“এমন এক জায়গায় সিএনজি নষ্ট হয়েছে যে নামারও উপায় নাই; আবার যানজটের কারণে বাসেও উঠতে পারব না, অন্য সিএনজিও আসে না,” বলেন এক নারী।
হতে সংগৃহিত
সকালের ৩ ঘণ্টার বৃষ্টিতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় তলিয়েছে রাস্তাঘাট; ইঞ্জিনে পানি ঢুকে যানবাহন হয়েছে বিকল। আর তাতে দেখা দিয়েছে যানজট, চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ঘর থেকে বের হওয়া মানুষ।
এর মধ্যে পুরান ঢাকায় এক জলাবদ্ধ সড়ক দিয়ে চলার সময় বিদ্যুতায়িত হয়ে সাইকেল আরোহী মারা গেছেন।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সোমবার ভোর ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ঢাকায় ৭১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরের সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি হতে পারে।
এদিন বেলা সাড়ে ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত মিরপুর ১০ নম্বর থেকে কাজীপাড়া হয়ে শেওড়াপাড়া পর্যন্ত সড়ক পানিতে তলিয়ে ছিল। বিশেষ করে আল হেলাল হাসপাতালের সামনে থেকে কাজীপাড়া মেট্রো সে্টশন পর্যন্ত পর্যন্ত সড়কের দুইপাশেই ছিল হাঁটু সমান পানি। এছাড়া পূর্ব কাজীপাড়া, উত্তর কাজীপাড়া, সেনপাড়ায় বিআরটিএর পেছনের গলিতে পানি জমে থাকতে দেখা গেছে।
বৃষ্টির কারণে সড়কের ওই অংশে বাসসহ কয়েকটি যানবাহন বিকল হয়ে পড়ে। এতে অন্যান্য যানবাহন চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। সড়কে তৈরি হয়েছে যানজট।
বেলা ১১টায় মিরপুর ১০ নম্বর থেকে কাজীপাড়া হয়ে শেওড়াপাড়া পর্যন্ত মিরপুরগামী যানবাহন আটকে ছিল। এ সময় বেশিরভাগ বাস থেকে যাত্রীরা নেমে পানিতে হেঁটে চলে যায়। একই অবস্থা দেখা যায় মিরপুর ১০ নম্বর থেকে কাজীপাড়া পর্যন্ত।

ঢাকায় সোমবার সকালে মুষলধারে বৃষ্টি ঝরলে ডুবে যায় নিউ মার্বেট এলাকার সড়ক। এর মধ্যে ইঞ্জিনে পানি ঢুকে অনেক যান বিকল হয়ে যায়।
আল হেলাল হাসপাতালের সামনের সড়কে একটি বিকল হওয়া সিএনজিচালিত অটোরিকশায় এক শিশুকে নিয়ে বসেছিলেন দুজন নারী।
তারা জানান, শিশুটিকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাচ্ছিলেন তারা। ১১ নম্বর থেকে অটোরিকশায় ওঠেন। ১০ নম্বরের পরে সড়কের পানিতে ইঞ্জিন ডুবে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। চালক অনেক চেষ্টা করেও আর তা চালু করতে পারেননি।
ওই শিশুর মা নাজমা সুলতানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এমন এক জায়গায় নষ্ট হয়েছে যে নামারও উপায় নাই।
“আবার যানজটের কারণে বাসেও উঠতে পারব না, অন্য সিএনজিও আসে না। খুব বিপদে পড়ে গেলাম।”
সোমবারের বৃষ্টিতে ঢাকার মতিঝিল, রাজারবাগ, গ্রিনরোড, পান্থপথ, ধানমন্ডি, বিজয় সরণি, মিরপুরের কালশী রোড, ১ নম্বর থেকে টেকনিক্যাল যাওয়ার সড়ক, বিমানবন্দর সড়কের বলাকার সামনের সড়ক, প্রগতি সরণির বসুন্ধরা গেইট, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, খিলগাঁও এবং দক্ষিণ বনশ্রীর বিভিন্ন সড়কেও পানি জমেছে। পানির কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী।

