চিঠিতে নিজেদের নারী আন্দোলন কর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন তারা এবং চিঠিটি নিজেরা সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন।
হতে সংগৃহিত
আনুষ্ঠানিকভাবে সম্প্রতি যাত্রা করা অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘ঢাকা স্ট্রিম’ এর এক কর্মীর মৃত্যু ঘিরে সোশাল মিডিয়ায় শোরগোলের মধ্যে কয়েকটি প্রশ্ন জানতে চেয়ে প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদকের কাছে চিঠি লিখেছেন পাঁচ বিশিষ্ট নারী।
ঢাকা স্টিমের একজন শীর্ষ কর্তা আলতাফ শাহনেওয়াজের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ দেওয়ার পর সংস্থাটি কী পদক্ষেপ নিয়েছে আর বিবৃতি দিয়ে তারা কী দাবি করেছে এসব বিষয় নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে জানতে চাওয়া হয়েছে ওই চিঠিতে।
ঢাকা স্ট্রিমের সম্পাদক গোলাম ইফতেখার মাহমুদের বরাবর লেখা ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ, অধ্যাপক গীতিআরা নাসরীন, অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, গবেষক ও অ্যাক্টিভিস্ট সায়দিয়া গুলরুখ ও ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা।
চিঠিতে নিজেদের নারী আন্দোলন কর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন তারা এবং চিঠিটি নিজেরা সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন।
ঢাকা স্ট্রিমের গ্রাফিক্স ডিজাইনার স্বর্ণময়ী বিশ্বাসের মৃতদেহ শনিবার রাতে ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করা হয় বলে জানান তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার ইবনে মিজান।
২৮ বছর বয়সী ওই তরুণী আত্মহত্যা করেছেন বলেই স্বজন ও পুলিশের ধারণা।
তবে কেউ কেউ তার মৃত্যুর পেছনে অনেকাংশে দায় দেখছেন তিনি যেখানে কাজ করতেন সেই সংবাদমাধ্যমটির শীর্ষ এক কর্তার; যার বিরুদ্ধে ‘যৌন নিপীড়ন’, ‘বাজে আচরণের’ মতো গুরুতর অভিযোগ এনেছিলেন স্বর্ণময়ীসহ ২৬ কর্মী।
এ বিষয়ে সোশাল মিডিয়া আলোচনার মধ্যে চিঠি দেন এই ৫ নারী।
চিঠিতে বলা হয়েছে, “আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে আপনার নিউজপোর্টালে কর্মরত গ্রাফিক্স ডিজাইনার স্বর্ণময়ী বিশ্বাসের আত্মহত্যার খবর জানতে পারি। একই সঙ্গে জানতে পারলাম যে স্বর্ণময়ী বিশ্বাস এবং আরও কয়েকজন নারী সহকর্মী আপনার কাছে বাংলা বিভাগের প্রধান আলতাফ শাহনেওয়াজের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ উত্থাপন করেছিলেন।
“বাংলাদেশে নারী আন্দোলনের কর্মী হিসেবে আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, উচ্চ আদালত থেকে ২০১০ সালে কর্মক্ষেত্রে যৌনহয়রানি প্রতিরোধ এবং অভিযোগ নিরসনের কতগুলো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। আপনার প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ বিভাগ কর্তৃক প্রচারিত বিবৃতিটি পড়ার পর আমাদের মনে কিছু প্রশ্ন জেগেছে।”
চিঠিতে সেই প্রশ্ন তুলে বলা হয়, “আমরা জানতে চাই, এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে আদালতের নির্দেশনা সাপেক্ষে আপনি কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন? যেমন আমরা জানতে চাই যে বিবৃতিতে উল্লেখিত দুই সদস্যের তদন্ত কমিটিতে হাই কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী নারী-পুরুষের অনুপাত রক্ষিত হয়েছিল কি-না বা বহিঃস্থ সদস্য ছিলেন কিনা?
“আরও প্রশ্ন জাগে যে তদন্ত কমিটির কার্যপরিধি (টার্মস অব রেফারেন্স) কী ছিল? কারণ অভিযোগ ছিল যৌন হয়রানির, ‘অসৌজন্যমূলক’ আচরণের নয়। অথচ আপনাদের বিবৃতিতে দেখছি তদন্ত কমিটি অসৌজন্যমূলক আচরণের’ প্রমাণের ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিয়েছে। আর শুধু বার্তাকক্ষ থেকে একজন বিভাগীয় প্রধানকে প্রত্যাহার করাটা যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে আদৌ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ কিনা এ প্রশ্নও করতে হচ্ছে আমাদের। কারণ এ ধরনের ঘটনায় অভিযুক্তকে সাময়িক বরখাস্তের নিয়ম থাকলেও আপনার প্রতিষ্ঠান যে তা করেনি সেটা আপনাদের বিবৃতি থেকে স্পষ্ট। ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে আমরা যা জেনেছি, তা বিবৃতির বক্তব্য এবং যৌন হয়রানি প্রশ্নে ঢাকা স্ট্রিমের প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।”
চিঠিতে বলা হয়, “আপনাদের দাবি অনুযায়ী, গৃহীত পদক্ষেপের ব্যাপারে অভিযোগকারীরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। এ দাবির পক্ষে আপনাদের কাছে কোনো প্রমাণ আছে কিনা আমরা তা-ও জানতে চাই।”
