বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন থেকে ভোটের ফল ঘোষণা করা হবে।

ডাকসু ভোট শেষে ফলের অপেক্ষা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

হতে সংগৃহীত

 

জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী ভিন্ন এক বাস্তবতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলো উৎসব ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে। প্রার্থীরা পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করলেও ভোটের বড় কোনো অনিয়মের খবর পাওয়া যায়নি।

প্রতিনিধি নির্বাচনে ছয় পৃষ্ঠার ওএমআর শিটের ব্যালট পেপারে রায় দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আটটি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এ ভোটের ব্যালট গণনা করা হবে ১৪টি মেশিনে। এগুলোর কোনোটির স্ক্যানিং স্পিড- ঘণ্টায় ৫০০০, কোনোটির ৮০০০ পাতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন থেকে ভোটের ফল ঘোষণা করা হবে।

মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসের আটটি কেন্দ্রের ৮১০টি বুথে বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ করা হয়। বিকাল ৪টার মধ্যে যারা কেন্দ্রে প্রবেশ করেছেন, নির্ধারিত সময় শেষ হলেও তাদের ভোটগ্রহণ করা হবে।

এমন এক সময়ে এই নির্বাচন হলো, যখন ক্যাম্পাসে কোনো ছাত্র সংগঠনের একক আধিপত্য নেই; ক্ষমতাসীন দলের সংগঠনের দাপটও নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন পরিস্থিতি অনেকটাই নিজরবিহীন।

এ বাস্তবতায় আয়োজিত ডাকসু ভোট সাড়ে পাঁচ মাস পর হতে যাওয়া জাতীয় নির্বাচনের বিষয়েও ধারণা দেবে বলে মনে করছেন লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ।

আগামী ফেব্রুয়ারিতে যে সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে, তার আগে এ ডাকসু নির্বাচনকে ‘মহড়া’ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই নির্বাচনে তো বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠনের প্যানেলও আছে। তাই এ নির্বাচনের ফলাফলের মধ্য দিয়ে একটা ধারণাও উঠে আসবে।”

  • নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন।
  • পাঁচ ছাত্রী হলে ১৮ হাজার ৯৫৯ জন; ১৩ ছাত্র হলে এই সংখ্যা ২০ হাজার ৯১৫
  • জন ভোটার।
  • ডাকসুতে ২৮টি পদের বিপরীতে প্রার্থী মোট ৪৭১ জন।
  • প্রতি হল সংসদে ১৩টি করে মোট পদের সংখ্যা ২৩৪টি।
  • ১৮টি হলে এসব পদে ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন ১ হাজার ৩৫ জন প্রার্থী।

মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, “ডাকসু নির্বাচন তো কয়েক বছর পরে হচ্ছে। এজন্য সবার আগ্রহটাও বেশি। দ্বিতীয়ত চব্বিশের অভ্যুথানের পর এবার একটু ভিন্ন পরিস্থিতিতে ডাকসু নির্বাচন হচ্ছে। ফলে কী হয়- না হয় তা নিয়ে অনেকের কৌতূহল আছে।

“জাতীয় নির্বাচনে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থা কেমন। এসব জায়গা থেকে চিন্তা করলে ডাকসু নির্বাচন আমাদের রাজনীতিতেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনের স্বচ্ছতা-নিরপেক্ষতা বজায় থাকাটাও জরুরি।”

ডাকসুতে ২৮টি পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন মোট ৪৭১ জন প্রার্থী। অন্তত ১০টি প্যানেলের বাইরে স্বতন্ত্র হিসেবেও লড়ছেন অনেকে। আর ১৩ জন করে ২৩৪ নেতা পাচ্ছে পাচ্ছে ১৮টি হল সংসদ। ডাকসু মনোনীত পাঁচ শিক্ষার্থী প্রতিনিধি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিনেটের সদস্য হন। ছয় বছর পর অনুষ্ঠিত ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ভোটার সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার।

১৯৭৩ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুসারে, প্রতি বছর ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। শতবর্ষী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এখন পর্যন্ত ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে ৩৮ বার।

এর মধ্যে ২৯ বারই হয়েছে ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলের ৫০ বছরে। স্বাধীন দেশে ৫৫ বছরে নবমবারের মতো মঙ্গলবার ভোট দিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

‘আচরণবিধি লঙ্ঘনের’ পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

ডাকসু নির্বাচনে ‘আচরণবিধি লঙ্ঘনের’ পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন অন্তত চারটি প্যানেলের ভিপি ও জিএস প্রার্থীরা।

মঙ্গলবার বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে টিএসসি কেন্দ্রের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংসদ-বাগছাস সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদের এবং জিএস প্রার্থী আবু বাকের মজুমদার অভিযোগ করেন, নির্বাচনে ‘দলীয় প্রভাব’ তৈরি করে ছাত্রদল ও শিবিরের প্রার্থীরা নির্বাচনী ‘আচরণবিধি লঙ্ঘন’ করলেও প্রশাসন ‘নীরব’।

