বায়োকম্পিউটিংয়ে’ জীবিত কোষ বা জীববিজ্ঞানের উপাদান ব্যবহার করে কম্পিউটার বা তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করা হয়, যা প্রচলিত কম্পিউটার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।
হতে সংগৃহিত
বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর মত শোনালেও, কয়েকজন গবেষক সত্যিই জীবিত কোষ ব্যবহার করে কম্পিউটার তৈরির কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। কম্পিউটারকে শক্তিশালী করতে ক্ষুদ্র মানব মস্তিষ্ক তৈরির দাবি করেছেন তারা।
‘বায়োকম্পিউটিং’ এমন এক জগৎ, যেখানে জীবিত কোষ বা জীববিজ্ঞানের উপাদান ব্যবহার করে কম্পিউটার বা তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করা হয়, যেটি প্রচলিত কম্পিউটার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ও বিস্ময়কর এক বিজ্ঞান বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
‘বায়োকম্পিউটিংয়ে’ নেতৃত্ব দিচ্ছেন সুইজারল্যান্ডের কিছু বিজ্ঞানী। তাদের অনুমান, ভবিষ্যতে আমরা এমন ডেটা সেন্টার দেখতে পাবো যেগুলো ‘জ্যান্ত’ সার্ভার দিয়ে ভর্তি থাকবে এবং এগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যেভাবে শেখে সে বৈশিষ্ট্য অনুকরণ করে কাজ করবে। এসব সার্ভার বর্তমান পদ্ধতির তুলনায় অনেক বিদ্যুৎ সাশ্রয়ীও হবে।
এমন ‘জ্যান্ত’ সার্ভার তৈরি করাই ড. ফ্রেড জর্ডান ও তার কোম্পানি ‘ফাইনালস্পার্ক’ ল্যাবের মূল লক্ষ্য বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
কম্পিউটারে ব্যবহৃত হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার– এই দুটি ধারণার সঙ্গে আমরা পরিচিত। হার্ডওয়্যার মানে হচ্ছে যন্ত্রাংশ, যেমন– প্রসেসর, র্যাম, হার্ডডিস্ক। অন্যদিকে সফটওয়্যার হল যেসব প্রোগ্রাম বা অ্যাপ, যা আমরা কম্পিউটারে চালাই।
ড. জর্ডান ও এ নিয়ে কাজ করা অন্য বিজ্ঞানীরা নিজেদের তৈরি এ প্রযুক্তিকে ‘ওয়েটওয়্যার’ নামে বর্ণনা করেছেন, যে শব্দটি শুনতে একটু অদ্ভু্তই হয়ত লাগবে।
‘ওয়েটওয়্যার’ বলতে বিজ্ঞানীরা বোঝাচ্ছেন জীবিত কোষ বা জৈব উপাদান থেকে তৈরি কম্পিউটার সিস্টেম, যা হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের মত কাজ করে। তবে তা সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে নিউরনের মতো কোষ তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা, যেগুলো একসঙ্গে হয়ে ছোট ছোট গ্রুপে ‘অর্গ্যানয়েডস’ তৈরি করে। এরপর এসব অর্গ্যানয়েডসকে ইলেকট্রোডের সঙ্গে সংযোগ ঘটিয়ে সেখান থেকেই এগুলোকে ছোট কম্পিউটার হিসেবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন তারা।
