রোদে ল্যাপটপ ব্যবহার না করা, গরম গাড়ির ভেতরে না রাখা আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোলে না রেখে টেবিলে ব্যবহার করা।
হতে সংগৃহীত
প্রতিদিনের জীবনে ল্যাপটপ এখন অপরিহার্য সঙ্গী, কিন্তু কাজের মাধ্যেই দরকারি এ যন্ত্রটি হঠাৎ গরম হয়ে যাওয়ার মতো দুর্ভোগ অনেকেরই হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এমন হয়? আবার এ সমস্যার সমাধানই বা কীভাবে করা যায়?
ল্যাপটপ অতিরিক্ত গরম হওয়ার বিষয়ে প্রথম বড় ধরনের আলোচনার জন্ম হয় ২০০৬ সালে। সে সময় ডেল, সনি, এসারসহ বড় বড় কোম্পানিকে বিপুল সংখ্যক ল্যাপটপ ফিরিয়ে নিতে হয়েছিল কারণ ত্রুটিপূর্ণ ব্যাটারি আগুন লাগার মতো দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছিল।
প্রযুক্তি সাইট ‘হাও স্টাফ ওয়ার্কস’ লিখেছে, তবে ল্যাপটপ গরম হওয়ার সাধারণ সমস্যার মূল কারণ ভিন্ন। প্রচণ্ড তাপে যন্ত্রাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এমনকি অনেক ব্যবহারকারী দগ্ধও হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় হার্ড ড্রাইভে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাটারির ত্রুটি না থাকলেও ল্যাপটপ গরম হওয়া স্বাভাবিক বিষয়। আসলে সব ইলেকট্রনিক ডিভাইসই কিছুক্ষণ চালানোর পর গরম হয়। প্রসেসর যখন দ্রুত কাজ করে তত ভেতরে তাপ উৎপন্ন হয়। সমস্যা হয় তখনই, যখন সেই তাপ বের হয়ে যেতে পারে না।
ডেস্কটপের তুলনায় ল্যাপটপে এই সমস্যা বেশি। ছোট আকারের কারণে ভেতরের যন্ত্রাংশগুলো ঘনভাবে গুঁজে রাখা হয় ফলে তাপ ছড়ানোর জায়গা কম থাকে। তাছাড়া আধুনিক ল্যাপটপে শক্তিশালী প্রসেসর ব্যবহার করা হচ্ছে, আর অপারেটিং সিস্টেমও বেশি বিদ্যুত দাবি করছে। এর ফলে কেসিংয়ের ভেতরে তাপ জমে যায়।
প্রস্তুতকারকরা অবশ্য ফ্যান, হিটসিংক আর এয়ার ভেন্ট দিয়ে ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করেন। কিন্তু সবসময় তা যথেষ্ট হয় না। অনেক সময় ফ্যান নষ্ট হয়ে যায় আবার ব্যবহারকারীর ভুলেও তাপ বেড়ে যায়।
কীভাবে ঠান্ডা রাখবেন ল্যাপটপ?
ফ্যান পরীক্ষা করুন: ফ্যান ঠিকভাবে কাজ করছে কি না, তা সফটওয়্যারের মাধ্যমে পরীক্ষা করা যায়। প্রস্তুতকারক কোম্পানির ওয়েবসাইটে সাধারণত ডায়াগনস্টিক টুল পাওয়া যায়।
এয়ার ভেন্ট পরিষ্কার রাখুন: ধুলো জমে ভেন্ট বন্ধ হয়ে গেলে বাতাস চলাচল কমে যায়। কমপ্রেসড এয়ার বা হালকা ভেজা কাপড় দিয়ে সহজেই পরিষ্কার করা যায়।
বায়োস আপডেট করুন: কখনো কখনো নতুন বায়োস ভার্সনে কুলিং সিস্টেম আরও কার্যকর হয়। তবে এই প্রক্রিয়া জটিল, তাই বিশেষজ্ঞের পরামর্শে করা ভালো।
এ ছাড়া ব্যবহার অভ্যাসেও সচেতন হতে হবে। রোদে বা হিটার-রেডিয়েটরের কাছে ল্যাপটপ ব্যবহার না করা, গরম গাড়ির ভেতরে না রাখা আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোলে না রেখে টেবিলে ব্যবহার করা। চাইলে বাহ্যিক কুলিং প্যাডও ব্যবহার করা যায়।
ল্যাপটপ ঠান্ডা রাখার জন্য অতিরিক্ত সরঞ্জাম
ল্যাপটপের কুলিং সিস্টেম ঠিকভাবে কাজ করলেও অতিরিক্ত কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যায়। বিশেষ করে নরম জায়গায় ল্যাপটপ রাখলে ভেন্ট দিয়ে বাতাস চলাচল বাধাগ্রস্ত হয় এবং তাপ আটকে যায়। টেবিলের ওপর সরাসরি রাখলেও তাপ জমে যেতে পারে।
এ সমস্যার সমাধানে একটি জনপ্রিয় উপায় হলো ল্যাপটপ স্ট্যান্ড। এটি ল্যাপটপ ও যেখানে রাখা হয় তার মাঝে দূরত্ব তৈরি করে, ফলে নিচে ফাঁকা জায়গায় তাপ সহজে বের হতে পারে এবং ভেন্ট দিয়ে বাতাস চলাচল খোলা থাকে। কিছু স্ট্যান্ড অ্যালুমিনিয়ামের মতো বিশেষ উপাদানে তৈরি হয় যা হিটসিংক হিসেবে কাজ করে এবং ভেতরের তাপ বের করে আনে।
আরেকটি সমাধান হলো ল্যাপটপ প্যাড। এগুলো সক্রিয়ভাবে তাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কখনো এটি ইনসুলেটিং প্যাড হয় যা তাপ আটকে ব্যবহারকারীর কোল সুরক্ষিত রাখে। আবার কখনো মোটা প্যাডের ভেতরে ফ্যান বসানো থাকে, যা তাপ টেনে বের করে ছড়িয়ে দেয়।
এ ধরনের কুলিং সরঞ্জাম অনলাইন বা ইলেকট্রনিক্সের দোকানে সহজেই পাওয়া যায়। এমনকি ছোট ছিদ্রযুক্ত ক্যাম্পিং টেবিল বা কুকিজ ঠান্ডা করার বড় বেকিং র্যাকও বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব।
তবে ল্যাপটপের তাপমাত্রা বয়স, পরিবেশ ও পাওয়ার ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। তাই কার্যকর কুলিং সিস্টেম থাকা সত্ত্বেও হিট-মনিটরিং সফটওয়্যার ব্যবহার করলে তাপমাত্রার ওঠানামা সম্পর্কে সচেতন থাকা যায় এবং কোন পরিস্থিতিতে তাপ বাড়ছে তা বোঝা সহজ হয়।