যে কোনো খাবারের মতো হাঁসের মাংস বেশি খেলেও স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
সংগৃহীত
ইংরেজিতে একটা কথা আছে ‘সিটিং ডাক’- কাউকে এই নামে ডাকার মানে হল- তাকে আঘাত করা, তার কাছ থেকে ফয়দা লুটা সহজ ব্যাপার। মানে সে একজন সহজ লক্ষ্য-বস্তু।
বিপদে পড়ে অসহায় বোধ করলেও নিজেকে ‘সিটিং ডাক’ হিসেবে অ্যাখ্যা দেওয়া যায়।
‘গ্রামারিস্ট ডটকম’য়ের তথ্যানুসারে, এই বাগধারার উৎপত্তি ১৮০০ সালের দিকে। সেই সময় হাঁস শিকারীরা এই কথার মাধ্যমে বোঝাতে চাইতেন- উড়ে যাওয়া হাঁসের চাইতে পানিতে বসে থাকা বা সাঁতরাতে থাকা হাঁস শিকার করা সহজ। এতে কোনো খেলোয়াড়-সুলভ মনোভাব প্রকাশ পায় না।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ-আমেরিকান সেনারা ‘সিটিং ডাক’ কথাটি সেনাবাহিনীর সহজ লক্ষ্য বস্তু হিসেবে প্রচুর ব্যবহার করতেন।
‘বসে থাকা হাঁস’ তো শিকার করে আনা হল, এবার কি খাওয়ার জন্য শীতকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে?- মোটেই না।
কারণ হাঁসের মাংস একটি ঋতুতে আটকে থাকার মতো খাবার নয়। বরং যে কোনো মৌসুমে এই পানিতে ভাসমান পাখির মাংস খাওয়া যেতে পারে; যাদেরকে জীববিজ্ঞানে ‘অ্যানাটিডি’ অর্থাৎ পানিতে ভাসমান পাখি পরিবারের অংশ হিসেবে ডাকা হয়।
এই তথ্য জানিয়ে ওয়েবএমডি ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, অনেকেরই ধারণা হাঁসের মাংস উচ্চ কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ। চর্বি বেশি থাকায়, গরমের সময় খেলে সমস্যা হতে পারে। আর যাদের কোলেস্টেরলের সমস্যা আছে তাদের খাওয়া নিষেধ।
তবে হাঁসের মাংসের উপকারিতা অনেক। কারণ অন্যান্য প্রাণিজ খাবারের তুলনায় এই পাখির মাংসে ‘মনোআনস্যাচুরেইটেড’ এবং ‘পলিআনস্যাচুরেইটেড’ চর্বির পরিমাণ বেশি। এসব চর্বি স্বাস্থ্যের ওপর যেসব ভালো প্রভাব ফেলে সেগুলো হল-
কোলেস্টেরল কমানো: হাঁসের মাংসে থাকা ‘মনোআনস্যাচুরেইটেড’ চর্বি, ‘এইচডিএল’ অর্থাৎ ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে। আর খারাপ কোলেস্টেরল ‘এলডিএল’য়ের মাত্রা কমায়।
রক্তে শর্করার মাত্রা কমায়: বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে- হাঁসের মাংসের মতো ‘পলিআনস্যাচুরেইটেড ফ্যাটস’ সমৃদ্ধ খাবার রক্তের শর্করার মাত্রা কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। আর কার্বোহাইড্রেইটস’য়ের পরিবর্তে ক্যালোরি গ্রহণের জন্য এই চর্বি গ্রহণ করলে তবেই কাজ করবে বেশি।
শক্তির মাত্রা বাড়ায়: হাঁসের মাংসে রয়েছে প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড, যা দেহ কর্মক্ষম রাখার প্রাকৃতিক উপাদান। এই অ্যাসিড ব্যবহার করে দেহ শক্তি উৎপন্ন করে।
স্বাস্থ্য ঝুঁকি
যদিও উপকারের কথা বলা হল এতক্ষণ। তবে কিছু ঝুঁকিও রয়েছে।
ওয়েবএমডি জানাচ্ছে- হাঁসের চর্বি উপকারী ‘লিনোলিইক অ্যাসিড’য়ের উৎস। তবে ক্যালরি এবং স্যাচুরেইটেড ফ্যাটস’য়ের মাত্রাও বেশি থাকে। যদি বেশি খাওয়া হয় তবে স্বাস্থ্যের ওপর বাজে প্রভাব পড়তে পারে। যেমন-
সার্বিক কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি: যদিও অন্যান্য অনেক প্রাণিজ খাবারের তুলনায় কম তারপরও হাঁসের মাংসে থাকা স্যাচুরেইটেড চর্বি দেহের সার্বিক কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। যা থেকে হৃদরোগ ও স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
ওজন বৃদ্ধি: এক টেবিল-চামচ পরিমাণ হাঁসের চর্বিতে প্রায় ১১৩ ক্যালোরি থাকে। তাই ওজন কমাতে চাইলে এই উচ্চ ক্যালরি সমৃদ্ধ মাংস এড়াতে হবে।
গুণগত মান কমা: গবেষণায় দেখা গেছে, অন্যান্য তেল ও চর্বির তুলনায় গলানো হাঁসের চর্বি জমিয়ে বা সংরক্ষণ করলে ‘লিপিড অক্সিডেশন’ বেশি হয়।
‘লিপিড অক্সিডেশন’য়ের কারণে খাবার খারাপ হতে থাকে, যদি ব্যবহার না করা হয়।
হাঁসের মাংসের পুষ্টিগুণ
- প্রোটিনের দারুণ উৎস। রান্না করা প্রায় ৭৫ গ্রাম হাঁসের মাংস থেকে মিলবে ১৭.৬ গ্রাম প্রোটিন। যা দৈনিক চাহিদার ৩৫ শতাংশ। ত্বক, পেশি ও দেহ স্বাস্থ্যকর রাখতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ জরুরি।
- রয়েছে ‘ভিটামিন বি’। বিশেষ করে মিলবে ‘নায়াসিন’ নামের ভিটামিন বি-থ্রি। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, স্নায়ু ও পেশির ব্যবস্থাপনা, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা এবং হরমোন উৎপাদনে ‘বি ভিটামিন’য়ের গুরুত্ব রয়েছে।
- একটি হাঁসের বুকের মাংস থেকে প্রায় ৩.৭৪ গ্রাম লৌহ পাওয়া যাবে। যা কিনা দৈনিক চাহিদার ১৪ শতাংশ। হিমোগ্লোবিন তৈরিতে লৌহের প্রয়োজন হয়। এই প্রোটিন অক্সিজেন পৌঁছে দেয় লোহিত রক্তকণিকায়।
- ‘ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস’ এবং ‘ওমেগা-সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিডস’ মিলবে হাঁসের মাংস থেকে। এগুলো নানান ধরনের দীর্ঘমেয়াদি রোগ, যেমন- বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার, হৃদসংক্রান্ত রোগ, মানসিক সমস্যা, সোরায়সিস এবং অ্যাজমা নিরাময়ে ভূমিকা রাখে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার দ্রুত সাড়া দেওয়া এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ কমাতে ‘সেলেনিয়াম’ গুরুত্বপূর্ণ। হাঁসের মাংস এই খনিজের উৎকৃষ্ট উৎস।