ঢাকার নিউ মার্কেট এলাকায় বৃষ্টিতে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। বাধ্য হয়ে চড়া ভাড়ায় রিকশায় উঠতে হচ্ছে কাজে বের হওয়া লোকজনকে।
মতিঝিলের গোপীবাগে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কাজী নাফিয়া রহমানের বাসা মিরপুরে। মেট্রোতে করে তিনি মতিঝিল পর্যন্ত আসেন। এরপর পড়েন ভোগান্তিতে।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে থাকায় মতিঝিল মেট্রো স্টেশন থেকে গোপীবাগ পর্যন্ত যেতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।
“রিকশা ছাড়া যাওয়ার উপায় নাই। আবার রিকশা পাওয়া যায় না, পেলেও ভাড়া চায় অনেক বেশি।”

জলাবদ্ধ সড়কে চলতে গিয়ে পানি ঢুকে বিকল হয়ে যায় এই অটোরিকশা। বাধ্য হয়ে টেনে সামনে যাওয়ার চেষ্টায় এক চালক।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ট্রাফিক, মিরপুর বিভাগ) উপ-কমিশনার গৌতম কুমার বিশ্বাস বেলা সাড়ে ১১টায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সোমবার ভোরের বৃষ্টিতে মিরপুরের বিভিন্ন সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। বিভিন্ন সড়কে গাড়ি বিকল হয়েছে, সড়কে গাছ পড়েছে। এত ওই এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
“কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, মিরপুর ১ নম্বরের সড়কে এখনও পানি জমে আছে। বিভিন্ন সড়কে প্রচুর যানবাহন বিকল হয়েছে। এখনও সড়কে চারটা বাস বিকল হয়ে পড়ে আছে। টেকনিক্যাল মোড়ে সড়কে গাছ পড়ে গেছে। এ কারণে এই এলাকায় এখনও বিভিন্ন সড়কে যানজট।”
মিরপুর ১১ নম্বরের মদিনা আবাসিক নগরে জলাবদ্ধতার চিত্র তুলে প্রতিকার চেয়ে ফেইসবুকে পোস্ট দিয়েছেন বেসরকারি চাকুরে আনোয়ার হোসেন। তিনি লিখেছেন, “প্যারিস রোড সংলগ্ন খালে থাকা সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করুন। খালটি খনন ও প্রশস্ত করার ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় এই জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়।”
ট্রাফিকের উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার মো. আনোয়ার সাঈদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সকালের বৃষ্টিতে বিমান বন্দরের সামনের সড়ক, কাওলা, আশকোনায় এলাকায় পানি জমেছিল। অফিস সময়ের আগের ওই জলাবদ্ধতায় সড়কে যানজট তৈরি হয়েছে।
“তবে এখন যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। আমি আসার পর থেকেই দেখছি বিমানবন্দরের সামনে বলাকা, ডমেস্টিক টার্মিনালের সামনে পানি জমে। এখানকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় বৃষ্টিতে পানি জমে যায়।”

মানিক মিয়া অ্যাভেনিউয়ে হাঁটারও পরিস্থিতি নেই।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন জানিয়েছে, সোমবারের বৃষ্টির ফলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার গ্রিন রোড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, শান্তিনগর, বেইলি রোড, কাকরাইল, পল্টন, সাত মসজিদ রোড, ধানমন্ডি এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। ওয়ার্ডভিত্তিক ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম কাজ করায় এসব এলাকার সড়কের পানি নেমে গেছে। তবে কিছু এলাকায় পানি সরতে সময় লাগবে।

বৃষ্টির পানিতে ডুবেছে গ্রিন রোড। চিকিৎসা নিতে আসা লোকজন পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে।
ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা রাসেল রহমান বলেন, “পানি নির্গমনের আউটলেট অংশ এবং খাল-নদীর অংশের পানির লেভেল প্রায় একই হওয়ার ফলে পানি নিষ্কাশনের ধীরগতি বিদ্যমান থাকায় কিছু এলাকার পানি নামতে আরও কয়েক ঘণ্টা সময় লাগতে পারে।
“এসব এলাকা থেকে অস্থায়ী পোর্টেবল পাম্পের মাধ্যমে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”