“এই নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে দেশের ক্রীড়ার সর্বোচ্চ ব্যক্তি জড়িত”, ক্রীড়া উপদেষ্টার দিকে ইঙ্গিত করে বললেন ক্যাটেগরি-৩ থেকে পরিচালক পদে হেরে যাওয়া প্রার্থী দেবব্রত পাল।
হতে সংগৃহিত
‘এখন তো মনে হচ্ছে, নিজের ভোটও আমি পাইনি’, কথাটি যখন বলছিলেন দেবব্রত পাল, টলমল করছিল তার দুটি চোখ। কান্নার দমক তিনি আটকে রাখছিলেন অনেক কষ্টে। পরে একটু ধাতস্ত হয়ে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখ হলে। বিসিবি নির্বাচনে ক্যাটেগরি-৩ থেকে পরিচালক পদে নির্বাচন করে হেরে যাওয়া এই প্রার্থী বললেন, নির্বাচন পুরোপুরি প্রভাবিত ছিল।
সরকারের হস্তক্ষেপ, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতার নানা অভিযোগে ২১ প্রার্থী সরে দাঁড়ানোর পর ও সাজানো ছক অনেকটাই স্পষ্ট হওয়ার পর নির্বাচনে যা একটু কৌতূহল ছিল, তা এই ক্যাটেগরি নিয়েই। সেখানে শেষ পর্যন্ত লড়াই জমেনি একটুও।
৩৫ ভোট পেয়ে পরিচালক নির্বাচিত হন সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ। সাবেক ক্রিকেটারের কোটায় বিসিবির মনোনীত কাউন্সিলর ছিলেন তিনি। দেবব্রত পালও সাবেক ক্রিকেটার। তবে কাউন্সিলর ছিলেন তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তিনি পান মাত্র ৭ ভোট।
নির্বাচনের সমীকরণের যে বাস্তবতা ছিল, তাতে পেরে উঠবেন না বলে ধারণা দেবব্রতর একরকমের ছিল। নির্বাচনের আগের দিনও সংবাদকর্মীদের কাছে তিনি তা বলেছেন। তবে মোটে ৭টি ভোট পাবেন, এমন কিছু তার ধারণারও বাইরে ছিল। নির্বাচনের ফল পাওয়ার পর তিনি উগড়ে দিলেন ক্ষোভ।
তার অভিযোগ নির্বাচনে সরকারের ব্যাপক প্রভাব ছিল।
“আমি বলেছিলাম, যা কিছুই হোক, শেষ পর্যন্ত খেলব। প্রথম দিনেই ঘোষণা দিয়েছিলাম, গতকালকেও আমি বলেছি, আজকেও সকালেও বলেছি যে, আমি শেষ পর্যন্ত দেখব। সেই সঙ্গে আমি এটাও কিন্তু বলেছি, বারবার বলেছি—ক্যাটাগরি এক এবং দুইয়ে যেভাবে নির্বাচন হয়েছে, তা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। নির্বাচন শুধুমাত্র নির্বাচনের দিন আপনারা যে ব্যালট পেপার দেখেন, সেটা নির্বাচনের রায় কিন্তু নয়।”
“গত প্রায় দুই মাস যাবত আমার নির্বাচনের অত্যন্ত প্রস্তুতি ছিল। নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কেও জানতাম। কিন্তু নিচে নামতে নামতে তারা এত তলানিতে পৌঁছাবে—এটা একজন সংগঠক হিসেবে, একজন সাবেক ক্রিকেটার হিসেবে, এটা কখনোই অনুভব করতে পারিনি। আজকে যে নির্বাচনের ফলাফল হয়েছে, সেটা সম্পূর্ণ…সেটা সম্পূর্ণ প্রভাবিত। ২৫টার মধ্যে (পরিচালক পদ) প্রায় ২৩- ২৪টা পেয়ে গিয়েছে একটি প্যানেল, যারা এই সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত।”
সরকারের হস্তক্ষেপসহ নানামুখী অভিযোগেই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান তামিম ইকবালসহ ১৬ জন প্রার্থী। সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পরও নির্বাচনের আগের দুই দিনে আরও ৫ প্রার্থী নির্বাচন বজন করেন।
তিনি কেন আগেই সরে যাননি, সেই ব্যাখ্যা দিলেন দীর্ঘদিন বিসিবিতে ম্যাচ রেফারি হিসেবে কাজ করা এই ক্রিকেট সংগঠক।
“আমি দীর্ঘকাল যাবত এই ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত, একজন সংগঠক হিসেবে, দীর্ঘদিনের কাউন্সিলর হিসেবে, আমি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের এই নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে দীর্ঘদিন জড়িত। আপনারা অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন, ‘আপনি কেন তাহলে শেষ পর্যন্ত থাকলেন? আগে কেন বর্জনের ঘোষণা দিলেন না?’ এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমি বিসিবির সম্মানিত সভাপতির সঙ্গে অনেকবার আমি কথা বলেছি। একটাই শুধু বারবার বলেছি যে নির্বাচন যেন নিরপেক্ষ হয়।”
“আপনি যদি কাউন্সিলরদের (ভোটার) দিকে তাকান, তাদের অনেকেই বিসিবির চুক্তিবদ্ধ হিসেবে চাকরিরত আছেন। তারপরও আমি কিছু বলিনি। কারণ, শেষ দেখতে চেয়েছিলাম। আজকেও বলেছি যে, আমি শেষ পর্যন্ত থাকব। আমি এই রেজাল্টের পরেও নির্বাচনের যে কপি থাকে, সেখানেও আমি সাইন করেছি। আমি একটি জায়গায় ব্যত্যয় করিনি। শুধু দেখতে চেয়েছি, তারা কতটা তলানিতে নামতে পারে।”
নির্বাচন ফিক্সিংয়ের অভিযোগ তুলে সরে গিয়েছিলেন সাবেক অধিনায়ক তামিম। দেবব্রতর অভিযোগ, ফিক্সিংয়ের চেয়েও বড় কিছু হয়েছে নির্বাচনে।
“আমাদের একজন ক্রিকেটার কিন্তু একটা ফিক্সিংয়ের কথা বলেছিলেন, নির্বাচন ফিক্সিং। আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, একটু সামনে তাকান ভাই, এই নির্বাচন শুধুমাত্র ফিক্সিংই নয়, এর ভেতরে আরও গভীর কিছু হয়েছে। এটার অনুসন্ধান করাটা অত্যন্ত প্রয়োজন।”
পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ার পেছনে দেবব্রতর ইঙ্গিত ক্রীড়া উপদেষ্টার দিকে।
“আমরা অনেক কিছুই বুঝি। আপনারাও অনেক কিছু বোঝেন। এই নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে ক্রীড়ার সর্বোচ্চ ব্যক্তি জড়িত। তিনি বিভিন্ন সময় মিটিং করছেন, তিনি স্টেটমেন্টও দিচ্ছেন। কাজেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অবস্থানটা কোথায়, কোন দিকে যাচ্ছে, সেটা আপনারা বিবেচনা করবেন।”