তিনি বলেছেন, দাম কমানোর ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও মুনাফা বাড়িয়ে অর্থ পাচারের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা প্রয়োজন।
হতে সংগৃহিত
ভোক্তা পর্যায়ে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস— এলপিজির ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম ১ হাজারের কম হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
তিনি বলেছেন, দাম কমানোর ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও মুনাফা বাড়িয়ে অর্থ পাচারের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা প্রয়োজন।
মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, “এলপিজি লার্জলি প্রাইভেট সেক্টরের কাছে কিন্তু আমরা এই খাতে প্রাইভেট সেক্টরের যে এফিশিয়েন্সি সেটা পাচ্ছি না। কারণ হচ্ছে দুইটা জিনিস। একটা জিনিস হচ্ছে যে এইযে এলপিজির এখন দাম মনে হয় ১ হাজার ২০০ টাকা করে সিলিন্ডার। এটা ১ হাজার টাকার কমে আসা, নিচে আসা উচিত।
“এবং আরো যেটা সমস্যা যেটা মরার উপরে খাঁড়ার ঘা। গ্রাহকের জন্য সেটা হচ্ছে যে ১ হাজার ২০০ টাকার এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রি হয় ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। এইটা এইটাকে ইয়ে (কমিয়ে আনতে হবে) করতে হবে।
শনিবার রাজধানীর একটা হোটেলে বাংলাদেশের এলপিজি বিষয়ক নীতি নিয়ে এক আয়োজনে কথা বলছিলেন উপদেষ্টা। দৈনিক বণিক বার্তা এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।”
এলপিজির ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম ২৯ টাকা কমিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।
অক্টোবর এই সিলিন্ডারে দাম গুনতে হবে ১ হাজার ২৪১ টাকা। সে হিসাবে প্রতি কেজির দাম পড়ছে ১০৫ টাকা ৮৭ পয়সা। সেপ্টেম্বর মাসে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ছিল ১ হাজার ২৭০ টাকা।
উপদেষ্টা দাম কমানোর ক্ষেত্রে বলেন, “আমরা যারা আছি এসবে দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ এই যে একটা দায়িত্বহীন ব্যবসা এবং কোন দায় দায়িত্ব থাকবে না এটা তো এটাতে চলতে পারে না। তো এইজন্য এই যে একদিকে যেটা বললাম যেটা এর দাম ১ হাজার টাকার নিচে হওয়া উচিত।
“সেজন্য এইযে লজিস্টিক্সের দিকগুলো দেখতে হবে। এটা কীভাবে আরো কমানো যায় যাতে আমরা এখানে প্রাইভেট সেক্টর এফিশিয়েন্সিটাকে ফুললি রিয়েলাইজ করতে পারি, সেটাও আমরা (সরকার) দেখব।”
দাম কমালে শিল্পে ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে এলপিজি ব্যবহার ‘বাড়ানো যাবে’ বলেও তুলে ধরেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, “আপনারা বলছেন যে শিল্প কারখানায় এলপিজি ব্যবহার বাড়াতে আর এটা আরেকটা বড় চ্যালেঞ্জ। যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যদি এলপিজি ব্যবহার করা যেত যদি শিল্প কারখানায় এই যে আকিজ গ্রুপ বলছে যে তারা এটা ব্যবহার করছে কিন্তু তারা এটা বেশি ব্যবহার করতে পারছে না, দামের জন্য। এইজন্য এলপিজির দামটা কমানোটাই হচ্ছে চ্যালেঞ্জ এবং এই জন্য কিন্তু সবাইকে কাজ করতে হবে।
“এবং ব্যবসায়ীদেরকে এখানে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। এই যে আপনাদের প্রফিট এবং বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলার যে ইয়ে (ইচ্ছে) এবং এই যে টাকা পাচারের যে সংস্কৃতি সেটা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।”
