“যদি গণভোট করতেই হয়, তাহলে একদিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট করলে কোটি কোটি টাকা বেঁচে যায়।”
হতে সংগৃহিত
নির্বাচন কমিশন যখন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছে, তখন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণভোট আয়োজনের মতামত পেয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
সংসদ নির্বাচনের বাইরে ‘গণভোট’ নিয়ে কোনো পরিকল্পনা এখন নির্বাচন কমিশনের নেই। তবে সরকার সিদ্ধান্ত দিলে ইসি তা বাস্তবায়নে কাজ করবে বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেছেন, “আমি কমিশনার হিসেবে বলছি না, দেশের জ্যেষ্ঠ নাগরিক হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, যদি গণভোট করতেই হয়, তাহলে একদিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট করলে কোটি কোটি টাকা বেঁচে যায়।”
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনও বলছে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের বিষয়ে ‘সবাই’ একমত হয়েছে।
বুধবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পঞ্চম দফার বৈঠকের পর ঐকমত্য কমিশনের সহ সভাপতি আলী রীয়াজ বলেছেন, “বিশেষজ্ঞরা সর্বসম্মতভাবে আমাদের যে মতামত দিয়েছেন, জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় হিসেবে, সেটা হচ্ছে, একটি আদেশ জারি করতে হবে। ওই আদেশের মাধ্যমে গণভোট আয়োজন করতে হবে।”
তবে সেই গণভোট কখন কীভাবে হবে, তা নিয়ে এখনো মতভেদ আছে। কোনো কোনো দল সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একদিনে করার প্রস্তাব দিয়েছে, তেমনি জাতীয় নির্বাচনের এক মাস আগেও গণভোট করার প্রস্তাব এসেছে।
১২ কোটি ৬৩ লাখের বেশি ভোটারের সংসদ নির্বাচনে থাকবে ৪০ হাজারের বেশি ভোটকেন্দ্র, সেখানে ভোটকক্ষ থাকবে আড়াই লক্ষাধিক। প্রথমবারের মত প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট নেওয়ার আয়োজন হচ্ছে ‘আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ব্যালটের’ মাধ্যমে।
প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার সংসদ নির্বাচনে ১০ লাখের বেশি লোকবল নিয়োজিত থাকবে।
একসঙ্গে ভোট হলে এক আয়োজনেই দুই কাজ সেরে ফেলা সম্ভব। তা না হলে দুই দফায় একই মাপের আয়োজন করতে হবে দুই ভোটের জন্য।
রোজার আগে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে হবে সংসদ নির্বাচন; তার আগে ডিসেম্বরে তফসিল ঘোষণা করবে এএমএম নাসির উদ্দিন নেতৃত্বাধীন ইসি।
এখন প্রশ্ন হল, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্তের পথ ধরে গণভোট যদি করতেই হয়, চার মাসের মধ্যে তা আয়োজনের সক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের কতটুকু আছে।
গণভোট নিয়ে বাংলাদেশের অতীত অভিজ্ঞতা কেমন, সেই আলোচনাও সামনে আসছে।
ইসি কী ভাবছে?
