সঙ্গত কারণেই দল দুটির মুখোমুখি লড়াইয়ের মাঝে থাকছে ভিন্ন এক লড়াইয়ের সুবাস।
হতে সংগৃহিত
প্রতিপক্ষ শিবিরের ২৫ জনের পাঁচ জনই ব্রাজিলিয়ান বংশোদ্ভূত! শেষ নয় সেখানেই; জাপান, ক্যামেরুন, জার্মানিসহ আরও অনেক দেশের খেলোয়াড়ও গায়ে তুলেছেন হংকং চায়নার জার্সি! বাংলাদেশ দলে বর্তমানে প্রবাসী খেলোয়াড়ের সংখ্যা ছয়। এশিয়ান কাপের তৃতীয় রাউন্ডের বাছাইয়ে বাংলাদেশ-হংকং ম্যাচের ভেতরে তাই ভিন্ন এক লড়াইয়ের সুবাসও থাকছে।
বাংলাদেশের জাতীয় স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় মাঠে গড়াবে ম্যাচটি।
‘সি’ গ্রুপের টেবিলে অজেয় দুই দল সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ের পয়েন্ট ৪ করে। শীর্ষে থাকার লড়াইটাও চলছে তাদের মধ্যে। ভারত ও বাংলাদেশের পয়েন্ট ১ করে, এই দুই দলের লড়াই মূলত বাছাই পেরুনোর স্বপ্নে নতুন প্রাণের সঞ্চার করা।
আসছে ম্যাচে ৩ পয়েন্ট পাওয়া তাই বাংলাদেশের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
একে তো হংকংয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ের কোনো গল্প নেই, ফিফা র্যাঙ্কিংয়েও তারা পিছিয়ে ৩৮ ধাপ। এর ওপর কোচ হাভিয়ের কাবরেরার দুর্ভাবনা বাড়িয়েছে চোটের ছোবল।
উইঙ্গার মোহাম্মদ ইব্রাহিম, ফরোয়ার্ড সুমন রেজা নেই আগে থেকে। চোট থেকে পুরোপুরি সেরে ওঠেননি অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার তপু বর্মন ও ফরোয়ার্ড আল আমিন। কানাডা থেকে ঢাকায় পৌঁছে শোমিত সোম মাত্র একটি সেশন অনুশীলন করেছেন দলের সঙ্গে। সবকিছু মিলিয়ে পরিস্থিতি খুব একটা স্বস্তিকর নয় স্বাগতিকদের জন্য।
এই অস্বস্তি নিয়েই বাংলাদেশ মুখোমুখি হচ্ছে হংকংয়ের, যাদের রক্ষণে আছে এদুয়ার্দো নুনেসের মতো অভিজ্ঞ ব্রাজিলিয়ান বংশোদ্ভূত খেলোয়াড়, যিনি একসময় ব্রাজিলের বয়সভিত্তিক দলে ছিলেন নেইমারের সঙ্গী। লাতিন আমেরিকার দেশ থেকে ফের্নান্দো আগুস্তোও ২০২২ সালে গায়ে তুলেছেন হংকংয়ের জার্সি।
আরেক ব্রাজিলিয়ান এভেরতন কামারগো। ২০২৩ সাল থেকে হংকংয়ের হয়ে খেলে ১৯ ম্যাচে এ পর্যন্ত ১০ গোল করেছেন এই মিডফিল্ডার। কামারগোর সঙ্গে বাংলাদেশের জন্য আরও দুর্ভাবনার কারণ হতে পারেন জুনিনিও ও স্তেফান পেরেইরা; হংকংয়ের হয়ে জুনিনিও ২২টি ও স্তেফান ২০টি ম্যাচ খেলেছেন।
কামারগোর মতো আরেক ‘গোলমেশিন’ ম্যাথু এলিয়ট। নিউ জিল্যান্ড বংশোদ্ভূত এই ফরোয়ার্ড ২০২১ সাল থেকে হংকংয়ের হয়ে খেলছেন, ৪২ ম্যাচে করেছেন ১১ গোল। সব মিলিয়ে এই ম্যাচ নিয়ে বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরার দুঃশ্চিন্তার কমতি নেই। তবে তিনি প্রেরণা খুঁজে নিচ্ছেন ঘরের মাঠে দর্শকের সামনে খেলার সুবিধা এবং প্রবাসী হামজা চৌধুরী, শোমিত সোম, জায়ান আহমেদের দিকে তাকিয়ে।
