কংগ্রেসের মত আওয়ামী লীগও একটি ‘পরিবারকেন্দ্রিক’ দল। ফলে কংগ্রেসের আদলে আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্বের অন্বেষণে ‘অবাক হওয়ার কিছু’ দেখেন না বিনোদ শর্মা।
হতে সংগৃহীত
অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়ে থাকা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে নির্দিষ্ট দায়িত্বে দিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বে আনার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছেন বলে খবর দিয়েছে বিবিসি বাংলা।
এ সংবাদমাধ্যমের দিল্লি প্রতিবেদক শুভজ্যোতি ঘোষ এক প্রতিবেদনে লিখেছেন, ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস তাদের দলীয় নেতৃত্বে গান্ধী পরিবারের এ প্রজন্মের দুই প্রতিনিধি রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে নিয়ে যে ‘মডেল’ অনুসরণ করছে, আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেও ঠিক সেটাই করতে চাইছেন শেখ হাসিনা।
আশির দশকের শুরু থেকে একটানা চুয়াল্লিশ বছর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে রয়েছেন শেখ হাসিনা। তার অনুপস্থিতিতে কে বা কারা দলের হাল ধরবেন, সেই উত্তরাধিকার পরিকল্পনা নিয়ে কখনোই নিজের ভাবনা তিনি প্রকাশ করেননি। শেখ পরিবারের অন্য কোনো সদস্য বা দলের শীর্ষ পর্যায়ের কোনো নেতাও কখনো এ নিয়ে কথা বলেননি।
প্রবল জনরোষের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর গত এক বছর ধরে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিল্লির এক ‘সেইফ হাউজে’ বসবাস করছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী।

বিবিসি বাংলা লিখেছে, পরিবর্তিত বাস্তবতায় শেখ হাসিনা তার যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ছেলে জয় এবং ভারতে থাকা মেয়ে পুতুলকেই দলের নেতৃত্বে আনার পরিকল্পনা করেছেন। দিল্লিতে থাকা পুতুল ইতোমধ্যে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন। পাশাপাশি শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববিরও একটি ভূমিকা থাকবে।
তবে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, এ বিষয়টি নিয়ে দলের ভেতরে ‘কোনো আলোচনাই হয়নি’। দেশে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করাই’ তাদের মূল লক্ষ্য।
জুলাই অভ্যুত্থানে শত শত মানুষকে হত্যা এবং দমন পীড়নের অভিযোগে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিচার চলছে। এ আদালতে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের জন্যও আইনি কাঠামো তৈরি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
বিচার শেষ না পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সব ধরনের কর্মকাণ্ডে আরোপ করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। নির্বাচন কমিশন দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নিবন্ধনও স্থগিত করেছে, ফলে আপাতত ভোটে অংশ নেওয়ার সুযোগ দলটির নেই।
এমন পরিস্থিতির মধ্যেই দিল্লিতে বসে শেখ হাসিনার ‘সাকসেশন প্ল্যান’ গোছানোর খবর দিল বিবিসি বাংলা।
দিল্লির রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিনোদ শর্মা বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, বিজেপির সঙ্গে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের একটি রসায়ন প্রকাশ্য হলেও কংগ্রেসের সঙ্গে দলটির সম্পর্ক বহু পুরনো। শেখ পরিবারের সঙ্গে গান্ধী পরিবারের সম্পর্কও অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ।
কংগ্রেসের মত আওয়ামী লীগও একটি ‘পরিবারকেন্দ্রিক’ দল। ফলে কংগ্রেসের আদলেই আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্বের অন্বেষণে ‘অবাক হওয়ার কিছু’ দেখেন না বিনোদ শর্মা।
পর্যবেক্ষকরা যা বলছেন
বিবিসি বাংলা লিখেছে, অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের মত এত বড় একটি দলের সংগঠন ‘যে কার্যত তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়েছিল’,তার বড় কারণ, শেখ হাসিনা উপস্থিত না থাকলে দলের তৃণমূল স্তরের নেতা-কর্মীরা কার কাছ থেকে নির্দেশনা পাবেন, তা নিয়ে ‘চূড়ান্ত অস্পষ্টতা’।
দিল্লিতে শেখ হাসিনা আছেন নিরাপত্তার ঘেরাটোপের মধ্যে। তার গতিবিধি এবং দলের নেতা কর্মীদের সঙ্গে মেলামেশা– সব ব্যাপারেই ভারত সরকারের কড়াকড়ি আছে।
সায়মা ওয়াজেদ পুতুলও এখন মায়ের মত দিল্লিতে আছেন। সজীব ওয়াজেদ জয় আছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায়। দলের বেশির ভাগ গুরুত্বপূর্ণ নেতা কলকাতায় আছেন।
বিবিসি বাংলা লিখেছে, এভাবেই একটি ত্রিভুজাকার যৌথ নেতৃত্বর মধ্যে দিয়ে এ মুহূর্তে দলটির দৈনন্দিন কাজকর্ম চলছে। ছেলেমেয়েকে অঘোষিতভাবে দলের নেতৃত্বে একেবারে সামনের সারিতে নিয়ে আসার পাশাপাশি আওয়ামী লীগ পরিচালনার ক্ষেত্রেও বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছেন সভাপতি শেখ হাসিনা।
কাগজে-কলমে এখনও আওয়ামী লগের সাধারণ সম্পাদকের পদে থাকা ওবায়দুল কাদের দশ মাস আগে ভারতে পাড়ি জমালেও এখনও দলীয় সভাপতির দেখাই পাননি বলে বিবিসি বাংলা নিশ্চিত হতে পেরেছে।
তাদের প্রতিবেদন বলছে, শেখ হাসিনা বর্তমানে বেশি ভরসা রাখছেন দলের তিন নেতার ওপর, যারা প্রত্যেকেই আপাতত কলকাতায় আছেন। তারা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ঢাকা ৮ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম এবং আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক এমপি জাহাঙ্গীর কবির নানক।
আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে বিবিসি বাংলা জেনেছে, শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতে তাদের সশরীরে দেখাসাক্ষাৎ হয়েছে। তবে আপাতত তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা ও অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করার কাজটি করছেন পুতুল।
অন্য দিকে জয়ের নেতৃত্বে আমেরিকায় আরেকটি টিম কাজ করছে দলের অনুকূলে ‘ন্যারেটিভ নির্মাণ’ (বয়ান তৈরি) এবং বিদেশের সংবাদমাধ্যমে আওয়ামী লীগের বক্তব্য তুলে ধরতে।