১৯৭৭ সালে রাষ্ট্রপতির আস্থা যাচাইয়ে প্রথম গণভোট হয় বাংলাদেশে। এরপর ১৯৮৫ সালে সামরিক শাসনের বৈধতা দিতে গণভোট হয়। আর ১৯৯১ সালে হয় বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধন প্রশ্নে গণভোট।
এখন জাতীয় নির্বাচনের আগে বা একসঙ্গে গণভোট করতে হলে নির্বাচন কমিশন সেজন্য কতটা প্রস্তুত জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা পত্রপতিকায় যা দেখছি, এ মুহূর্তে এটা নির্ভর করছে পলিটিক্যাল কনসেনসাসের ওপর।
“এটা (গণভোটের সিদ্ধান্ত) রাষ্ট্রীয় ব্যাপার, সরকারের ব্যাপার। সরকার যদি মনে করে গণভোট করবে, তাহলে আমরা গণভোট ইনশাহআল্লাহ করব।”
তবে সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে একসাথে হলে বড় ব্যয় সাশ্রয় হবে বলে মনে করেন এ কমিশনার।
তিনি বলেন, “এত ব্যয়বহুল কাজ দুই দিনে করাটা কঠিন হবে। কাজেই সরকার যদি সিদ্ধান্ত নেয়, আমাদের কোনো বিষয় নয়। দুই নির্বাচন একত্রে করলে অনেক টাকা বেঁচে যায়।”
ফেব্রুয়ারিতে হলে একসঙ্গে দুই নির্বাচন করা সম্ভব বলেই মনে করছেন আব্দুর রহমানেল মাছউদ।
তিনি বলেন, “সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একসাথে সম্ভব। তবে ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষ কিছু বাড়ানো লাগতে পারে। এছাড়া খুব যে অসম্ভব তা নয়, বরং একসাথেই ভালো।”
দৈনিক ইত্তেফাক। ১৯৭৭ সালের ৩০ মে। ছবি: সংগ্রামের নোটবুক থেকে
দৈনিক ইত্তেফাক। ১৯৭৭ সালের ৩১ মে। ছবি: সংগ্রামের নোটবুক থেকে
বিচারিক ও আইনগত অভিজ্ঞতার আলোকে এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, আইনগত কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়। জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। এখন একটা জিনিস জনগণের কাছে প্লেস করা হচ্ছে, জুলাই সনদে এই লেখা রয়েছে- আপনি পক্ষে দেবেন, নাকি বিপক্ষে দেবেন।
“জনগণের রায় যদি হয়ে যায়, সেটাই তো সবচেয়ে বড় শক্তি। এ ব্যাপারে যদি মনে হয় আইনে কিছু সামান্য পরিবর্তন করতে হবে, তাহলে সরকার করবে (যদি লাগে)। সরকারে বা ঐকমত্য কমিশনে যদি এই সিদ্ধান্ত হয়, তখন আমাদের বিষয়টা কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায় দেখব। আইনগত কাঠামোর মধ্যে থেকে বাস্তবায়ন করব।”
জাতীয় নির্বাচনের মধ্যে গণভোট আয়োজনে ফেব্রুয়ারির সূচির ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না বলেও মনে করেন এ নির্বাচন কমিশনারের।
আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, “বরং শত কোটি সাশ্রয়ের জন্য একসাথে হলে ভালো। কোটি কোটি টাকা খরচ, কষ্ট, লোক নিয়োগ, কত অ্যারেঞ্জমেন্ট করতে হয়। আলাদা দিনে না করে একত্রে করলে দেশের জন্য অধিকতর মঙ্গল।
“ভোটকেন্দ্র, ভোটার, রিটার্নিং অফিসার, ভোটগ্রহণকর্মকর্তা সবই একই থাকবে, শুধু দুটো ব্যালট পেপার। একটা জাতীয় নির্বাচনের, আরেকটা নরমাল গণভোটের।”
অতীতের তিন গণভোট
রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে জনগণের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে মতামত নেওয়ার পদ্ধতিই হল গণভোট। এর মাধ্যমে জনগণের কাছে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় চূড়ান্তভাবে গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যানের জন্য উপস্থাপিত হয়।
>> স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত ১৯৭৭, ১৯৮৫ ও ১৯৯১ সালে তিনবার গণভোট হয়েছে।
