ঘটনার পর প্রেস ক্লাবের সামনের সড়ক সচল হয়েছে।
হতে সংগৃহিত
বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নেওয়া এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের লক্ষ্য করে সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ।
রোববার দুপুর ২টার দিকে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দিয়ে পরপর কয়েকটি সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়া হয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একজন জানিয়েছেন, আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হওয়ার মধ্যে প্রেস ক্লাবের সামনে জলকামানও আনা হয়। তবে তা ব্যবহার করা হয়নি। ঘটনার পর সকাল থেকে আটকে থাকা সড়কটি সচল হয়েছে।
ঘটনাস্থলে থেকে বিশেষ প্রতিনিধি সুমন মাহমুদ জানিয়েছেন, দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে পুলিশের তরফে আন্দোলনকারীদের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চলে যেতে বলা হয়। তখন আন্দোলনকারীদের একটি অংশ তা মানতে রাজি হয়নি। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায় পুলিশ ধাওয়া দিয়ে সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদুনে গ্যাস ছোড়ে। এরপর সেগুনবাগিচা সড়ক, তোপখানা সড়ক, সার্ক ফোয়ারাতে পুলিশ অবস্থান নেয়।
পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. মাসুদ আলম বলেন, “আন্দোলনকারীদের মূল অংশ শহীদ মিনারে চলে গেলেও একটি অংশ সড়ক বন্ধ করে অবস্থান করছিল। তাদেরকে বার বার সড়ক ছেড়ে দিতে অনুরোধ করলেও তারা সড়ক ছাড়ছিল না। এ কারণে আমরা তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছি।”
কাউকে আটক করা হয়েছে কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “কয়েকজন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছিল, এমন ৩-৪ জনকে আমরা আটক করেছি। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদেরকে আমরা ছেড়ে দেব।”
এর আগে দুপুর সোয়া ১টার দিকে পুলিশের অনুরোধে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ শহীদ মিনারে চলে যায়।
আন্দোলনকারীদের নেতা এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব দেলাওয়ার হোসেন আজিজী দুপুর দেড়টার দিকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে আমরা প্রেস ক্লাবের সামনের সড়ক ছেড়ে দিয়েছি। আমরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি চালাব। সব শিক্ষক-কর্মচারীকে শহীদ মিনারে এসে অবস্থান নেওয়ার অনুরোধ করছি।
“মঙ্গলবার থেকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারীদের কর্মবিরতিও চলবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছেড়ে ক্লাসে ফিরে যাব না।”
নওগাঁ থেকে আসা শিক্ষক অহিদুল ইসলাম দুপুর দেড়টায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা প্রেস ক্লাব থেকে এসে শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছি।”
শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া মূল বেতনের ২০ শতাংশ করা, শিক্ষক-কর্মচারীদের চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫০০ টাকা করা এবং কর্মচারীদের উৎসব ভাতা মূল বেতনের ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ শতাংশ করার দাবিতে রোববার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘লাগাতার অবস্থান’ কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।
দাবি আদায়ে আগামী মঙ্গলবার থেকে এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লাগাতার কর্মবিরতি পালনের ঘোষণাও দিয়েছেন তারা।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ৫০০ টাকা বাড়িয়েছে সরকার; তবে গত ৫ অক্টোবর এই ঘোষণা প্রকাশ্যে এলে শিক্ষকরা তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন।
এরপর গত ৬ অক্টোবর এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ভাতা অন্তত দুই হাজার বা তিন হাজার টাকা করার প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
আন্দোলনকারীদের একটি অংশ আগেই শহীদ মিনারে চলে যায়।
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন পান। তারা মূল বেতনের সঙ্গে মাসে ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। আর ১ হাজার টাকা বাড়িভাড়া ভাতা পেতেন, যা বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়েছে।
এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা আগে বছরে ২৫ শতাংশ হারে বছরে দুইটি উৎসব ভাতা পেলেও গত মে মাসে বাড়ানোর পর তারা ও এমপিওভুক্ত কর্মচারীরা মূল বেতনের ৫০ শাতাংশ হারে উৎসব ভাতা পাচ্ছেন।
