“পাশাপাশি কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও রাজশাহীসহ সামগ্রিকভাবে প্রত্যেকটা জেলাতেই ঝুঁকিপূর্ণ পূজা মণ্ডপ রয়েছে।”
হতে সংগৃহিত
চলতি মাসের শেষ নাগাদ শুরু হতে যাওয়া বাঙালি হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজায় দেশের বিভিন্ন জেলার সাত শতাধিক মণ্ডপকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট।
পাশাপাশি পূজা উদযাপন ‘নির্বিঘ্ন’ করতে প্রতিটি মণ্ডপে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সম্মেলনে সংগঠনটির প্রতিনিধি প্রদীপ কান্তি দে বলেন, “এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে তথ্য এসেছে পাঁচটি জেলার সাতটি পূজা মণ্ডপে প্রতিমা ভাংচুর করা হয়েছে। আমরা আশঙ্কা করছি, এ বছর ৭০০ এর উপরে পূজা মণ্ডপ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।”
ঝুঁকিপূর্ণ পূজামণ্ডপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাতক্ষীরা জেলার তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, “ইতোমধ্যে সাতক্ষীরার ৫৫টি পূজামণ্ডপকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও রাজশাহীসহ সামগ্রিকভাবে প্রত্যেকটা জেলাতেই ঝুঁকিপূর্ণ পূজা মণ্ডপ রয়েছে।”
ঝুঁকিপূর্ণ মণ্ডপগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার পাশাপাশি সরকারি খরচে ক্লোজড সার্টিক ক্যামেরা রাখারও দাবি রেখেছেন সনাতনী জাগরণ জোটের প্রতিনিধি প্রদীপ কান্তি দে।
পূজামণ্ডপে সেনা মেতায়েনের দাবি প্রসঙ্গে প্রদীপ কান্তি দে বলেন, “যেহেতু আর্মি বর্তমানে সিভিল প্রশাসনের সঙ্গে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নের কাজ করে যাচ্ছে। সে কারণে আমরা দাবি জানিয়েছি এবারের পূজাতেও যেন আর্মি মোতায়েন করা হয়। যাতে আমরা নিরাপদে ও শান্তিপূর্ণভাবে পূজা পালন করতে পারি।”
আরেক প্রতিনিধি পিযুষ দাসের ভাষ্য, এখন পূজা কবে জানার জন্য ক্যালেন্ডার দেখতে হয় না, প্রতিমা ভাংচুরের খবর শুনলেই জানা যায় পূজা এসে গেছে।
তিনি বলেন, “মণ্ডপে যে ঘটনাগুলো ঘটছে বাংলাদেশের বাইরে থেকেতো কেউ এসে হামলা করেনি। বাংলাদেশের ভেতর থেকেই ঘটনাগুলো ঘটানো হচ্ছে। তারপরেও প্রশাসন কেন ঠেকাচ্ছে না? কারা এই দৃস্কৃতিকারী তাদেরকে চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক।”
সুশান্ত সুশান্ত অধিকারী ‘নির্বিঘ্নে’ পূজা উদযাপনের নিশ্চয়তা চেয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন,, “আমাদের প্রতিমা জামায়াত-শিবির, আওয়ামী লীগ, বিএনপি বলেন বা এনসিপি বলেন এরা কেন পাহারা দিবে?
