একজন নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, “এ পর্যন্ত যেগুলো নিষ্পত্তি করা হয়েছে কমিশনের সিদ্ধান্তই তো হয়েছে। এ ব্যাপারে ভুলের কোনো কারণ নেই।”
হতে সংগৃহিত
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন দল নিবন্ধন চূড়ান্ত করার পথে ‘শাপলা’ প্রতীক নিয়ে ফের বিতর্ক শুরু হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন কোনো দলকে শাপলা মার্কা বরাদ্দ দেয়নি, নির্বাচনের প্রতীক তালিকাতেও রাখেনি। কিন্তু নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি শাপলা প্রতীকের দাবিতে অনড় অবস্থান নিয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে প্রতীক তালিকা সংশোধনের জন্য শুক্রবার আবারো দাবি জানিয়েছে দলটি। আর এ প্রতীকের প্রথম দাবিদার নাগরিক ঐক্য আগের দিন বলেছে, এনসিপিকে শাপলা দিলে এখন আর তারা আপত্তি করবে না, আদালতেও যাবে না।
তাহলে কি এখন সিদ্ধান্ত বদলে এনসিপিকে শাপলা মার্কা বরাদ্দ করার সুযোগ আছে? এ বিষয়ে ইসির সিদ্ধান্তের বাইরে মন্তব্য করতে চান না কর্মকর্তারা।
নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বৃহস্পতিবার বলেছেন, “কোনো দলের নামে তো শাপলা প্রতীক বরাদ্দ দেয়নি ইসি; সেক্ষেত্রে অন্যকে দেওয়ার বিষয়ে মামলা করা না করার কি রয়েছে? ইসি প্রতীকের বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করেছে। এখন এককভাবে আমার আর কিছু বলার নেই।”
তিনি বলেন, “এ পর্যন্ত যেগুলো নিষ্পত্তি করা হয়েছে কমিশনের সিদ্ধান্তই তো হয়েছে। এ ব্যাপারে ভুলের কোনো কারণ নেই।”
নিবন্ধিত দল নাগরিক ঐক্য তাদের বরাদ্দ পাওয়া ‘কেটলি’ প্রতীকের পরিবর্তে শাপলা চেয়ে আবেদন করেছিল। তাদের আবেদন নাকচ করে দিয়েছিল এএমএম নাসির উদ্দিন নেতৃত্বাধীন ইসি।
এরপর এনসিপি শাপলা প্রতীক চেয়ে চিঠি দেয়। কিন্তু শাপলা প্রতীক তালিকাতেই না রাখার সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন পরিচালনা বিধির প্রতীক তালিকা সংশোধন করে আরও কিছু নতুন প্রতীক যুক্ত করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
সবশেষ ২৪ সেপ্টেম্বর প্রতীক তালিকার গেজেট প্রকাশ করে ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানিয়ে দেন, সংশোধিত তালিকায় শাপলা নেই; তাই এটা এনসিপির তা পাওয়ারও সুযোগ নেই। সেদিনই এনসিপি ফের শাপলা প্রতীক বরাদ্দ চেয়ে নিজেদের অনড় অবস্থান তুলে ধরে কমিশনকে চিঠি দেয়।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন ‘শাপলা’ প্রতীক নিয়ে আর নতুন করে ব্যাখ্যা দিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, “এনসিপি শাপলা চেয়েছে এটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। অথচ শপলা চেয়েছিল নাগরিক ঐক্য, তারা প্রথম চেয়েছিল। তখন আলোচনায় আনেনি। এখন কেন এত আলোচনা?”
সিইসির ভাষ্য, এটা কমিশনের সিদ্ধান্ত। কমিশন নানা বিষয় বিবেচনায় নিতে পারে।
“এখন প্রত্যেকটা ডিসিশনের কারণ ব্যাখ্যা করতে গেলে তাহলে মুশকিল আছে। এ পর্যন্ত যত সিদ্ধান্ত নিয়েছি, নাগরিক ঐক্যের বিষয়ে যে ডিসিশন নিয়েছি, ওটাও কমিশনের সভায় নিয়েছি।”

পুনর্বিবেচনার দাবি
এনসিপি আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলামকে উদ্ধৃত করে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী শুক্রবার ফেসবুকে আবারও শাপলা প্রতীকের দাবি তুলে ধরেছেন।
নিজেদের দাবির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে তিনি লিখেছেন, “সার্বিক বিবেচনায় আমরা আশা করি, নির্বাচন কমিশন ২০০৮ সালের নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালায় প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনে জাতীয় নাগরিক পার্টির অনুকূলে ১. শাপলা, ২. সাদা শাপলা, এবং ৩. লাল শাপলা থেকে যে কোনো একটি প্রতীক বরাদ্দ করবে এবং এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন নিজের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ইতোপূর্বের স্বেচ্ছাচারী ও একরোখা মনোভাব পরিত্যাগ করবে এবং এমনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে যাতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন ও সকল দলের ক্ষেত্রে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির ক্ষেত্রে তাদের আগ্রহ জনমনে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়।”
দলটির যুক্তি, সংবিধানের জাতীয় প্রতীক সম্পর্কিত ধারা এবং সংশ্লিষ্ট বিধি অনুযায়ী ‘শাপলা’ প্রতীক নির্বাচন কমিশনের প্রতীক তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা বা রাজনৈতিক দলকে বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো আইনগত বাধা নেই।
পুনর্বিবেচনার সুযোগ আছে?
শাপলা এনসিপিকে দেওয়ার বিষয়ে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়কের হঠাৎ অনাপত্তি এবং মামলা না করার ঘোষণায় বিতর্কের পালে নতুন হওয়া লেগেছে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, “তাদের মামলা করার কি আছে! এটা তো তাদের নামে অ্যালটমেন্ট দেওয়া হয়নি।”
নিবন্ধন শর্ত পূরণ করায় নতুন দল এনসিপি ও বাংলাদেশ জাতীয় লীগকে ৩০ সেপ্টেম্বর নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায় নির্বাচন কমিশন।
বর্তমানে নিবন্ধিত দল রয়েছে অর্ধশতাধিক। তাদের জন্য প্রতীক সংরক্ষিত রয়েছে। দুটি দলকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে। এর বাইরে ১২টি দলের বিষয়ে পুনঃতদন্ত চলছে।
এ পরিস্থিতিতে ১১৫টি প্রতীকের মধ্যে বাকি থাকা ৫০টি থেকে বাছাই করতে বলা হয়েছে এনসিপিকে। এ তালিকায় থাকা কলম ও মোবাইল ফোন আগে এনসিপির পছন্দের তালিকায় থাকলেও নিবন্ধন আবেদনের পরে সংশোধিত চিঠিতে দলটি শাপলা, সাদা শাপলা বা লাল শাপলা চায়।
এনসিপিকে নির্ধারিত তালিকা থেকে প্রতীক বাছাইয়ের জন্য ৭ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে চিঠি পাঠায় ইসি।
এ অবস্থায় শাপলা নিয়ে আর বিতর্ক করার সুযোগ রয়েছে কিনা জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানল মাছউদ বলেন, “হ্যাঁ, আমরা চিঠি দিয়েছি। এখন (শাপলা নিয়ে বিতর্ক) আপাতত তো নাই। তবে আমার ব্যক্তিগত কোন বিষয় নয়; এখন এটা নিয়ে আমি কোনো কমেন্টও করতে চাচ্ছি না। কমিশন এ ব্যাপারে যদি কোনো কিছু করে, করতে পারবে (কিনা) আমি জানি না।”