ভুলে যাওয়া রোগে ভুগতে না চাইলে প্যাডেল মারা শুরু করুন।
হতে সংগৃহিত
বর্তমানে ‘ডিমেনশা’ বা স্মৃতিভ্রংশ রোগ বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি হিসেবে দেখা হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী- বর্তমানে প্রায় ৫ কোটি ৫০ লাখ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৫০ সালের মধ্যে এ সংখ্যা প্রায় তিনগুণ হয়ে দাঁড়াবে।
তবে জীবনযাপনের কিছু অভ্যাস পরিবর্তন করে স্মৃতিভ্রংশ রোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের করা একটি গবেষণা বলছে, সাইকেল চালানো কেবল শরীরচর্চা নয়, এটি মস্তিষ্ককেও সুরক্ষা দিতে পারে।
গবেষণার ফলাফল
যুক্তরাজ্যের প্রায় ৪ লাখ ৮০ হাজার মানুষের ওপর চালানো এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক সাময়িকী ‘জামা নেটওয়ার্ক ওপেন’-এ।
গবেষণার তথ্য তুলে ধরে সিনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়- দেখা গেছে, যারা সাইকেল চালান, তাদের সব ধরনের ডিমেনশা’র ঝুঁকি ১৯ শতাংশ এবং আলৎঝাইমার’স রোগের ঝুঁকি ২২ শতাংশ কম।
অন্যদিকে যারা গাড়ি, ট্রেন বা বাসের মতো নিষ্ক্রিয় ভ্রমণ পদ্ধতি বেছে নেন, তাদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি অনেক বেশি।
যে কারণে এই ফলাফল গুরুত্বপূর্ণ
অনেক গবেষণাই দেখিয়েছে শারীরিক কার্যক্রম স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি কমায়।
২০২৪ সালে প্রকাশিত ‘দ্য ল্যানসেট কমিশন’ জানায়, প্রায় ১৪টি কারণ স্মৃতিভ্রংশ প্রতিরোধ বা দেরি করাতে ভূমিকা রাখে। এর মধ্যে শারীরিক কার্যক্রম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
তবে যাতায়াতের পদ্ধতির সঙ্গে স্মৃতিভ্রংশ রোগের সম্পর্ক নিয়ে এত বিস্তৃত গবেষণা এর আগে হয়নি। তাই যুক্তরাজ্যের এই গবেষণা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
যেভাবে গবেষণা করা হয়েছে
গবেষণার জন্য ২০০৬ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে ৪০ থেকে ৬৯ বছর বয়সি অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তারা জানায়, গত চার সপ্তাহে কোন যাতায়াত মাধ্যম বেশি ব্যবহার করেছেন—
শুধুই গাড়ি বা বাস
হাঁটা
হাঁটা ও গাড়ি মিশ্রিত
সাইক্লিং বা সাইকেল চালনা
সাইকেল ও অন্যান্য মাধ্যম মিশ্রিত
গড়ে ১৩ বছর ধরে তাদের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করা হয়। এ সময়ের মধ্যে ৮ হাজার ৮শ’ ৪৫ জন স্মৃতিভ্রংশের এবং ৩ হাজার ৯শ’ ৫৬ জন আলৎঝাইমার’স রোগে আক্রান্ত হন।
ফলাফলে দেখা যায়- সাইকেল চালানো ও মিশ্র গ্রুপের অংশগ্রহণকারীদের মস্তিষ্কে ‘হিপোক্যাম্পাস’ অঞ্চলের আয়তন তুলনামূলক বড়, যা স্মৃতি ও শেখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
যুক্তরাষ্ট্রের ‘স্টনি ব্রুক ইউনিভার্সিটি’র নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও প্রধান ডা. জো ভার্ঘেস সিএনএন ডটকম-কে বলেন, “এই গবেষণা প্রথমবার দেখালো, সাইকেল চালানো কেবল স্মৃতিভ্রংশর ঝুঁকি কমায় না, বরং মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস অঞ্চলও বড় রাখতে সাহায্য করে।”
তার মতে, “সাইকেল চালনা হৃদযন্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়ায়, মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ উন্নত করে, স্নায়ুর নমনীয়তা বাড়ায় এবং শরীরের বিপাকক্রিয়া ঠিক রাখে। ফলে মস্তিষ্ক সুস্থ থাকে।”
তবে প্রধান গবেষক, ‘ব্রেন কেয়ার ল্যাবস, ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতাল’ এবং হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের প্রশিক্ষক ডা. সঞ্জুলা সিং সতর্ক করে বলেন, “এটি একটি পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা। তাই সরাসরি বলা যাবে না যে সাইকেল চালনা স্মৃতিভ্রংশ প্রতিরোধ করে। তবে এটি একটি শক্তিশালী সম্পর্ক প্রমাণ করছে।”
তার মতে, “অংশগ্রহণকারীরা একবারই ভ্রমণ অভ্যাস জানিয়েছেন, পরে তা বদলেছে কি-না তা জানা যায়নি। তাছাড়া অধিকাংশ অংশগ্রহণকারী ছিলেন শ্বেতাঙ্গ ও তুলনামূলকভাবে সুস্থ। ফলে ফলাফল সব জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নাও হতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “যদি কেউ আগে থেকেই অসুস্থ বা ভারসাম্যের সমস্যায় ভোগেন, তাদের হাঁটার প্রবণতা বাড়তে পারে। সেটিই আলৎঝাইমার’স বাড়তি ঝুঁকির ব্যাখ্যা হতে পারে।”
জেনেটিক ঝুঁকি ও সাইকেল চালনা
গবেষণায় আরও একটি বিষয় উঠে এসেছে— আলৎঝাইমার’স রোগের প্রধানত বংশগত ঝুঁকির উপাদান হল ‘এপিওই ই৪ (APOE ε4)’ জিন। দেখা গেছে, যাদের এই জিন নেই, তারা সাইকেল চালনা করলে স্মৃতিভ্রংশর ঝুঁকি ২৬ শতাংশ কমাতে পেরেছেন। আর যাদের এই জিন আছে, তাদের ক্ষেত্রেও ঝুঁকি ১২ শতাংশ কমেছে।
এর থেকে বোঝা যায়, সাইকেল চালনা বংশগত ঝুঁকি থাকা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও উপকারী।
যেভাবে সাইকেল চালানো শুরু করা যায়
ডা. ভার্ঘেস পরামর্শ দেন, যারা আগে নিয়মিত ব্যায়াম করেন নি, তারা চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করে সাইকেল চালানো শুরু করতে পারেন।
ডা. সিং বলেন, “শুরুতে ছোট ও নিরাপদ রাস্তা বেছে নিন। হেলমেট ও প্রতিফলিত পোশাক ব্যবহার করুন। রাতে চালালে আলো ব্যবহার করুন। আর সম্ভব হলে কারও সঙ্গে ভ্রমণ করুন।”
তিনি আরও বলেন, “সপ্তাহে দুয়েকবার সাইকেল চালালেও সুফল পাওয়া যায়। বাইরে যেতে না চাইলে ঘরেও ‘স্টেশনারি সাইক্লিং’ করতে পারেন।”
অন্যদিকে যারা হাঁটেন, তাদের উদ্দেশ্যে ডা. ভার্ঘেস বলেন, “প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটার চেষ্টা করুন, যাতে কথা বলতে কষ্ট হয়।”
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রাপ্তবয়স্কদের সপ্তাহে অন্তত ১৫০ থেকে ৩০০ মিনিট মাঝারি মাত্রার বা ৭৫ থেকে ১৫০ মিনিট তীব্র মাত্রার ব্যায়াম করা উচিত।
