১৬ অক্টোবরের নির্বাচনে ব্যাপকভাবে আলোচনায় রয়েছে ‘ডামি প্যানেল’।

আরিফুজ্জামান কোরবান. রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি.
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
হতে সংগ্রহীত
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-রাকসু ভোটের প্রচার প্রায় শেষ হতে চলেছে। মঙ্গলবার রাত ১২টায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীরা তাদের প্রচার শেষ করবেন।
সবকিছু ঠিক থাকলে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হবে পঞ্চদশ রাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হবে।
নয়টি ভবনের ১৭টি কেন্দ্রে ৯৯০ বুথের মাধ্যম ভোটগ্রহণ চলবে। ১৮৮ জন পোলিং অফিসার মোট ২৮ হাজার ৯০১ জনের ভোট গ্রহণ করবেন।
এ নির্বাচনে নয়টি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এর মধ্যে ছয়টি রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের। বাকি তিনটির মধ্যে একটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক তিন সমন্বয়কের নেতৃত্বে; একটি সামজিক সাংগঠনের এবং একটি স্বতন্ত্র শিক্ষার্থীদের।
তবে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির ছাড়া কোনো প্যানেলই পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করতে পারেনি। আর ব্যাপকভাবে আলোচনায় রয়েছে ‘ডামি প্যানেল’।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলামের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাকসু নির্বাচনের ২৩ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ২৬০ জন। এর মধ্যে ভিপি পদে ১৯ জন, জিএস পদে ১৪ জন ও এজিএস পদে ১৬ জন। আর সিনেট ছাত্র প্রতিনিধির পাঁচ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ৬০ জন।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এবং নির্বাচনি মাঠের সার্বিক পরিস্থিতির আলোকে ধারণা করা যাচ্ছে, এবার হয়ত ইসলামী ছাত্র শিবির ও ছাত্রদলের পাশাপাশি কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী মূল তিনটি পদে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে পারেন।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও তার আশপাশের এলাকায় দীর্ঘ সময় ধরে ছাত্রশিবিরের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। তবে, তারা কোনোদিন রাকসুতে ক্ষমতায় আসতে পারেনি। যদিও আগেও তারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। সংগঠনটির প্রার্থী ও নেতাকর্মীরা এবার জয়ের ব্যাপারে বেশ আশাবাদী। তারা রাকসুতে খাতা খুলতে রাজনৈতিক কৌশল, প্রভাব, পরিবেশ সবকিছুকেই কাজে লাগাচ্ছেন বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।
অপরদিকে ১৯৮৯-৯০ সালে প্রথমবারের মত রাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে ভিপি হয়েছিলেন রিজভী আহমেদ; যিনি এখন জাতীয় রাজনীতিতে রুহুল কবীর রিজভী নামেই সুপরিচিত। তিনি এখন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা মনে করেন, দীর্ঘ সময় পর ছাত্রদলের সামনে এখন চ্যালেঞ্জ হচ্ছে জয়ের সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখা। ক্যাম্পাসে তাদের জনপ্রিয়তাও রয়েছে। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই প্রশাসন শেষ পর্যন্ত প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ভোটার করতে বাধ্য হয়।