“প্রস্তুতি খুবই ভালো হয়েছে। আমরা প্রায় ১০ দিনের মতো প্রস্তুতি নিয়েছি। এক বিশাল চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের জন্য এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। আমরা সম্পূর্ণ আত্মবিশ্বাসী যে, দল আগামীকালের (বৃহস্পতিবার) জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত এবং সবচেয়ে রোমাঞ্চকর বিষয় হচ্ছে, পুরো স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শকের সামনে খেলার সুযোগ পাব।”
“অবশ্যই, তারা (হামজা ও শোমিত) আমাদের দলে অনেক বেশি মান যোগ করেছে। দল এখন আরও শক্তিশালী। কেবল মান নয়, তারা অভিজ্ঞতা ও ইতিবাচকতা এনেছে। তবে পুরো দলই ম্যাচের ভাগ্য গড়বে-কেবল কয়েকজন নয়।”
বাড়ির উঠানে পা হড়কালে বাছাই পেরুনোর সম্ভাবনা ফিকে হয়ে যাবে আরও। এই বাস্তবতা মনে গেঁথে মাঠে নামছে কাবরেরার দল।
“শুরু থেকেই যখন গ্রুপটা ঘোষণা হলো, আমরা বলেছিলাম- চারটি দলেরই মান প্রায় কাছাকাছি। হয়তো সবার খেলার ধরন বা পরিচয় আলাদা, কিন্তু মানের দিক থেকে হংকং ও সিঙ্গাপুর প্রায় সমান। তাদের দলে ভিনদেশি খেলোয়াড় আছে, এটা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। কারণ শেষ পর্যন্ত আমরা খেলছি একটা দলের বিপক্ষে। তারা হংকংয়ের জাতীয় দল-এটাই গুরুত্বপূর্ণ। সিঙ্গাপুর ম্যাচে অনেক প্রত্যাশা ছিল। পয়েন্ট না পাওয়াটা তাই একটা ধাক্কা ছিল। কিছু ভালো মুহূর্ত ছিল, আবার কিছু ভুলও করেছি। আমাদের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য হলো, আগের ভুলগুলো আর না করা।”
“আগামীকালকের ম্যাচে সেটা গুরুত্বপূর্ণ হবে। কেবল আগামীকাল নয়, আগামী মাসজুড়ে আমাদের বড় ম্যাচ আছে- হংকংয়ের বিপক্ষে অ্যাওয়ে এবং ভারতের বিরুদ্ধে হোম ম্যাচ। আমাদের মনোভাব হলো ইতিহাস গড়া। আমরা জানি, আমাদের সক্ষমতা আছে, যদি আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা দিতে পারি। দল নিয়ে আমি সবসময়ই সন্তুষ্ট ছিলাম। নতুন কিছু খেলোয়াড় এসে আমাদের বাড়তি শক্তি দিচ্ছে। আমি আত্মবিশ্বাসী যে আমরা কাল গুরুত্বপূর্ণ কিছু অর্জন করতে পারি।”
এই ম্যাচ নিয়ে অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া বলেছেন, ‘বাঁচা-মরার’ লড়াই। তবে এই ম্যাচের ফল যাই হোক না কেন, বাছাইয়ের শেষ পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার বার্তা দিলেন কাবরেরা।
“হ্যাঁ, এই ম্যাচ খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমরা শেষ পর্যন্ত লড়াই করতে চাই। আর এজন্য কাল ইতিবাচক ফলাফল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডু অর ডাই হলেও, যাই হোক না কেন, আমরা লড়াই চালিয়ে যাব। আমাদের লক্ষ্য তিন পয়েন্ট অর্জন করা।”
“আমি মনে করি না, মানের দিক থেকে আমরা পিছিয়ে আছি। এখন শুধু সময়ের ব্যাপার—সেই জয়টা আসা। সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে পারিনি, কাল সেটা হতে পারে। এই জয়টা আমাদের বিশাল অনুপ্রেরণা দেবে। আমাদের কাজ চালিয়ে যেতে হবে, বিশ্বাস রাখতে হবে, নিজের পরিচয় ও দর্শন ধরে রাখতে হবে। তাহলে ফল আসবেই-নিশ্চিত।”