জয়-পুতুলের ভূমিকা
এ বছর জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) আঞ্চলিক পরিচালকের পদ থেকে ‘অনির্দিষ্টকালের ছুটিতে’ পাঠানো হয়। এখন পুতুল রাজনীতিতে ‘সক্রিয় হচ্ছেন’ বলে দাবি করা হয়েছে বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে।
তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একই শহরে থাকায় শেখ হাসিনাকে ‘সরাসরি সাহায্য’ করতে পারছেন পুতুল। অনলাইনে দেওয়া ভাষণের খসড়া তৈরি, কর্মসূচি ঠিক করতেও পুতুলকে পাশে পাচ্ছেন শেখ হাসিনা।
এছাড়া দর্শনার্থীদের সঙ্গে শেখ হাসিনার সরাসরি দেখা করার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ থাকায়, সে কাজটিও অনেকটা বর্তেছে পুতুলের উপরে। আওয়মী লীগ বলছে, গেল দুই মাসে মায়ে হয়ে বেশ কয়েকটি বৈঠক করেছেন তিনি।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ৫ অগাস্টের পর ঘরঘন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সোশাল মিডিয়ায় শেখ পরিবারের অবস্থান নিয়ে কথা বলেছেন বিভিন্ন সময়ে।

বিবিসি বাংলা লিখেছে, শেখ হাসিনা এখন ধীরে ধীরে অনেক দায়িত্বই ছেলেমেয়ের ওপরে ছেড়ে দিয়েছেন বা দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
আওয়ামী লীগ কী বলছে?
শেখ হাসিনার এই তথাকথিত ‘সাকসেশন প্ল্যান’ নিয়ে ভারতে ও ভারতের বাইরে অবস্থানরত বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতার সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি বাংলা।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, তারা অনেকেই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ‘রাজীব গান্ধী-সোনিয়া গান্ধীর ছেলেমেয়ে রাহুল-প্রিয়াঙ্কা মডেল’ অনুসরণ করার বিষয়টি নিয়ে অবহিত আছেন।
তবে সাবেক প্রতিমন্ত্রী আরাফাত বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, “সত্যি কথা বলতে, আপনি যে সাকসেশন প্ল্যানের কথা বলছেন, সেটা এখন আমাদের অগ্রাধিকারের মধ্যেই পড়ে না। কে কী পদ পদবী পেলেন, সেটা এখন ভাবারই সময় নয়।
“দলের মধ্যেও আমরা এটা নিয়ে এখন কথাবার্তা বলছি না। আপনারা জানেন, আমাদের এখন প্রধান লক্ষ্য হল বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা, সেই লক্ষ্যেই সব চেষ্টা নিয়োজিত করা হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “তবে এটুকু বলতে পারি, সভানেত্রীর পরিবারের সব সদস্য যেমন, তেমনি দলের সর্বস্তরের নেতা কর্মী যে যেখানে আছেন সবাই এই একটা লক্ষ্যেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছেন।”
পুতুল এখন কেন রাজনীতিতে
২০২৩ সালের নভেম্বরে ভারতের নয়াদিল্লিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক কমিটির ৭৬তম অধিবেশনে সংস্থাটির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক নির্বাচিত হন পুতুল। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে এ দায়িত্ব নেন। দায়িত্বের মেয়াদ পাঁচ বছর হওয়ায়, ২০২৯ শুরু পর্যন্ত তার ওই পদে থাকার কথা ছিল।
স্বাস্থ্য খাতের সাংবাদিকদের নেটওয়ার্ক-হেলথ পলিসি ওয়াচ জানিয়েছিল, আঞ্চলিক পরিচালকের এ পদ থেকে পুতুলকে ১১ জুলাই (শুক্রবার) ‘অনির্দিষ্টকালের ছুটিতে পাঠানো’ হয়েছে।
অটিজম নিয়ে কাজ করেন-এমন পরিচিতি পাওয়া পুতুলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দুটি মামলা করার পর তাকে ছুটি পাঠানোর খবর সামনে আসে।

হেলথ পলিসি ওয়াচ বলছে, এক অভ্যন্তরীণ ই-মেইলে পুতুলকে ছুটিতে পাঠানোর কথা জানিয়েছিলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়াসুস। ওই মেইলে তিনি বলেছেন, সায়মা ওয়াজেদ ছুটিতে থাকবেন। তার জায়গায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সংস্থার সহকারী মহাপরিচালক ক্যাথরিনা বেম।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের দপ্তর ভারতের দিল্লিতে। সংস্থাটির সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারকে এই কার্যালয় হয়েই যোগাযোগ করতে হয়।
দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে পুতুল সেখানেই থাকছেন। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে তার মা শেখ হাসিনাও আছেন দিল্লিতে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে দুদকের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা পুতুলের নিয়োগের বিষয়টি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এর আগে গত অক্টোবরে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে বলা হয়, তারা পুতুলকে বাদ দিয়ে সংস্থাটির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে চায়। সেজন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে একটি চিঠিও দেওয়া হয়।
বিবিসি বাংলা বলছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে ছুটিতে পাঠানোর পর শেখ হাসিনার মেয়ের হাতে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়া ছাড়া বিকল্প ছিল না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়াসু যে অভ্যন্তরীণ ই-মেইলে তার কর্মীদের পুতুলকে ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন, সেটির একটি প্রতিলিপি দেখার কথা লিখেছেন বিবিসি বাংলার প্রতিবেদক শুভজ্যোতি ঘোষ।
সেই ই-মেইলের বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে, পুতুল ওই পদে থাকলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার যে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছিল এবং ওই পদে তার নির্বাচন নিয়ে যে প্রশ্ন তুলেছিল, সেটা বিবেচনায় নিয়েই তাকে ছুটিতে পাঠানো হয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের মনোভাবের ‘অপ্রত্যাশিত কোনো পরিবর্তন’ না হলে এই ছুটি থেকে পুতুলকে কাজে ফেরানোর যে কোনো সম্ভাবনা নেই, সেটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সূত্র থেকে ‘নিশ্চিত হওয়ার’ কথা লিখেছে বিবিসি বাংলা।
অথচ গত বছর ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পরপরও এক টুইটে পুতুল লিখেছিলেন, তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাবেন।
গত মাসে পুতুল তিনি নিজের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে ‘রাজনৈতিক পোস্ট’ করা শুরু করেছেন। সেগুলো ছিল তার নিজস্ব কিছু মন্তব্যসহ খালাতো বোন টিউলিপ সিদ্দিক এবং বড় ভাই সজীব ওয়াজেদের করা পোস্টের পাল্টা টুইট।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পদে থাকাকালে পুতুলকে রাজনৈতিক মন্তব্য করা থেকে দূরে থাকতে হত। ফলে তার এখনকার পোস্ট থেকেও অনেকে ধারণা করছেন, ছুটিতে যেতে বাধ্য হওয়ায় তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছেন।
কংগ্রেসে ‘রাহুল-প্রিয়াঙ্কা মডেল’ কী?
বয়সজনিত কারণে ও শারীরিক অসুস্থতার জন্য সোনিয়া গান্ধী যতই সক্রিয় রাজনীতি থেকে আড়ালে চলে যাচ্ছেন, ততই কংগ্রেসের হাল ধরছেন তার ছেলেমেয়ে, রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।
সোনিয়া গান্ধী এখনও রাজ্যসভার এমপি। পার্লামেন্টে নিয়মিতই যান, বিরোধী জোটের বৈঠকেও তাকে দেখা যায়।
কিন্তু দলের গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন, ধর্না বা সংবাদ সম্মেলনে এখন প্রধান মুখ রাহুল গান্ধী। বোন প্রিয়াঙ্কা রয়েছেন তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগীর ভূমিকায়। তবে ভাইকে ছাপিয়ে যাওয়ার চেষ্টা তার মধ্যে দেখা যায় না।

