চাঁপাইনবাবগঞ্জের শ্রমিক নেতা বলেন, মঙ্গলবার বিকালে ঢাকার গাবতলী বাস স্ট্যান্ডে মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে বৈঠক আছে।

হতে সংগৃহিত
বেতন বৃদ্ধির দাবিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী-নাটোর থেকে ঢাকাগামী বাসের চালক-হেলপার ও সুপারভাইজাররা কর্মবিরতি করছেন। এতে দুইদিন ধরে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ঢাকা-সিলেট-চট্টগ্রামগামী যাত্রীরা।
সোমবার সকাল থেকে এ কর্মবিরতি শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ ঢাকা কোচ সমিতির সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম। তবে দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকলেও চলছে জেলার অভ্যন্তরীণ রুটের বাস চলাচল।
পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে তারা অল্প বেতনে চাকরি করছেন। বেতন বৃদ্ধির দাবিতে দফায় দফায় মালিকদের সঙ্গে বৈঠকের পরেও সমাধান হয়নি। তাই বাধ্য হয়েই এই কর্মবিরতিতে নেমেছেন তারা।
শ্রমিকরা জানান, একটি যাত্রীবাহী বাস রাজশাহী থেকে ঢাকা এবং ঢাকা থেকে রাজশাহী চলাচল করলে চালককে এক হাজার ৩০০ টাকা, সুপার ভাইজারকে ৫৭০ টাকা ও চালকের সহকারীকে ৫২০ টাকা প্রদান করেন পরিবহন মালিকরা।

তাদের দাবি, চালকের বেতন অন্তত ২ হাজার টাকা এবং সুপার ভাইজার ও চালকের সহকারীর বেতন ৫০০ টাকা বৃদ্ধি করতে হবে।
নাটোরের হানিফ পরিবহনের শ্রমিক মো. সাদ্দাম হোসেন বলেন, “আমাদের কর্মবিরতি বেতন বৃদ্ধির জন্য। ১৫ বছর আগের যে বেতন ছিল, সেই বেতনই এখনো দিচ্ছে কোম্পানিগুলো। “
“এক ট্রিপে কখনো ২৪ ঘণ্টা, কখনও ৩০ ঘণ্টাও লেগে যায়। এক ট্রিপ শেষে আবার একদিন বসে থাকতে হয়। এভাবে মাসে আমরা ১১ থেকে ১২টা ট্রিপ পাই।”
তিনি বলেন, “এখন সবকিছুরই দাম বেশি। আমরা যে টাকা বেতন পাই, তা দিয়ে আমাদের সংসার চলতেছে না। আমাদের মানুষদের নিরাপদে এতদূরে পৌছায় দেই কিন্তু ন্যায্য বেতনটা পাই না।”
ন্যাশনাল ট্রাভেলসের কর্মী মামনুর রশীদ বলেন, “আমাদের পূর্বের বেতন পরিবর্তন করে, নতুন বেতন কাঠামো করতে হবে। একটা যোক্তিক বেতন বিবেচনা করে নির্ধারণ করতে হবে, না হলে আমাদের চলা অসম্ভব।

“এছাড়া আমাদের যে খোরাকি ৭০ টাকা, সেটাও ১০০ টাকা করতে হবে। যতদিন পর্যন্ত আমাদের দাবি না মানা হবে, এই আন্দোলন চলবে।”
দেশ ট্রাভেলস গাড়ির ড্রাইভার মো. আসাদ বলেন, এর আগে মালিকপক্ষ তিনটা ডেট নিছে। কিন্তু রেজাল্ট দেয়নি। এক বৈঠকে ২১ তারিখের মধ্যে আমাদের বেতন বাড়ানোর কথা বলেছিলো মালিকপক্ষ, কিন্তু তারা করেনি। উনারাতো ৬ ঘণ্টা থেকে ১০ মিনিট বাকি থাকলেও খোরাকি দেয় না, এটা আমাদের দিতে হবে।
এদিকে, অনির্দিষ্টকালের জন্য দূরপাল্লার গাড়িগুলো হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। বন্ধ রাখা হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ-নাটোরের বাসস্ট্যান্ডের অধিকাংশ কাউন্টার।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষায় থাকা যাত্রী মোহা রেজাউল করিম বলেন, “বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখি বাস চলাচল বন্ধ। জরুরি কাজে ঢাকায় যেতে হবে। কি করবো ভেবে পাচ্ছি না।”
আরেক যাত্রী প্রশান্ত সাহা জানান, বাস বন্ধ থাকায় ফিরে যাচ্ছেন তিনি। তবে শ্রমিকদের দাবি সঠিক বলেও মনে করেন তিনি।
নাটোরের হরিশপুর টার্মিনালে অপেক্ষা করা চট্টগ্রামের যাত্রী মো. নাহিদ হাসান বলেন, “আমরা জানতাম না বাস বন্ধ আছে। টার্মিনালে এসে বিপদে পড়ে গেছি। লোকাল গাড়িতেতো এত পথ যাওয়া যায় না।”

নাটোরে চিকিৎসা নিতে আসা টাঙ্গাইলের রেজওয়ানা আক্তার বলেন, “সুপার কোচগুলো বন্ধ থাকায় আমরা টিকিট পাচ্ছি না। বাচ্চাদের নিয়ে ছোট গাড়িতে এত দূরে যাতায়াত খুব কঠিন। নাটোরে এসে বিপদেই পড়ে গেছি।”
এছাড়া বেতনাদি ঠিকভাবে দেওয়ায় একতা পরিবহনের বাস স্বাভাববিকভাবে চলাচল করছে বলে জানিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-নাটোরের শ্রমিকেরা।
একতা পরিবহনের মাস্টার নাঈম বলেন, অন্যান্য ঢাকাগাসী বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও একতা পরিবহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রায় ১৫০টি ঢাকাগামী বাস চলাচল করে।
এদিকে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটগামী দূরপাল্লার পরিবহনগুলোর মালিকের বাড়ি নাটোর-চাপাইনবাবগঞ্জে না থাকায়, এ ব্যাপারে তাদের বক্তব্য তাৎক্ষণিক জানা সম্ভব হয়নি। জেলায় প্রতিষ্ঠানগুলির দেখভাল করা কর্মকর্তাদের কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ট্রাক ও বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আনারুল ইসলাম আনার বলছেন, “মঙ্গলবার বিকাল ৩ টায় ঢাকার গাবতলী বাস স্ট্যান্ডে শ্রমিক ইঊনিয়নের অফিসে মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে বৈঠক আছে। আশা করা যায় তার থেকে একটা সমাধানে পৌছানো যাবে।”