>> ১৯৭৭ সালের ৩০ মে প্রথম গণভোট হয়েছিল রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং তার অনুসৃত নীতি ও কর্মপন্থার প্রতি জনগণের মতামত যাচাইয়ের জন্য। প্রদত্ত ভোটের ৯৮.৮% ‘হ্যাঁ’ ভোট; ১.১২% ‘না’ ভোট পড়েছিল।
>> ১৯৮৫ সালের ২১ মার্চ দেশে দ্বিতীয়বার গণভোট হয় তখনকার রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অনুসৃত নীতি ও কর্মপন্থার প্রতি আস্থা এবং স্থগিত সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠান পর্যন্ত তার রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত থাকার বিষয়ে জনগণের সিদ্ধান্ত জানতে। মূলত সামরিক শাসকের বৈধতা দেওয়ার জন্য সেই গণভোট হয়েছিল। প্রদত্ত ভোটের ৯৪.১১% ‘হ্যাঁ’ এবং ৫.৫০% ‘না’ ভোট পড়েছিল সেবার।
>> ১৯৯১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ১৪২ (১ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তৃতীয়বার গণভোট হয়। এ গণভোট ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জনগণের সামনে প্রশ্ন ছিল- ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান (দ্বাদশ সংশোধন) বিল, ১৯৯১-এ রাষ্টপতির সম্মতি দেওয়া উচিত কি না?’ ভবিষ্যতে দেশে কোন ধরনের সরকার পদ্ধতি চলবে, জনগণের কাছে তা জানতে চাওয়া হয়েছিল এ প্রশ্নের মাধ্যমে। সেবার ৮৪% ‘হ্যাঁ’ ভোট এবং ১৫.৬২% ‘না’ ভোট পড়েছিল।
সংবাদ। ১৯৮৫ সালের ২১ মার্চ। ছবি: সংগ্রামের নোটবুক থেকে
দৈনিক ইত্তেফাক। ১৯৮৫ সালের ২২ মার্চ। ছবি: সংগ্রামের নোটবুক থেকে
গণভোট করতে প্রয়োজন আইন সংশোধন
সংসদ বিষয়ক গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন আহমদ বলেন, জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে গণভোট দেওয়াই এখন সচেয়ে সহজ উপায়।
“সেটা করতে গিয়ে সংবিধান সংশোধন করছেন না। জনগণের কাছে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব রাখছেন। জনগণ এ প্রস্তাব গ্রহণ করলে পরবর্তী সংসদে তার বাস্তবায়ন হবে। জনরায় হিসেবে গণভোট হবে।
“এ ভোটের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন করছেন না, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার কোনো ব্যত্যয় ঘটছে না। রাষ্ট্রপতি অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে তো সংবিধান সংশোধন করতে পারবেন না। অতএব, এর মধ্যে (গণভোটে) কোনো বাধা নেই।”
২০১১ সালে গণভোটের বিধান বাতিল করা হয়। তবে এ বছর গণভোটের বিধান ফেরানোর রায় এসেছে উচ্চ আদালত থেকে।
অধ্যাপক নিজাম বলছেন, সরকার চাইলে জনমত যাচাইয়ের জন্য গণভোট করতে পারে। মানুষ সায় দিলে নতুন সংসদ এলে সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় সংশোধনীগুলো আনা যাবে।
“স্পেসিফিক চারটি আর্টিকেলের বিষয়ে গণভোটের বিধান রয়েছে। কিন্তু আইনগত কোনো বাধা নেই। গণভোট করতে পারবেন। হাই কোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংক্রান্ত মামলার রায়ে গণভোট ফেরানোর কথা বলেছে।
“গণভোট করতে হলে আরপিও (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) সংশোধন করতে হবে, ইলেকশন কমিশনকে বলতে হবে গণভোট করেন।”
দৈনিক ইত্তেফাক। ১৯৯১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর। ছবি: সংগ্রামের নোটবুক থেকে
সংবাদ। ১৯৯১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর। ছবি: সংগ্রামের নোটবুক থেকে
