“উনি মন জোড়ানো একটা হাসি দিতেন; কারো আত্মা খুব পরিষ্কার না হলে, কারো হৃদয় খুব বিশুদ্ধ না হলে এভাবে হাসা যায় না,” বলেন আসিফ নজরুল।
হতে সংগৃহিত
এমিরেটাস অধ্যাপক ও সাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামকে শেষ বিদায় জানানো হলো ফুলেল শ্রদ্ধা-ভালোবাসা আর স্মৃতিচারণের মধ্য দিয়ে।
সোমবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত তার মরদেহ রাখা হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে। বৃষ্টির মধ্যেই সরকারের উপদেষ্টা থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ প্রয়াতের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
শ্রদ্ধা জানাতে এসে এমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “মনজুর আমার ছাত্র ছিলেন ও পরে সহকর্মী হয়েছেন। ছাত্রজীবনেই অধ্যাপনা শুরু করেন। সেই সময় তিনি খুবই বিচক্ষণ ছিলেন।”
তিনি বলেন, “শিক্ষক হিসেবে তার শিক্ষার্থীরা তাকে ভালোবাসে…সাহিত্যের সাথে যে সংযোগ তাও অনবদ্য। এর জন্য তিনি একুশে পদকসহ বেশ কয়েকটি পুরস্কার পেয়েছেন। এগুলো সবই তার প্রাপ্য ছিল।”
শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানও।
তিনি বলেন, “মনজুর ভাইয়ের মতন একজন ব্যক্তি, একজন শিক্ষক, একজন লেখক ও একজন বিশ্লেষক আমাদের মধ্যে থেকে চলে গেছেন। উনার সাথে আমার সম্পর্কটা কিছুটা পেশাকেন্দ্রিক হলেও বেশিটাই ব্যক্তিগত।
“উনি এবং আমি উভয়ই সিলেটের মানুষ। মনজুর ভাই এমন একজন মানুষ, যাকে সবাই সম্মান করে। তার জ্ঞানকে, তার প্রজ্ঞাকে আমরা সবাই সম্মান করি।”
তিনি বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের মধ্যে একজনকে আজকে হারালো। ছাত্রসমাজও তাদের শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের মধ্য থেকে একজনকে আজকে হারালো। যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতিক্রিয়া দেখেন সকলেই আসলে আশা করেছিলেন যে একটা মিরাকল কিছু ঘটবে এবং উনি আবার ফেরত আসবেন।
“কিন্তু চলে যাবার দিনটা নির্ধারিত থাকেই। আর একবার ফেরত আসলেও চলে যেতেই হয়। সম্মানজনকভাবে উনাকে আমরা বিদায় দিতে পারছি।”
শ্রদ্ধা জানাতে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা থেকে সরকারের আইন উপদেষ্টার দায়িত্বে যাওয়া আসিফ নজরুল।
স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, “আমি ফুলার রোডে স্যারের পাশের বাসায় থাকতাম। উনি দেখলেই এমন একটা মন জোড়ানো একটা হাসি দিতেন। আমার কাছে মনে হয়েছে, কারো আত্মা খুব পরিষ্কার না হলে, কারো হৃদয় খুব বিশুদ্ধ না হলে এভাবে হাসা যায় না।
“উনার হাসিটাই ছিল উনার একটা সিগনেচারের মত। স্যার অসম্ভব জ্ঞানী মানুষ ছিলেন, উনি প্রচণ্ড জনপ্রিয় একজন শিক্ষক ছিলেন।”
সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের একটি নিজস্ব রাজনৈতিক বিশ্বাস ছিল উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, “স্যারের সাথে আমার রাজনৈতিক বিশ্বাস নিয়ে পার্থক্য ছিল। মাঝে মাঝে কোনো বিষয় নিয়ে আমরা দ্বিমত পোষণ করতাম। অল্প কথা হত, কিন্তু উনি প্রচণ্ড নির্লোভ ছিলেন।
“উনার যেটাই বিশ্বাস থাকুক, যার প্রতিই ভালোবাসা থাকুক—কোনো লোভ থেকে করতেন না। নিজের বিশ্বাস থেকে করতেন। এজন্য উনাকে সবাই ভালোবাসতো। সব মানুষ ভালোবাসতো।”
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস, আর্কাইভ ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগ, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ, লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন, ব্র্যাক পরিবার, এশিয়াটিক সোসাইটি, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, বাংলাদেশ জাসদ, বাসদ, ছায়ানট, জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম ইনস্টিটিউট, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তার মরদেহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আনা হয়। সেখানে শ্রদ্ধা জানান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক মনজুরুল ইসলাম শুক্রবার বিকালে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বেলা ১টায় তার কফিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে আনা হয়। সেখানে তার জানাজা শেষে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