“এই দেশের নাগরিক হিসেবে পূজা পার্বণ ও অনুষ্ঠান করা আমাদের জন্মগত নাগরিক অধিকার। তাই সকলের কাছে প্রশ্ন আমাদের প্রতিমা কেন পাহারা দিতে হবে? অন্যান্য সম্প্রদায়ের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানতো পাহারা দিতে হয় না।”
গেল বছরের ১৭ নভেম্বর নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ‘বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ’ এবং ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোটের’ ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের’ ঘোষণা করে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছিলেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী।
এরপর গত ২৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে চিন্ময়কে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়, এরপর থেকে কারাগারেই আছেন তিনি।
মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনেও আসন্ন পূজার আগেই চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তি দাবি করেন সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
সরকারের কাছে পাঁচদফা দাবি তুলে ধরে প্রদীপ কান্তি দে বলেন, “চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ আমাদের নেতৃবৃন্দের অনেককে বিনা কারণে শুধুমাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার কারণে বিভিন্নভাবে মামলায় আটক করে রাখা হয়েছে। আমরা চাই আইন আইনের মত চলুক।”
পূজার আগে অন্তত জামিনে হলেও চিন্ময় দাসের মুক্তিসহ অক্টোবরের শুনানিতে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি।
বাকি চার দাবির মধ্যে এবার সারাদেশে ৩৩ হাজার মন্ডপের পূজা শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের নিশ্চয়তা, পূজায় তিন দিনের ছুটি ঘোষণা, ইতোপূর্বে তাদের ‘যৌক্তিক’ আট দফা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেওয়া এবং সনাতনী সম্প্রদায়কে রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে অন্তরভুক্তির কথা বলেন প্রদীপ কান্তি দে।
এর আগে লিখিত বক্তব্যে আরেক প্রতিনিধি প্রসেজিৎ কুমার হালদার রাষ্ট্রের কাছে জানিয়ে আসা তাদের আট দফার কথা পূনর্ব্যক্ত করেন।
১. সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারের জন্য ‘নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন’ গঠনের মাধ্যমে ‘দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল’ গঠনপূর্বক দোষীদের দ্রুততম সময়ে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান, ক্ষতিগ্রস্তদের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
২. অনতিবিলম্বে ‘সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন করতে হবে।
৩. ‘সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয়’ গঠন করতে হবে।
৪. সংখ্যালঘু হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে ‘হিন্দু ফাউন্ডেশনে’ উন্নীত করতে হবে। পাশাপাশি বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকেও ফাউন্ডেশনে উন্নীত করতে হবে।
৫. ‘দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন’ প্রণয়ন এবং ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন’ যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে।
৬. সরকারি/বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ও সকল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য উপাসনালয় নির্মাণ এবং প্রতিটি হোস্টেলে প্রার্থনাকক্ষ বরাদ্দ করতে হবে।
৭. ‘সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড’ আধুনিকায়ন করতে হবে।
৮. শারদীয় দুর্গাপূজায় ৫ দিন ছুটি দিতে হবে। পাশাপাশি প্রতিটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রধান প্রধান ধর্মীয় উৎসবে প্রয়োজনীয় ছুটি প্রদান করতে হবে।
এর আগে দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে দেশের ২৯ জেলাকে ‘ঝুঁকিপ্রবণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে নাগরিক সমাজকে নিয়ে নবগঠিত প্ল্যাটফর্ম ‘সম্প্রীতি যাত্রা’।
এর মধ্যে রোববার মহালয়ার মাধ্যমে এবারের দুর্গোৎসবের প্রথম পর্বের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
হিন্দু আচার অনুযায়ী, মহালয়া, বোধন আর সন্ধিপূজা- এই তিন পর্ব মিলে দুর্গোৎসব।
পঞ্জিকা অনুযায়ী এবার মহালয়ার সপ্তম দিন অর্থাৎ আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ষষ্ঠীপূজার মাধ্যমে পাঁচদিনের দুর্গোৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে।
এরপর ২৯ সেপ্টেম্বর সপ্তমী, ৩০ সেপ্টেম্বর অষ্টমী, অক্টোবরের ১ তারিখ নবমী এবং ২ অক্টোবর দশমীর সন্ধ্যায় বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসবের সমাপ্তি হবে।
এবার দেবী দুর্গার আগমন হবে গজে অর্থাৎ হাতির পিঠে চড়ে। গজে আগমন বা গমন হলে বসুন্ধরা শস্য শ্যামলা হয়। দশমীতে দেবীর মর্ত্যলোক ছাড়বেন দোলায় চড়ে। আর দোলায় দেবীর গমনকে মহামারী বা মড়কের ইংগিত ধরা হয়।
এখন দুর্গাপূজার আয়োজন সম্পন্ন করতে শেষদিকের প্রস্তুতি চলছে। রং তুলির আঁচড়ে দেবী দুর্গাকে সাজিয়ে তুলছেন প্রতিমা শিল্পীরা।
পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছে, এবার দুর্গাপূজা হবে এবার ৩৩ হাজার ৫৭৬টি মণ্ডপে। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে ২৫৫টি মণ্ডপে পূজা হওয়ার কথা রয়েছে।