ড. জর্ডান বলেছেন, অনেক মানুষের কাছে বায়োকম্পিউটিং ধারণাটি একটু অদ্ভুত বা অবাক করা মনে হতে পারে।
“তবে বিজ্ঞান কল্পকাহিনীতে, মানুষ বহু বছর ধরে এসব ধারণার কথা শুনে এসেছেন।
“আপনি যখন বলছেন, ‘আমি একটি নিউরনকে ছোট এক মেশিন হিসেবে ব্যবহার করব’ তখন তা আমাদের মস্তিষ্ক সম্পর্কে ভিন্ন এক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে এবং আমাদের নিজের অস্তিত্ব বা মানুষ হওয়ার অর্থ নিয়ে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করে।
‘ফাইনালস্পার্ক’-এর কাজ শুরু হয় মানুষের ত্বকের কোষ থেকে পাওয়া স্টেম কোষ দিয়ে, যা জাপানের একটি ক্লিনিক থেকে কেনেন বিজ্ঞানীরা। এ স্টেম কোষের দাতা বা ব্যক্তি সম্পর্কে তথ্য গোপন রয়েছে।
ড. জর্ডান বলেছেন, “তবে আমরা কেবল অফিসিয়াল সরবরাহকারীদের থেকে আসা স্টেম কোষই নির্বাচন করি, কারণ আমাদের কাছে কোষের মান খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
‘ফাইনালস্পার্ক’-এর সেলুলার বায়োলজিস্ট ড. ফ্লোরা ব্রোজ্জি বলেছেন, তাদের ল্যাবে অনেক ছোট ছোট সাদা রঙের গোলাকার কোষ রয়েছে। প্রতিটি কোষ ছোট গোলাকার এক জ্যান্ত মস্তিষ্কের মতো ছোট নমুনা, যা স্টেম কোষ থেকে তৈরি। আর এই কোষের দলকেই বলা হচ্ছে ‘অর্গ্যানয়েডস’।
এসব অর্গ্যানয়েডস মানুষের মস্তিষ্কের মতো জটিল নয়, তবে এগুলো মানুষের মস্তিষ্কের মতোই নিউরন ও অন্যান্য কোষ নিয়ে গঠিত।
কয়েক মাস ধরে চলা একটি প্রক্রিয়া শেষে এসব অর্গ্যানয়েডকে ইলেকট্রোডের সঙ্গে সংযোগের জন্য প্রস্তুত করা হয় এবং তারপর সেগুলোকে কিবোর্ড থেকে আসা সাধারণ নির্দেশনা বুঝে সাড়া দিতে পারে এমনভাবে প্রশিক্ষণ দেন গবেষকরা।
এটি এমন এক উপায় যেখানে ইলেকট্রোডের মাধ্যমে অর্গ্যানয়েডস ইলেকট্রিক সিগনাল পাঠাতে ও পেতে পারে এবং সেইসব তথ্য একটি কম্পিউটারে সংরক্ষণ করা হয়।
এটি সহজ এক পরীক্ষা, যেখানে কি বোর্ডে কোনো একটি বাটন চাপলে ইলেকট্রোডের মাধ্যমে সিগনাল যায়। সব ঠিকঠাক থাকলে কম্পিউটারের স্ক্রিনে অর্গ্যানয়েডসের সাড়া হিসেবে ছোট এক সক্রিয়তা দেখা যায়। তবে তা সব সময় হয় না।
এ সময় স্ক্রিনে যে গ্রাফটি দেখা যায় তা চালু অবস্থায় থাকে এবং মানুষের মস্তিষ্কের বিদ্যুচ্চালিত কার্যকলাপ পরিমাপের ‘ইলেক্ট্রোএনসেফালোগ্রাম’ বা ইইজি গ্রাফের মতো দেখায়।
ড. জর্ডান বলেছেন, তারা এখনও অনেক কিছুই বুঝতে পারেনি যে এসব অর্গ্যানয়েড ঠিক কীভাবে ‘কাজ’ করছে এবং কেন এমন হচ্ছে।
এসব অর্গ্যানয়েড বা বায়োকম্পিউটারের নিউরনকে বিদ্যুচ্চালিত সিগনাল দিয়ে উদ্দীপিত করা হচ্ছে, যেন এরা শেখা শুরু করে। ভবিষ্যতে এরা যেন নিজেরা মানিয়ে নিয়ে বিভিন্ন কাজ করতে পারে, সেটিই এ গবেষণার মূল লক্ষ্য।