দুই বছর ধরে ব্যাপক প্রাণঘাতী ও ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ চলার পর শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতির মধ্যে গাজায় এটাই ইসরায়েলের সবচেয়ে জোরদার হামলা।
সংগৃহিত
ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের রিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে গাজায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে অন্তত ২৬ ফিলিস্তিনি নিহত ও আরও ৫০ জন আহত হয়েছেন। হতাহদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় নিহত ২৬ জনের মধ্যে গাজার মধ্যাঞ্চলীয় বুরেইজ শরণার্থী শিবিরে আঘাত হানা এক বাড়ির পাঁচজন রয়েছেন। গাজা সিটির সাব্রা এলাকার একটি ভবনে চারজন এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস শহরে আরও পাঁচজন নিহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, মঙ্গলবার গাজাজুড়ে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলোর শুরু করা হামলা মধ্যরাত পেরিয়ে বুধবার গড়ানোর পরও অব্যাহত ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ১০ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া নড়বড়ে এক যুদ্ধবিরতির মধ্যেই মঙ্গলবার গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায় ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের গুলি বিনিময় হয়। এ সময় এক ইসরায়েলি সেনা আহত হন।
এই ঘটনার জেরে যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও অবিলম্বে গাজায় ‘শক্তিশালী’ হামলা চালানোর জন্য ইসরায়েলি বাহিনীকে নির্দেশ দেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেননিয়ামিন নেতানিয়াহু।
উদ্ধারকারীরা প্রায় খালি হাতে আবর্জনা সরিয়ে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকা পড়াদের বের করে নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন। ছবি: রয়টার্স
দুই বছর ধরে গাজায় ব্যাপক প্রাণঘাতী ও ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ চলার পর শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতির মধ্যে এটাই হামাস শাসিত ফিলিস্তিনি ছিটমহলটিতে ইসরায়েলের সবচেয়ে জোরদার হামলা।
গাজা সিটি থেকে আল জাজিরার এক সাংবাদিক জানান, নগরীর আল শিফা হাসপাতালের পেছনে একটি ক্ষেপণাস্ত্র এসে আঘাত হানে আর ‘গাজার আকাশে বহু ইসরায়েলি ড্রোন চক্কর দিচ্ছে’।
তিনি বলেন, “প্রত্যক্ষদর্শীরা ওই ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতকে ব্যাপক বলে বর্ণনা করেছেন। আমরা ওই এলাকা থেকে প্রায় ২০ মিনিটের মতো গাড়ি দূরত্বে আছি আর আমরা এখান থেকেই বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাচ্ছি। এই হামলা আল শিফা হাসপাতালে ব্যাপক বিশৃঙ্খলার কারণ হয়েছে আর রোগী ও চিকিৎসা কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।”
গাজা সিটির সাব্রা এলাকায় ইসরায়েলি হামলার পর ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকা পড়া ফিলিস্তিনিদের উদ্ধারের প্রচেষ্টা শুরু হয়। রাত গভীর হলেও উদ্ধারকারীরা প্রায় খালি হাতে আবর্জনা সরিয়ে আটকা পড়াদের বের করে নিয়ে আসার চেষ্টা করছিলেন।
রাফায় ইসরায়েলি সেনাদের ওপর হামলার জন্য হামাসকে দায় দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ। এক বিবৃতিতে তিনি ইসরায়েলি সেনাদের ওপর এ হামলার জন্য হামসকে ‘চড়া মূল্য দিতে হবে’ বলে প্রত্যয় জানান। এরপরই নেতানিয়াহু তার বাহিনীকে গাজায় ‘শক্তিশালী’ হামলা চালানোর নির্দেশ দেন।
দুই অনামা মার্কিন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে আন্তর্জাতিক এক বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, গাজায় এ হামলা শুরু করার আগে ইসরায়েল ওয়াশিংটনকে জানিয়েছে।
ওয়াশিংটন ডিসিতে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স জোর দিয়ে বলেছেন, এসব হামলা সত্ত্বেও যুদ্ধবিরতি এখনও বজায় আছে। গাজায় উভয়পক্ষই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে বলে দাবি করেছেন তিনি।
গাজার খান ইউনিস শহরে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার পর ওঠা ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। ছবি: রয়টার্স
ওয়াশিংটনের ক্যাপিটল হিলে ভ্যান্স সাংবাদিকদের বলেছেন, “এর মানে এই নয় যে এখানে সেখানে ছোটখাটো কিছু সংঘর্ষের ঘটনা ঘটবে না।
“আমরা জানি, গাজায় হামাস অথবা অন্য কেউ একজন ইসরায়েলি সেনার ওপর হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলিরা এর জবাব দিতে যাচ্ছে, এটা আমরা মেনে নিয়েছি। কিন্তু এসব সত্ত্বেও প্রেসিডেন্টের (ট্রাম্প) শান্তি বজায় থাকবে।”
হামাস রাফার হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
হামাসের সশস্ত্র শাখা কাসাম ব্রিগেড যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে। তারা বলেছে, নিখোঁজ এক জিম্মির মৃতদেহ হস্তান্তরের যে পরিকল্পনা ছিল তা স্থগিত রাখবে তারা।
এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, “ইসরায়েলি হামলার কারণে নিখোঁজ জিম্মিদের মৃতদেহের খোঁজ করা, সেগুলোর জন্য খনন করা ও মৃতদেহ বের করে নিয়ে আসার কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আর তাতে মৃতদেহগুলো উদ্ধার করায় দেরি হচ্ছে।”