“দেয়াললিখন, দেয়ালচিত্র—সবই তরুণদের প্রতিরোধ ও স্বপ্নের জীবন্ত জাদুঘর,”বলেন তিনি।
হতে সংগৃহিত
সমাজের অর্থবহ পরিবর্তন আনার শক্তি তরুণদের মধ্যেই রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সুইডেন ও নরওয়ের তরুণ রাজনৈতিক কর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
শান্তিতে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “বিশ্ব দ্রুত বদলে যাচ্ছে। আজকের তরুণরা আগের প্রজন্মের মতো নয়। প্রযুক্তির কারণে তোমরা এক নতুন প্রজাতির মানুষ—প্রায় ‘সুপারহিউম্যান’।
“শুধু নিজেকে প্রশ্ন করো, আমি কেমন একটি বিশ্ব গড়তে চাই? এরপর সেই লক্ষ্যে অঙ্গীকারবদ্ধ হও, কারণ তোমাদের হাতেই তা বাস্তবায়নের উপায় রয়েছে।”
তরুণরা যাতে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ও সাহসী হয়ে নিজেদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়, সেই আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “অনেকে বলে তরুণরা ভবিষ্যৎ, আমি বলি—তরুণরাই বর্তমান।”
বাসস লিখেছে, সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টা তরুণ রাজনীতিকদের দৃষ্টিভঙ্গি, অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন। প্রতিনিধিরা জুলাই অভ্যুত্থান, তরুণদের অংশগ্রহণ, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মুহামদ ইউনূসের মতামত জানতে চান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “জুলাই ছিল এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত—বিশেষ করে অসংখ্য তরুণ-তরুণী তখন এক ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল। তোমরা এমন এক সময় এসেছ, যখন বাংলাদেশ ব্যাপক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
“আশা করি, তোমরা এখানকার তরুণদের সঙ্গে দেখা করবে এবং তাদের আকাঙ্ক্ষা জানবে।”
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “জুলাই বিপ্লবীরা প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের দাবি তুলেছিল—বিশেষত সংবিধান সংশোধনের, যা তারা ফ্যাসিবাদের মূল কারণ হিসেবে দেখেছিল। আমরা ইতোমধ্যে কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠন করেছি। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য গড়ে তুলতে আমরা গঠন করেছি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
“ত্রিশটিরও বেশি দল মাসের পর মাস আলোচনায় অংশ নিয়েছে। অবশেষে সব দলের মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে। আমরা এ মাসেই জুলাই সনদ স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নিচ্ছি। এটি হবে আমাদের জাতির ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। আমি জানি না, অন্য কোনো দেশে এমন প্রক্রিয়া ঘটেছে কি না।”
সুইডেন ও নরওয়ের তরুণ নেতাদের বাংলাদেশ ঘুরে দেখার আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “এখানকার প্রতিটি রাস্তা একেকটি গল্প বলে। দেয়াললিখন, দেয়ালচিত্র—সবই তরুণদের প্রতিরোধ ও স্বপ্নের জীবন্ত জাদুঘর।”
বিশ্বকে বদলে দিতে দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও শূন্য কার্বন নিঃসরণ মুক্ত বা ‘থ্রি জিরো’ বিশ্ব গড়ে তুলতে তরুণদের প্রতি আহ্বান জানান মুহাম্মদ ইউনূস।
সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস এবং নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হাকোন আরল্ড গুলব্র্যান্ডসেন প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দেন। এ দলে সুইডেনের যেসব তরুণ রাজনীতিক ছিলেন, তাদের মধ্যে আছেন—অ্যালিস ল্যান্ডারহোম (মডারেট ইয়ুথ পার্টি), আরিয়ান ত্বানা (সোশাল ডেমোক্রেটিক ইয়ুথ পার্টি), অ্যান্টন হোল্মলুন্ড (লিবারেল ইয়ুথ পার্টি), ডেক্সটার ক্রোকস্টেড (সুইডেন ডেমোক্র্যাটস ইয়ুথ), হান্না লিন্ডকভিস্ট (গ্রিন ইয়ুথ পার্টি) এবং ম্যাক্স পেলিন (ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ইয়ুথ পার্টি)।
নরওয়ের তরুণ নেতাদের মধ্যে ছিলেন—ওদা রোহমে সিভের্তসেন (ইয়ং কনজারভেটিভস), লার্স মিকায়েল বারস্টাড লাভল্ড (প্রগ্রেস পার্টি ইয়ুথ) ও সাইভার ক্লেভে কোলস্টাড (রেড ইয়ুথ)।
প্রতিনিধিদের সঙ্গে ছিলেন জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার, নর্ডিক অফিসের উপপরিচালক ক্যারোলিন আবরগ, কৌশলগত যোগাযোগ ও বহিঃসম্পর্ক বিশেষজ্ঞ কীর্তিজয় পাহাড়ি এবং যোগাযোগ বিশ্লেষক এমিলি আন্দ্রেসেন।