ফাওজুল কবির খান বলেন, “কারণ আপনার যদি দেশই যদি না থাকে আপনারা কোথায় থাকবেন? আপনাদের যারা এইসব পাচার করেছে তারা আজকে কোথায়? আমি আশা করব যে এটা চিন্তা করবেন।
“এখানে দুইটা জিনিস করতে হবে। একটা হচ্ছে এলপিজির দামকে কমায় আনতে হবে। রান্নার গ্যাসের জন্য এবং যেটা বললাম যে অটো গ্যাস এবং হচ্ছে যে শিল্পের ব্যবহারের জন্য।”
গবেষকদেরও এ শিল্প বাড়াতে কী করা উচিত এবং সরকারের কী কৌশল নেওয়া উচিত তা নিয়েও পরামর্শ চান উপদেষ্টা।
নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, রেটিকুলেটেড পদ্ধতির এলপিজির দাম প্রতি কেজি ৯৯ টাকা ৬৫ পয়সা, যা আগের মাসে ছিল ১০২ টাকা ১২ পয়সা।
এলপিজির মূল উপাদান প্রোপেন ও বিউটেন বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি আরামকোর কার্গো মূল্যকে (সিপি) ভিত্তিমূল্য ধরে বিইআরসি দেশের বাজারে এলপিজির দাম সমন্বয় করে।
এবার প্রোপেন ও বিউটেনের গড় সিপি ৪৮২ ডলার বিবেচনায় নিয়ে নতুন দর ঠিক করেছে করেছে বিইআরসি।
বিগত সরকারের আমলে গ্যাসের অভাব থাকা সত্ত্বেও ‘দুর্নীতির মাধ্যমে’ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের লাইসেন্স দিয়েছে বলে তুলে ধরেন।
এছাড়াও শিল্পে ও বাসাবাড়িতে ‘অবৈধভাবে’ গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন উপদেষ্টা।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, “এগুলো সমস্ত এই কাজগুলো এই অপকর্মগুলো করেছেন আমাদের রাজনীতিবিদরা। তো যাই হোক এখন এই সংকট, এই যে ঘাটতির মধ্যে আমরা আছি, আমি আর তথ্যের মধ্যে না যাই, আমরা কিন্তু সর্বাত্মক চেষ্টা করতেছি।
“এই যে ঘাটতি মেটানোর জন্য আমরা কয়েকটা চেষ্টা করছি। একটা হচ্ছে যে আমরা স্থলভাগে এক্সপ্লোরেশন এটা বাড়িয়েছি। এখন পর্যন্ত আমাদের অগ্রগতি সন্তোষজনক। যেখানে প্রত্যেক বছর প্রায় ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট কমছে, স্থানীয় গ্যাস উৎপাদন কমছে, সেখানে আমরা মাত্র ৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস গ্যাস পেয়েছি। তো আমরা কিন্তু আশাবাদী।”
এছাড়াও ঘাটতি কমাতে উচ্চমূল্যের এলএনজি আমদানিও সরকার বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “এখন এই ঘাটতি মেটানোর জন্য আমরা আমদানি করতেছি। এলএনজি আমদানি করতেছি আপনারা জানেন। এবং এটার জন্য সমালোচনা রয়েছে এবং এলএনজি উচ্চমূল্যের। কিন্তু এটা বাধ্য হয়ে আমদানি করতে হচ্ছে।
“কারণ না হলে তো শিল্প কারখানা রপ্তানি সবই ধস নামবে। এবং আমরা গত বছর ৮৪টা কার্গো ইম্পোর্ট করেছিলাম। এই বছর ১০৮ড়া কারগো ইম্পোর্ট করেছি।”
এক্ষেত্রেও সমাধান হতে পারে এলপিজি বলে তার উপদেষ্টার।
শুধুমাত্র গ্যাস সংকটের কারণে ২০২১-২২ সালের দিকে সিরামিক উৎপাদনে ‘প্রায় ৩০০ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেন আকিজ বশির গ্রুপের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) মোহাম্মদ খোরশেদ আলম।
তিনি বলেন, সিরামিক উৎপাদনে গ্যাস হচ্ছে অক্সিজেন। উৎপাদনের সময় গ্যাসের চাপে সামান্যতম উঠানামাও যদি হয়, তাহলে আমাদের বিশাল ক্ষতি হয়ে যায়।
“২০২১-২২ সালের দিকে আকিজ সিরামিক থেকে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা লোকসান করেছি শুধুমাত্র গ্যাস সরবরাহে সংকটের কারণে।”
