“প্রকৃতির যে নানা রূপ, তার সম্পর্কে আমাদের নবীনদের ধারণা পেতে এ ধরনের প্রকৃতি বন্দনার আয়োজন আরো হওয়া উচিত,” বলেন শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়।
হতে সংগৃহিত
ঋতু বৈচিত্র্যকে বন্দনায় ঢাকার সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট আয়োজনে হয়ে গেল ‘শরৎ উৎসব’।
শনিবার ঢাকার সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের সঙ্গে যৌথভাবে এই আয়োজন ছিল নাটক, গান আর আবৃত্তিতে মুখর।
সকাল সাড়ে ৭টায় সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল প্রাঙ্গণে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দর্শক সারিতে ছিলেন অনেক অভিভাবক, শিক্ষকও। পুরো প্রাঙ্গণ মেতেছিল নবীন প্রাণের জোয়ারে।
ছায়ানট বলছে, এমন আয়োজনের মধ্য দিয়ে আরো বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে চায় তারা। নতুন প্রজন্মের মাঝে প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসার বার্তা ছড়াতে এমন উৎসবের আয়োজন বাড়াতে হবে।
‘শরৎ প্রাতে অরুণ আলো’ প্রতিপাদ্যে ছায়ানটের শরৎ বন্দনার এ অনুষ্ঠান শুরু হয় সম্মেলক কণ্ঠে ‘শরৎ তোমার আলোর অঞ্জলি’ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে।
ছায়ানট সাধারণ সম্পাদক লাইস আহমদ লিসা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা আরো বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে চাই, তরুণ প্রজন্মের মাঝে যেতে চাই।
“সে লক্ষ্যেই এবার সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের সঙ্গে যৌথভাবে এই আয়োজন করেছি। সামনের দিনে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়েও এমন আয়োজন করতে চাই।”
সেন্ট যোসেফ স্কুলের সঙ্গে প্রথমবারের মতো এ আয়োজন করার কথা জানিয়ে লিসা বলেন, “আমরা এর জন্য এই স্কুলের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।”
সমাজে আলোক শিখা জ্বালিয়ে রাখতে হবে মন্তব্য করে ছায়ানট সাধারণ সম্পাদক বলেন, “যারা অন্ধকারে আছে, তাদের মাঝেও আলো জ্বালাতে হবে।”
অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক পর্বের প্রথম ভাগে সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের কালচারাল ফোরামের শিক্ষার্থীরা পরিবেশন করে দুটি সম্মেলক গান, তিনটি একক কণ্ঠে গান এবং একটি বৃন্দ আবৃত্তি।
তাদের পরিবেশনায় ছিল—একক কণ্ঠে ‘আমারে ডাক দিল কে’, ‘শরতে আজ কোন অতিথি’, ‘শিউলি ফুল শিউলি ফুল’ গানের পরিবেশনা। এরপর বৃন্দ আবৃত্তি ‘শরৎ’ পরিবেশন করে শিক্ষার্থীরা। সবশেষে সম্মেলক কণ্ঠে ‘তোমার মোহন রূপে কে রয় ভুলে’ পরিবেশন করে সেন্ট যোসেফের শিক্ষার্থীরা।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয়ভাগে ছিল ছায়ানটের নিবেদন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শারোদোৎসব’। গান, নাট্যাংশ পাঠ ও অভিনয়ে অংশ নেয় নালন্দার শিশুরা। গানে অংশ নেয় সংগীত-প্রবেশ বিভাগের শিশুরা। তাদের সঙ্গে ছিল মোস্তাফিজুর রহমান তূর্য এবং সত্যম্ কুমার দেবনাথের কণ্ঠে গান।
ছায়ানটের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত রায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শরৎ আসলে শীত এবং বর্ষার একটা মেলবন্ধন। আমরা এবার সেন্ট যোসেফ স্কুলের সঙ্গে এই আয়োজন করেছি, নবীন যে শিক্ষার্থীরা—তারাও ঋতু বৈচিত্র্যকে চিনতে শিখুক।
“এখানে আমাদের নালন্দার শিক্ষার্থীরা আছে। নবীনদের সঙ্গে অভিভাবকও এসেছেন। সবাইকে নিয়ে আমরা এবার শারদোৎসবটা করছি।”
নৃত্য শিক্ষক ও শিল্পী শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখানে এসে ভীষণ ভালো লাগছে। শিক্ষার্থীদের নিয়ে এমন আয়োজন আরো বেশি হওয়া উচিত। রবীন্দ্রনাথ যেমন তার লেখায় নানাভাবে ঋতুবৈচিত্রয়ের কথা তুলে ধরেছেন।
“প্রকৃতির যে নানা রূপ, তার সম্পর্কে আমাদের নবীনদের ধারণা পেতে এ ধরনের প্রকৃতি বন্দনার আয়োজন আরো হওয়া উচিত।”
শারোদোৎসবের পরিবেশনায় ছিল—‘মেঘের কোলে রোদ হেসেছে’, ‘আজ ধানের ক্ষেতে’, ‘আনন্দেরই সাগর হতে’, ‘তোমার সোনার থালায়’, ‘আমরা বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ’, ‘অমল ধবল পালে লেগেছে’। সবশেষে ছিল সম্মেলক নৃত্যগীত ‘নয়ন ভুলানো এলে’।
পরিবেশনাটির নির্দেশনায় ছিলেন জয়ন্ত চট্টপাধ্যায়। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায় ও বেলায়েত হোসেন খান। তবলায় ছিলেন সুবীর ঘোষ ও গৌতম সরকার। এস্রাজ-এ ছিলেন শৌণক দেবনাথ ঋক। বাঁশিতে মামুনুর রশিদ এবং কি-বোর্ডে রবিন্স চৌধুরী।
