত্তিক ফিচারের বিশেষ একটি স্যুট, যা আইফোন ও আইপ্যাডের মতো ডিভাইসের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দেয়।
মামলায় বলা হয়েছে, “অ্যাপল যখন অফিসিয়ালি ‘অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স’ পরিচয় করিয়ে দিল, এরপরের দিনই কোম্পানির মূল্য ২০ হাজার কোটি ডলার বেড়ে যায়, যা ছিল কোম্পানিটির ইতিহাসে এককভাবে সবচেয়ে লাভজনক দিন।”
মামলায় অভিযোগ, নিজেদের এআই সিস্টেম প্রশিক্ষণের জন্য হাজার হাজার বই চুরি এবং ইন্টারনেট থেকে বেআইনিভাবে সংগ্রহ করা অন্যান্য কপিরাইট সুরক্ষিত উপাদান ব্যবহার করেছে অ্যাপল।
চুরি করা বইগুলোর মধ্যে রয়েছে মার্টিনেজ-কন্ডে ও ম্যাকনিকের লেখা ‘চ্যাম্পিয়ন্স অফ ইলিউশন: দ্য সায়েন্স বিহাইন্ড মাইন্ড-বগলিং ইমেজেস অ্যান্ড মিস্টিফাইং ব্রেন পাজলস’ এবং ‘স্লাইটস অফ মাইন্ড: হোয়াট দ্য নিউরোসায়েন্স অফ ম্যাজিক রিভিলস অ্যাবাউট আওয়ার এভরিডে ডিসেপশনস’।
মামলায় অ্যাপলের বিরুদ্ধে অনির্দিষ্ট পরিমাণ আর্থিক ক্ষতিপূরণ দাবির পাশাপাশি কোম্পানিটিকে তাদের কপিরাইটওয়ালা কাজের অপব্যবহার বন্ধের নির্দেশ দেওয়ার রায় চেয়েছেন স্নায়ুবিজ্ঞানী দুইজন।
মামলার মুখে বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানি
রয়টার্স লিখেছে, এ মামলাটি এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলার মধ্যে একটি, যেখানে অনুমতি ছাড়াই এআই প্রশিক্ষণের জন্য তাদের কাজ ব্যবহারের অভিযোগে বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করেছে লেখক, সংবাদমাধ্যম ও সংগীত কোম্পানির মতো কপিরাইট মালিকরা।
অভিযোগের মুখে থাকা কোম্পানির মধ্যে রয়েছে চ্যাটজিপিটির নির্মাতা ওপেনএআই, মার্কিন সফটওয়্যার জায়ান্ট মাইক্রোসফট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জায়ান্ট মেটা।
এ ছাড়া, গত অগাস্টে নিজেদের ‘ক্লড’ নামের চ্যাটবটকে প্রশিক্ষণ দিতে একদল লেখকের করা মামলা নিষ্পত্তিতে দেড়শ কোটি ডলার পরিশোধ করতে রাজি হয়েছে এআই স্টার্টআপ অ্যানথ্রপিক।