সংসদ বিষয়ক এই গবেষক মনে করেন, গণভোট দুই বার লাগবে।
গণভোটে সাধারণত একটি প্রশ্ন থাকে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলার জন্য। প্রথমবার গণভোট করতে হবে জুলাই সনদের ভিত্তিতে সংস্কার এগিয়ে নেওয়ার জন্য জনগণের সম্মতি নিতে।
আর সনদের ৮৪টি সংস্কার বাস্তবায়ন করতে গেলে সংবিধান সংশোধনের যখন দরকার হবে, তখনও একটি গণভোট লাগবে বলে অধ্যাপক নিজামের ভাষ্য।
তিনি বলেন, “রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমাচ্ছেন, সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্টের ডিসেন্ট্রেলাইজ হচ্ছে-তখন কিছু কিছু ক্ষেত্রে গণভোটে যেতেই হবে।”
পৃথিবীর অনেক দেশেই সাধারণ নির্বাচনের সঙ্গে গণভোট হয়, সে কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এ ক্রাইসিস থেকে উত্তরণে এটা একটা ভালো উদ্যোগ। ১৯৯১ সালের গণভোট আইন ও গণভোট বিধি রয়েছে; সেগুলো সংশোধন করলেই হয়ে যাবে।
“একসাথে হলে মানুষের কনফিউজড হওয়ার সম্ভাবনাও কমবে। সাধারণ মানুষ ইউপিতে তিনটি ব্যালটে ভোট দিতে অভ্যস্ত; এখানে দুটো ব্যালট হবে। গণভোট করতে কোনো বাধা দেখছি না আর।”
সবশেষ অভিজ্ঞতা কী বলছে
ইসির সাবেক কর্মকর্তা মিহির সারওয়ার মোর্শেদ ১৯৯১ সালে গণভোট আয়োজনে যুক্ত ছিলেন। নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, দ্বাদশ সংবিধান সংশোধন বিল নিয়ে ওই গণভোট হয়েছিল।
“গণভোটটা হল একটা নিষ্ক্রিয় নির্বাচন। রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার থেকে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থায় ফেরা নিয়ে সেই গণভোট হয়। হ্যাঁ/না ভোট হয়। তখন রিটার্নিং অফিসার ছিলেন জেলা প্রশাসক।”
তিনি বলেন, “গণভোটে মানুষের আগ্রহ থাকে খুব কম। ওই সময়ের খবরের কাগজ দেখেন, উপস্থিতি কম ছিল। যদিও ফলাফলে একটু অন্যরকম আসে। গণভোটের ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালে মামলা বা এ ধরনের জটিলতা তো হয় না। যে ফলাফল আসে তাই ফাইনাল।”
মিহির সারওয়ার মোর্শেদ বলেন, ১৯৯১ সালের গণভোট হয়েছিল জাতীয় নির্বাচনের পরে। গণভোট আইন, বিধি মেনে নির্বাচনটি করা হয়।
এবার একসঙ্গে করা গেলে ‘ভালো হবে’ মত দিয়ে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের জন্য ভোটকেন্দ্রে যে ব্যালট বাক্স লাগবে, তার সমান ব্যালট বাক্স গণভোটের জন্যও লাগবে।
“আমরা (১৯৯১ সালে) যে গণভোট করলাম, সেটা রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার থেকে প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকারের যাওয়ার বিষয়ে। হ্যাঁ/না ভোট হল। সেখানে কোনো প্রার্থী নেই, ভোটার স্লিপ দেওয়া হয় না; ভোটারদের সম্মানের সাথে আমন্ত্রণ জানানো হয় না। এজন্য ভোটাদের আগ্রহ, উপস্থিতি ছিল খুব কম। এবার রাজনৈতিক দল যদি সহায়তা করে, হয়ত উপস্থিতি বাড়তে পারে।”
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য আব্দুল আলীম বলেন, “গণভোট আর সংসদ নির্বাচন দুটো দুই জিনিস, আলাদা ব্যালট পেপারে হবে। এজন্য নির্বাচন কমিশনকে দুই করমের ব্যালট পেপার প্রস্তুত, ব্যালট বাক্স আলাদা করতে হবে।
“সবশেষ ১৯৯১ সালে দেশের মানুষ গণভোট দিয়েছে; এরপর ভুলে গেছে এ জিনিস। গণভোট নিয়ে সাধারণের ধারণা, জ্ঞান সেটার একটা শূন্যতা রয়েছে এতবছরের। কাজেই গণভোট কী, কেন এটা, সে বিষয়ে ব্যাপক প্রচার, সিভিক এডুকেশন দরকার পড়বে। প্রচার না করলে যতটুকু জ্ঞান দরকার ভোট প্রয়োগ করতে, তা আর হবে না।”
