বিশ্লেষকদের ধারণা, সুইফটের এই বিক্রির সাফল্যের পেছনে তার প্রি-অর্ডার কৌশল ও ভক্তদের জন্য বিশেষ সংস্করণ প্রকাশের নীতি কাজে দিয়েছে।
হতে সংগৃহিত
পূর্বাভাস সত্যি হয়েছে। মুক্তির পর যুক্তরাষ্ট্রের পপ গায়িকার দ্বাদশ অ্যালবাম ‘দ্য লাইফ অব আ শোগার্ল’ গড়ছে একের পর এক রেকর্ড।
ফোবর্স বলছে, গত ৩ অক্টোবর মুক্তির পর প্রথম তিনদিনে ‘দ্য লাইফ অব আ শোগার্লের’ ৩ লাখ ৪০ হাজার কপি বিক্রি হয়েছে। যা সুইফটের আগের দুই অ্যালবাম ‘দ্য টর্চারড পোয়েটস ডিপার্টমেন্ট’ ও ‘মিডনাইটসের’ প্রথম সপ্তাহের বিক্রিকে ছাড়িয়ে গেছে।
বিলবোর্ড জানিয়েছে, মুক্তির প্রথম পাঁচ দিনেই অ্যালবামটি বিক্রি ও স্ট্রিমিং মিলিয়ে ৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন ইউনিটের বেশি বিক্রি হয়েছে। এর মাধ্যমে সুইফট ভেঙেছেন অ্যাডেলের বহুদিনের রেকর্ড।
২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্রথম সপ্তাহে অ্যাডেলের অ্যালবাম ২৫ বিক্রি হয়েছিল ৩ দশমিক ৪৮২ মিলিয়ন ইউনিট, যা প্রায় এক দশক ধরে কেউ টপকাতে পারেনি।
বিশ্লেষকদের ধারণা, সুইফটের এই বিক্রির সাফল্যের পেছনে তার প্রি-অর্ডার কৌশল ও ভক্তদের জন্য বিশেষ সংস্করণ প্রকাশের নীতি কাজে দিয়েছে। তাদের ধারণা ‘দ্য লাইফ অব আ শোগার্ল’ অ্যালবামের বিক্রি চার মিলিয়ন ইউনিটেও পৌঁছাতে পারে।
তবে কেবল অ্যালবাম বিক্রি নয়, স্ট্রিমিংয়েও ‘দ্য লাইফ অব আ শোগার্ল’ রেকর্ড হয়েছে।
স্পটিফাই, অ্যাপল মিউজিক ও অ্যমাজন মিউজিক প্ল্যাটফর্মে চলতি বছরের সর্বোচ্চ স্ট্রিমিংয়ের রেকর্ড এখন সুইফটের দখলে বলে লিখেছে ভ্যারাইটি। তবে স্ট্রিমিংয়ের পরিসংখ্যান কোনো প্ল্যাটফর্মই প্রকাশ করেনি।
সুইফট গেল অগাস্টের মাঝামাঝিতে ঘোষণা দিয়েছিলেন ‘দ্য লাইফ অব আ শোগার্ল’ নামের তেমন একটি স্টুডিও অ্যালবাম আসছে। এরপর গেল বছরই সেটা রেকর্ড করা হয়।
এই অ্যালবামটি গায়িকার বিশেষ একটি কাজ, কারণ সুইফট এই কাজটি করেছেন সুইডিশ হিটমেকার ম্যাক্স মার্টিন আর শেলব্যাকের সঙ্গে। এই দুজন সুইফটের ‘শেক ইট অফ’ আর ‘২২’ এর মত হিট গান প্রযোজনা করেছেন।
‘লাইফ অব আ শোগার্ল’ অ্যালবামের সবগুলো গানের গীতিকার ও প্রযোজক হিসেবে টেইলর, ম্যাক্স মার্টিন ও শেলব্যাকের নাম দেওয়া হয়েছে।
