গাছ বড় হলে নতুন পাত্রে নিতে হয়। তবে সেজন্য খোয়াল রাখতে হয় নানান দিক।
হতে সংগৃহিত
ঘরের গাছের যত্ন নেওয়া মানেই নিয়মিত পানি দেওয়া, আলো পাওয়া বা সার দেওয়া নয়; এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে সঠিক সময়ে ‘রিপটিং’ বা পুনরায় পাত্রে বসানো।
অনেকেই ভাবেন, ঘরের গাছে তো ঋতু পরিবর্তনের প্রভাব কম, তাই যে কোনো সময়ই পাত্র বদলানো যায়।
তবে বাগান বিশেষজ্ঞদের মতে- ঠিক সময় নির্বাচন না করলে গাছের বেড়ে ওঠা বাধাগ্রস্ত হতে পারে, এমনকি গাছ মরে যাওয়ার ঝুঁকিও থাকে।
গাছ ‘রিপট’ বা পুনঃস্থাপন করা সবচেয়ে উপযুক্ত সময়
বাগান বিশেষজ্ঞ ও যুক্তরাজ্যের ‘ফ্যান্টাস্টিক গার্ডেনারস’ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত পিটার ইভানোভ রিয়েলসিম্পল ডটকম-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেন, “গাছের সক্রিয় বেড়ে ওঠার সময় অর্থাৎ বসন্ত বা গ্রীষ্মের শুরুতে ‘রিপট’ করা সবচেয়ে ভালো। এই সময় গাছ নতুন মাটিতে দ্রুত শিকড় ছড়াতে পারে এবং দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে।”
এই সময়টায় সূর্যের তাপমাত্রা বাড়ে, দিন লম্বা হয় এবং গাছের বৃদ্ধি স্বাভাবিকভাবে ত্বরান্বিত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘কোস্টা ফার্মস’-এর উদ্যানবিদ জাস্টিন হ্যানকক বলেন, “গাছের সক্রিয় বৃদ্ধি শুরু হওয়ার আগে বা ঠিক সেই সময় ‘রিপট’ করলে গাছ সহজে পুনঃস্থাপন চাপ থেকে সেরে ওঠে। এতে অতিরিক্ত পানি দেওয়ার ঝুঁকিও কমে।”
অর্থাৎ বসন্তকাল ও গ্রীষ্মের শুরুতে ‘রিপট’ করলে গাছ নতুন পাত্রে দ্রুত মানিয়ে নেয় এবং নতুন পুষ্টি মাটি থেকে সহজে গ্রহণ করে।
যখন গাছ ‘রিপট’ করা উচিত নয়
শীতকাল বা শরতে ঘরের ভেতরে সময় কাটানো যতই আরামদায়ক হোক না কেন, এই সময় গাছের পাত্র পরিবর্তন করা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
‘পামস্ট্রিট’–এর উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ রায়ান ন্যাশ বলেন, “শরৎ ও শীতকাল গাছের বিশ্রামের সময়। এই মৌসুমে গাছের বৃদ্ধি ধীর হয়ে যায়, তাই তখন ‘রিপট’ করলে গাছের শিকড় ও কাণ্ডে অতিরিক্ত চাপ পড়ে। ফলে গাছ ঝরে যেতে পারে, পাতা ঝলসে যেতে পারে, এমনকি গাছ মারা যেতে পারে।”
ইভানোভ যোগ করেন, “শীতকালে ‘রিপট’ করলে গাছ অতিরিক্ত চাপের কারণে রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।”
এছাড়া শীতের সময় অতিরিক্ত আর্দ্রতাও সমস্যা তৈরি করতে পারে। ‘রিপট’এর পর গাছে পানি দিতে হয়। তবে শীতকালে গাছের পানি শোষণের হার কম থাকে।
এই অবস্থায় টবের মাটিতে পানি জমে গিয়ে ‘রুট রট’ বা শিকড় পচে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
তবে হ্যানককের মতে, এটি কোনো কঠোর নিয়ম নয়।
তিনি বলেন, “যদি দেখেন গাছের শিকড় টবের বাইরে বেরিয়ে আসছে বা শিকড়ের জায়গা সংকুচিত হয়ে গেছে, তবে শীতকালেও রিপট করা যেতে পারে। শুধু তখন গাছকে একটু বাড়তি যত্ন দিতে হবে— বিশেষ করে পানি দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “যদি শীতকালে ঘরে ‘গ্রো লাইট’ ব্যবহার করা হয় এবং গাছ সক্রিয়ভাবে বেড়ে উঠে, তাহলে শীতেও ‘রিপট’ করা ক্ষতিকর নয়।”
রিপট’-এর আগে যা যা বিবেচনা করতে হবে
‘রিপট’-এর সময় নির্বাচন যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ হল নিশ্চিত হওয়া যে গাছ সত্যিই নতুন পাত্রে যাওয়ার উপযুক্ত অবস্থায় আছে কিনা।
ইভানোভ বলেন, “প্রথমেই গাছের শিকড়ের অবস্থা পরীক্ষা করুন। যদি শিকড় পাত্রের চারপাশে পাক খেয়ে বেড়ে ওঠে বা নিচের ছিদ্র দিয়ে বেরিয়ে আসে, তাহলে বুঝবেন গাছটি ‘রুট-বাউন্ড’। তখনই রিপট করা দরকার।”
এছাড়া গাছ ও টবের আকারের সামঞ্জস্য, মাটির গুণমান এবং গাছের বেড়ে ওঠার ধীরগতি বা পুষ্টি ঘাটতির লক্ষণও বিবেচনা করতে হবে।
তবে যদি গাছ কোনো রোগে আক্রান্ত থাকে বা পোকামাকড়ের আক্রমণ হয়, তখন ‘রিপট’ না করাই ভালো।
ইভানোভ বলেন, “রোগাক্রান্ত গাছ ‘রিপট’ করলে এর ওপর বাড়তি চাপ পড়ে, এতে গাছ সুস্থ হওয়ার বদলে আরও দুর্বল হয়ে যায়।”
টবের আকার বাছাইয়ে সতর্কতা
জাস্টিন হ্যানকক সতর্ক করে বলেন, “যদি গাছ এখনও ‘রুট-বাউন্ড’ না হয়, তবে খুব বড় পাত্রে ‘রিপট’ করা উচিত নয়। অতিরিক্ত বড় টবের মাটি বেশি আর্দ্রতা ধরে রাখে, যা গাছের শিকড়ের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। এতে অতিরিক্ত পানি জমে ‘রুট রট’ হতে পারে।”
তাই তিনি পরামর্শ দেন, “গাছের বর্তমান টবের থেকে সামান্য বড় টব নির্বাচন করাই সবচেয়ে ভালো। এতে গাছ নতুন মাটিতে পর্যাপ্ত জায়গা পাবে। তবে অতিরিক্ত পানি ধরে রাখার ঝুঁকি থাকবে না।”