এ নির্বাচন বিশেষজ্ঞ বলেন, “ব্যালট পেপার প্রিন্ট, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ এবং ভোটারদের এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা–সবগুলোই কমবেশি চ্যালেঞ্জিং কাজ। খুব তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত হলে ইসির জন্য বেশি চ্যালেঞ্জিং হবে না।”
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তিনটি ব্যালট পেপারে ভোট করা ও ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ফলে এবার সংসদ নির্বাচন আর গণভোট একসঙ্গে হলে ভোটারদের বোঝাতে সমস্যা হবে না বলেই আব্দুল আলীমের ধারণা।
তিনি বলেন, “গণভোটে সবাই এখন রাজি, কোন সময় হবে সেটা নিয়ে ভিন্নমত আছে। ঐকমত্য খুব গুরুত্বপূর্ণ; দলগুলো একমত হলে আর কোনো চ্যালেঞ্জ থাকবে না।”
গণভোটের পূর্বাপর
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে গণভোটের বিধানটি আগামী সংসদে উত্থাপন করে পাস করানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের আদি অর্থাৎ ৭২-এর সংবিধানে গণভোটের বিধান ছিল না। ১৯৭৯ সালে জেনারেল জিয়াউর রহমান পঞ্চম সংশোধনী আমাদের সংবিধানে যুক্ত করেন।
পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে ‘সংবিধান-সংশোধন’ সংক্রান্ত ১৪২ অনুচ্ছেদে (১ক) দফা যুক্ত করা হয়।
সেখানে বলা হয়: “(১) দফায় যাহা বলা হইয়াছে, তাহা সত্ত্বেও এই সংবিধানের প্রস্তাবনা অথবা ৮, ৪৮, ৫৬, ৫৮, ৮০ বা ৯০ক অনুচ্ছেদ অথবা এই অনুচ্ছেদের কোনো বিধানাবলির সংশোধনের ব্যবস্থা রহিয়াছে এরূপ কোনো বিল উপরিউক্ত উপায়ে গৃহীত হইবার পর সম্মতির জন্য রাষ্ট্রপতির নিকট উপস্থাপিত হইলে উপস্থাপনার সাত দিনের মধ্যে তিনি বিলটিতে সম্মতিদান করিবেন কি করিবেন না এই প্রশ্নটি গণ-ভোটে প্রেরণের ব্যবস্থা করিবেন।”
পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে ১৪২ অনুচ্ছেদে গণভোট সম্পর্কিত (১খ), (১গ) এবং (১ঘ) ধারা যুক্ত করা হয়।
পরে ১৯৯১ সালে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী গৃহীত হয়, যার মাধ্যমে ১৪২ অনুচ্ছেদের (১ক) সংশোধন করে ৫৮, ৮০ ও ৯০ক অনুচ্ছেদ সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের বিধান বাতিল করা হয়।
অর্থাৎ দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আরও সীমিত আকারে সংবিধানের প্রস্তাবনা, অনুচ্ছেদ ৮, ৪৮ বা ৫৬ সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোট অনুষ্ঠান বাধ্যতামূলক করা হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১১ সালের ৩০ জুন তারিখে জাতীয় সংসদে পাস হওয়া পঞ্চদশ সংশোধনীতে ১৪২ অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে গণভোটের বিধান বাতিল করা হয়।
তবে ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী মামলায় ১৪২ ধারাটি বাতিল ঘোষণা করে আদালত গণভোটের বিধান ফিরিয়ে আনার কথা বলে।
তবে আদালতের রায়ে গণভোটের বিধানটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনর্বহাল হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কেননা, জেনারেল ক্লজ অ্যাক্ট ১৮৯৭-এর ৬ ধারা অনুযায়ী কোনো আইনকে পুনরুজ্জীবিত করতে হলে সংসদে আইনটি পাস করানোর দরকার হয় বলে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের ভাষ্য।