অ্যালবামের প্রথম গানের নাম ‘দ্য ফেইট অব ওফেলিয়া’। এই গানে কালজয়ী সাহিত্যিক উইলিয়াম শেকসপিয়ারের প্রতি ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
অ্যালবামের কালার থিমও ছিল আলোচনায়। সুইফট নাম দিয়েছেন ‘পোর্তোফিনো অরেঞ্জ’।
অ্যালবাম মুক্তির আগে সোশাল মিডিয়ায় সুইফট বলেন, “আমি বুঝতে পারছি আবার সেই ইরাস ট্যুরের পোশাক বা কমলা কার্ডিগান বের করে আনার সময় হয়েছে। না, নাচ বাধ্যতামূলক নয়, তবে উৎসাহিত করছি সবাইকে।”
এদিকে গান নিয়ে সুইফটের বিশ্ব সফর ‘দ্য ইরাস ট্যুর’ এনে দেয় অনন্য জনপ্রিয়তা। ২০ মাস ধরে ৫ মহাদেশের ৫৩টি শহরে ১৪৯টি শো করে ‘দ্য ইরাস ট্যুর’ হয়ে ওঠে ঐতিহাসিক।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, রেকর্ড টিকেট বিক্রি, জাস্টিন ট্রুডো, প্রিন্স উইলিয়ামের মত রাজনীতিবিদের উপস্থিতি, টম ক্রুজের নাচ ছাড়াও সুইফটের এই কনসার্ট ট্যুর আরো নানা কারণেই অভূতপূর্ব। পপ কালচারে এমন প্রভাব বিস্তারকারী কনসার্ট অন্তত চলতি শতকে দেখা যায়নি বলে মত দিয়েছেন অনেকে।
তার পর আসে নতুন অ্যালবামের ঘোষণা। তাই ভক্তরাও উন্মুখ হয়েছিলেন।
এবছর সুইফট তার নিজের পুরোনো সব গানের স্বত্ব ফিরে পেয়েছেন। ন্যাশনাল ফুটবল লিগ খেলোয়াড় কানসাস সিটি চিফসের খেলোয়াড় ট্র্যাভিস কেলসির সঙ্গে বাগদানও সেরেছেন।
এর মধ্যে একটি পডকাস্টে এসে সুইফট অ্যালবাম ও বাগদানের ঘটনার যোগসূত্রতা নিয়ে বলেন, “অ্যালবামটা আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় আর নাটকীয় জায়গা থেকে এসেছে। সেই উদ্দীপনাটা সংগীতেও চলে এসেছে।”
তবে এই অ্যালবাম নিয়ে সমালোচনাও এসেছে। প্রভাবশালী মিউজিক রিভিউ সাইট ‘পিচফোর্ক’ নতুন অ্যালবাম ‘দ্য লাইফ অব এ শোগার্ল’-কে ১০-এর মধ্যে মাত্র ৫.৯ রেটিং দিয়ে লিখেছে, “তার গান এত আবেদনহীন আগে কখনও লাগেনি।”
‘দ্য নিউ ইয়র্কার’ পত্রিকা প্রশ্ন তুলেছে, “সম্পদ আর খ্যাতির কারাগারে কি আটকে গেছেন সুইফট? সম্ভবত তর আবেগের গণ্ডিও এখন সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।”
‘দ্য লাইফ অব আ শোগার্ল’ অ্যালবামকে কেন্দ্র করে নির্মিত সিনেমা ‘দ্য অফিশিয়াল রিলিজ পার্টি অব আ শোগার্ল’ মুক্তি পেয়েছে। যা বক্স অফিসে ঝড় তুলেছে।
মুক্তির তিন দিনে এটি আয় করেছে ৪৬ মিলিয়ন ডলার। সিনেমাটি মূলত ৮৯ মিনিটের একটি বিশেষ ইভেন্ট, যেখানে আছে নতুন মিউজিক ভিডিও ও এর পেছনের গল্প।