গত বছর ভারতের সাধারণ নির্বাচনে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী নিজে কোনো আসন থেকে না লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যদিও দলের ভেতরে তার প্রার্থী হওয়ার দাবি ছিল।
সে সময় এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “এটা রাহুল গান্ধীর নির্বাচন। এই লাইমলাইট ওর ওপর থেকে এক চুলও সরে যাক, এটা আমি কখনোই চাইব না।”
সেই নির্বাচনে রাহুল গান্ধী দুটি আসনেই জিতলে পরে তার ছেড়ে দেওয়া কেরালার ওয়েনাড থেকে উপনির্বাচনে জিতে লোকসভায় আসেন প্রিয়াঙ্কা। সেখানে বিরোধী দলীয় নেতার আসনে রাহুলই আছেন, প্রিয়াঙ্কা দলের একজন সাধারণ ‘ফার্স্ট টাইম এমপি’।

অথচ বড় ভাইয়ের অনেক আগেই প্রিয়াঙ্কা রাজনীতিতে এসেছেন। সেই ১৯৯৯ সালে তিনি উত্তরপ্রদেশে মায়ের হয়ে নির্বাচনি প্রচারে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু নির্বাচন শেষে আবার তিনি প্রকাশ্য রাজনীতি থেকে দূরে সরে যেতেন।
রাহুল গান্ধী রাজনীতিতে প্রথম পা রাখেন ২০০৪ সালে, যখন আমেথি আসন থেকে জিতে তিনি প্রথমবার লোকসভার এমপি হন। কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তারও বছর তিনেক পরে।
এই মুহূর্তে রাহুল গান্ধীকে একেবারে সামনে এবং প্রিয়াঙ্কাকে ঠিক তার পেছনে রেখে যেভাবে ভারতের প্রধান বিরোধী দলটি পরিচালিত হচ্ছে – শেখ হাসিনা সেই ‘মডেল’টাই আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে চাইছেন বলে ধারণা পেয়েছে বিবিসি বাংলা।

শেখ হাসিনা ও গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠতা
গত এক দশকে বিজেপি আমলেও শেখ হাসিনা যখনই ভারতে কোনো সরকারি সফর করেছেন, বিরোধী দলের নেত্রী সোনিয়া গান্ধী বা তার ছেলেমেয়ের সঙ্গে দেখা করতে কখনোই ভোলেননি।

ছবি বিবিসি বাংলা থেকে নেওয়া।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে যখন শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে যান, সে সময় রাহুল তার প্রথমবারের ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনা সঙ্গে দেখা করতে চান খবর পেয়ে ব্যস্ততার মধ্যেও রাহুল দিল্লির মৌর্য শেরাটন হোটেলে গিয়ে দেখা করেন।
ওই সাক্ষাতে রাহুলের কাছে তার ‘ভারত জোড়ো যাত্রার’ খুঁটিনাটি শোনেন শেখ হাসিনা।
দিল্লির প্রবীণ বিশ্লেষক বিনোদ শর্মা মনে করেন, আওয়ামী লীগের জন্য এটাই আসলে স্বাভাবিক পছন্দ।
বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, “ভারতে কংগ্রেসের মতই বাংলাদেশে আওয়ামী লীগচিরাচরিতভাবে একটি পরিবারকেন্দ্রিক দল। আর সেই ‘ফার্স্ট ফ্যামিলি’ থেকেই এ দলগুলো নেতৃত্ব তুলে আনতে চাইবে, এর মধ্যে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
“বিজেপির সঙ্গে ইদানীং শেখ হাসিনার যতই সুসম্পর্ক থাকুক, বিজেপির মডেল আসলে আওয়ামী লীগের জন্য নয়।”

ছবি বিবিসি বাংলা থেকে নেওয়া।
৭৬ বছরের পুরনো এই রাজনৈতিক দলটি ইতিহাসে সবচেয়ে সংকটময় সময়ের মধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।