পাশাপাশি নির্বাচনে ‘ভোট কারচুপি’র মত ঘটনাও ঘটছে বলে তাদের অভিযোগ।

আবু বাকের মজুমদার বলেছেন, তাদের এই অভিযোগ নির্বাচন কমিশনকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে।

কিছুক্ষণ পর টিএসসি কেন্দ্রে সামনে আসেন ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম আবিদ। তিনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ মন্তব্য করে পালটা অভিযোগ করেন।

আবিদ বলেন, “টিএসসি কেন্দ্রে রোকেয়া হলের এক শিক্ষার্থী ভোট দিতে গিয়ে দেখেন, তার ভোট আগেই সাদিক কায়েম ও এস এম ফরহাদকে দেওয়া হয়ে গেছে।”

একই অভিযোগ করেছেন বাগছাস প্যানেলের আব্দুল কাদের ও আবু বাকেরও।

আব্দুল কাদের বলেন, “একুশে হলে একজন পোলিং অফিসার ভোট দিচ্ছেন। ধরে পড়ে যাওয়ায় তাকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে। রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীর ভোট আগেই দেওয়া হয়ে গেছে।

“ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল কেন্দ্রে বিএনপিপন্থি শিক্ষক সমিতি-সাদা দল ভেতরে প্রবেশ করেছেন। তখন কাউকে ভেতরে যেতে দেওয়া হয়নি।”

কোন প্যানেলে প্রার্থী কারা
ছাত্র সংগঠন প্যানেল ভিপি জিএস এজিএস
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আবিদুল ইসলাম খান শেখ তানভীর বারী হামিম তানভীর আল হাদী মায়েদ
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট সাদিক কায়েম এসএম ফরহাদ মহিউদ্দিন খান
ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, ছাত্র কাউন্সিল, ছাত্র যুব আন্দোলন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও গণতান্ত্রিক ছাত্র মঞ্চ প্রতিরোধ পর্ষদ শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি

(স্বতন্ত্র)

মেঘমল্লার বসু

(বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন)

মো. জাবির আহমেদ জুবেল

(বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী)

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ)

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ)

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ-বিসিএল

অপরাজেয় ৭১–অদম্য ২৪ মো. নাইম হাসান

বিসিএল

এনামুল হাসান অয়ন

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ)

অদিতি ইসলাম

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ)

স্বতন্ত্র স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য উমামা ফাতেমা আল সাদী ভূঁইয়া জাহিদ আহমেদ
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ আব্দুল কাদের আবু বাকের মজুমদার আশরেফা খাতুন
বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ ডাকসু ফর চেঞ্জ বিন ইয়ামিন মোল্লা সাবিনা ইয়াসমিন রাকিবুল ইসলাম
সমন্বিত শিক্ষার্থী সংসদ জালালুদ্দিন মুহাম্মদ খালিদ

(স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্রসংসদ)

মো. মাহিন সরকার

এনসিপি থেকে বহিষ্কৃত

(ভোট থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন)

শারমিন এ্যানি

(লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রছাত্রী কল্যাণ সমিতি)

ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ ইয়াসিন আরাফাত খায়রুল আহসান মারযান সাইফ মোহাম্মাদ আলাউদ্দিন
(সমাজসেবা সম্পাদক পদপ্রার্থী)

এ বি জুবায়ের (সাবেক মুখ্য সমন্বয়ক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন)

(সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক পদপ্রার্থী)

মোসাদ্দেক আলী ইবনে মুহাম্মদ

(জুলাই ঐক্য)

সদস্য পদে লড়ছেন আশিক খান ও আব্দুর রহমান আল ফাহাদ

‘ভোট কারচুপি’র অভিযোগ করেন ছাত্রশিবিরের জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদও।

তিনি বলেন, “আজকে সকাল থেকে অনেক নাটক দেখছি। কার্জন হলে একজন নির্বাচন অফিসারকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে। সেই ঘটনা আড়াল করতে টিএসসি কেন্দ্রে আরেক নাটক সাজানো হয়েছে।

“একজন ছাত্রীর ভোট আগেই দিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে কর্মকর্তারা এসবের সঙ্গে যুক্ত। তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।”

ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলে সাদা দলের শিক্ষকরা কেন প্রবেশ করেছেন, সেই প্রশ্নও তোলেন ফরহাদ।

অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্যানেল থেকে ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা এক ফেইসবুক পোস্টে দুটি লিফলেট শেয়ার করে লিখেছেন, “ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলের ভোটকেন্দ্রের বাইরে এই লিফলেটগুলা দেওয়া হচ্ছে। যার এক প্রান্তে ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থীদের তালিকা আর অপর প্রান্তে হলের স্বতন্ত্র পরিচয়ে নির্বাচন করা প্রার্থীদের তালিকা। গুঞ্জন শোনা গেছে এই লিস্টটি পোলিং বুথের ডেস্কের নিচে ছড়ানো আছে।”