যেহেতু ছাত্রলীগ মাঠে নেই; বামপন্থি শক্তিগুলো গত সাড়ে তিন দশকে শুধু শক্তিই ক্ষয় করেছে, বিভাজিত হয়েছে- ফলে মূল দলগত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের নাম সামনে এসেছে বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা।
তারা এটা মনে করেন, দলের বাইরে বেশ কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন, যাদের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছেন। বিশেষ করে যারা জুলাই-অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় সক্রিয় থেকেছেন এবং ক্যাম্পাসে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
| রাকসুর ভিপি ও জিএস | ||
| ১. ভিপি মুহা. মনিরুজ্জামান মিয়া
জিএস আবদুর রাজ্জাক খান |
১৯৫৬-৫৭ | ছাত্র ইউনিয়ন |
| ২. ভিপি আবুল কালাম চৌধুরী
জিএস আব্দুল জব্বার খান |
১৯৫৭-৫৮ | ছাত্র ইউনিয়ন |
| ৩. শেখ মুহা. রুস্তম আলী
মুহা. বজলুল করিম |
১৯৬২-৬৩ | অগ্রগামী |
| ৪. সৈয়দ মযহারুল হক বাকী
মুহা. আব্দুর রউফ |
১৯৬৩-৬৪ | ছাত্রলীগ |
| ৫. মুহা. আব্দুর রাজ্জাক
বায়েজিদ আহমেদ |
১৯৬৪-৬৫ | ছাত্র ইউনিয়ন |
| ৬. আবু সাইদ
সরদার আমজাদ হোসেন |
১৯৬৫-৬৬ | ছাত্রলীগ |
| ৭. বায়েজিদ আহমেদ
আব্দুস সাত্তার |
১৯৬৬-৬৭ | ছাত্র ইউনিয়ন |
| ৮. এ এফ এম জামিরুল ইসলাম
মুহা. আব্দুর রহমান |
১৯৬৭-৬৮ | ছাত্র ইউনিয়ন
ছাত্রলীগ |
| ৯. মুহা. আবদুর রহমান
জালাল উদ্দিন সেলিম |
১৯৬৮-৬৯ | ছাত্রলীগ |
| ১০.মীর শওকত আলী
আব্দুস সামাদ |
১৯৬৯-৭০ | ছাত্রলীগ |
| ১১.মুহা. হায়দার আলী
আহম্মদ হোসেন |
১৯৭২-৭৩ | ছাত্র ইউনিয়ন |
| ১২.নুরুল ইসলাম ঠান্ডু
শামসুল হক টুকু |
১৯৭৩-৭৪ | ছাত্রলীগ |
| ১৩.ফজলুর রহমান পটল
রফিকুল ইসলাম |
১৯৭৪-৭৫ | ছাত্রলীগ
ছাত্রলীগ (জাসদ) |
| ১৪.ফজলে হোসেন বাদশা
জাহাঙ্গীর কবির রানা |
১৯৮০-৮১ | ছাত্র মৈত্রী
ছাত্রলীগ |
| ১৫.রাগীব আহসান মুন্না
রুহুল কুদ্দুস বাবু |
১৯৮৮-৮৯ | ছাত্র মৈত্রী
ছাত্রলীগ (জাসদ) |
| ১৫.রিজভী আহমেদ
রুহুল কুদ্দুস বাবু |
১৯৮৯-৯০ | ছাত্রদল
ছাত্রলীগ (জাসদ) |
বিগত দিনের ফলাফল
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়ন-রাসু নামে প্রথম দুবার (১৯৫৬-৫৭ এবং ১৯৫৭-৫৮ সাল) নির্বাচন হয়েছে। এ ছাড়া বাকি ১২ বার নির্বাচন হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-রাকসু নামে।
১৪টি নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রথম দুবার রাসু নির্বাচনে ছাত্র ইউনিয়ন ভিপি ও জিএস উভয় পদে জয়লাভ করেছে। পরে রাকসুতেও তারা তিনবার ভিপি-জিএস পদে জয় পেয়েছে। অর্থাৎ বামপন্থি এই ছাত্র সংগঠনটি মোট পাঁচবার ভিপি-জিএস পদে জয় পেয়েছে। এ ছাড়া একবার ভিপি পদে জয় পেয়েছে। যেবার তারা ভিপি পদে জয় পেয়েছিল, সেবার জিএস জিতেছিল ছাত্রলীগ থেকে।
মুজিববাদী ছাত্রলীগ রাকসুতে মোট পাঁচবার ভিপি-জিএস উভয় পদে জয়লাভ করেছে। জিএস পদে জিতেছে দুবার। এ ছাড়া একবার ভিপি পদে জয়লাভ করেছে।
জাসদ ছাত্রলীগ ভিপি-জিএস উভয় পদে একসঙ্গে কখনও জয় পায়নি। তবে সংগঠনটি তিনবার জিএস পদে জয়লাভ করেছে।
ছাত্রমৈত্রীও দুবার ভিপি পদে জয়লাভ করেছে। এবং জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল একবার ভিপি পদে জিতেছিল।
১৯৬২-৬৩ সালে ‘অগ্রগামী প্যানেল’ থেকে ভিপি-জিএস পদে জয়লাভ করেছিল। তার নিজেদের ‘অরাজনৈতিক’ বলেছিলেন।