সোরা চালুর পর থেকে মাইকেল জ্যাকসন, রবিন উইলিয়ামস ও মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের মতো বিখ্যাত সব মৃত ব্যক্তিদের চেহারার আদলে ভিডিও তৈরি করছেন ব্যবহারকারীরা।
সংগৃহিত
পরিবারের অনুরোধে সোরা’তে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের ভিডিও তৈরি সাময়িকভাবে বন্ধ করেছে ভিডিও টুলটির নির্মাতা ওপেনএআই।
মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের পারিবারিক কোম্পানি ‘কিং ইনকর্পোরেটেড’-এর অনুরোধে নিজেদের ভিডিও জেনারেশন মডেল সোরা’তে কিং জুনিয়রের ভিডিও তৈরির সুযোগ অস্থায়ীভাবে বন্ধ করেছে চ্যাটজিপিটির নির্মাতা কোম্পানিটি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ দেওয়া এক ঘোষণায় ওপেনএআই বলেছে, ‘কিং ইনকর্পোরেটেড’-এর সঙ্গে মিলে কাজ করছে তারা, যেন সোরা-তে কিং জুনিয়রের ‘চেহারা ও ব্যক্তিত্ব যথাযথভাবে উপস্থাপন করা যায়’।
কোম্পানিটির এমন সিদ্ধান্তের পেছনে কারণ, কিছু ব্যবহারকারী সোরা ব্যবহার করে মার্কিন নাগরিক অধিকার আন্দোলনের এই শীর্ষ নেতার অসম্মানজনক ভিডিও তৈরি করেছিল বলে প্রতিবেদনে লিখেছে প্রযুক্তি সাইট এনগ্যাজেট।
ওপেনএআই এখনও স্পষ্টভাবে জানায়নি ভবিষ্যতে সোরা-তে আবার মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের ভিডিও তৈরির সুযোগ ফিরবে কি না। তবে তাদের বক্তব্যে ইঙ্গিত মেলে, এ পদক্ষেপটি স্থায়ী নয়, বরং ‘ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের উপস্থাপনায় আরও শক্তিশালী নীতিমালা ও সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য’ সাময়িকভাবে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটি।
ওপেনএআইতে সোরা চালুর পর থেকে ব্যবহারকারীরা মাইকেল জ্যাকসন, রবিন উইলিয়ামস ও মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের মতো বিখ্যাত সব মৃত ব্যক্তিদের চেহারার আদলে ভিডিও তৈরি করতে শুরু করেন।
এর আগে, রবিন উইলিয়ামসের মেয়ে জেল্ডা বাধ্য হয়ে অনুরোধ করেছিলেন, মানুষ যেন আর তাকে এআই দিয়ে তৈরি তার বাবার ভিডিও না পাঠায়।
ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে জেল্ডা লিখেছিলেন, “দয়া করে বাবাকে নিয়ে তৈরি করা এআই ভিডিও আমাকে পাঠানো বন্ধ করুন। ভাববেন না আমি এগুলো দেখতে চাই বা বুঝতে পারব, আমি বুঝতে পারি না, আর পারবও না। একজন সত্যিকারের মানুষের পুরো জীবন ও পরিচিতিকে উপেক্ষা করে কেবল ‘তাদের মতো কিছুটা দেখতে বা শুনতে পাওয়া যায় এমন কিছু হলেই চলবে’ এই ধারণায় সীমাবদ্ধ করে দেওয়া এবং অন্যরাও তা ব্যবহার করে ভয়ংকর টিকটক ভিডিও বানিয়ে নিজেদের মতো করে ঢোল বাজাচ্ছেন– এমনটি সত্যিই হতাশাজনক ও বিরক্তিকর।”
এখন সামাজিক যোগাযোম মাধ্যম থ্রেডসে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের মেয়ে বার্নিস এ. কিং লিখেছেন, তিনি জেল্ডার সঙ্গে একমত এবং তিনিও মানুষকে অনুরোধ করেছেন, তাকে যেন তার বাবার এআই দিয়ে তৈরি ভিডিও আর না পাঠানো হয়।
ওয়াশিংটন পোস্ট এক প্রতিবেদনে লিখেছে, সোরা দিয়ে তৈরি এমন কিছু ভিডিও বানিয়ে অনলাইনে পোস্ট করা হচ্ছে, যেখানে নিজের বিখ্যাত বক্তৃতা ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ দেওয়ার সময় বানরের মতো আওয়াজ করতে দেখা যাচ্ছে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রকে।
আরেকটি ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, কৃষ্ণাঙ্গ বিপ্লবী, ধর্মপ্রচারক ও মানবাধিকার কর্মী ম্যালকম এক্স-এর সঙ্গে কুস্তি লড়ছেন কিং জুনিয়র। এসব ভিডিও নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ম্যালকম এক্স-এর মেয়ে ইলিয়াসাহ শাবাজও।
এক বিবৃতিতে শাবাজ প্রশ্ন তুলেছেন, এআই নির্মাতারা কেন সেই নৈতিকতা, বিবেকবোধ ও দায়িত্ববোধের পরিচয় দিচ্ছেন না, যা তারা ‘নিজেদের পরিবারের বিষয়ে ভাবতেন বা দেখাতেন’।
ওপেনএআই বলেছে, ‘ঐতিহাসিক ব্যক্তিদের উপস্থাপনায় মতপ্রকাশের স্বাধীনতার গুরুত্বপূর্ণ দিকও রয়েছে’। এরপরও তাদের বিশ্বাস, জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ও তাদের পরিবারেরই শেষ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত যে, তাদের চেহারা কীভাবে ব্যবহৃত হবে।
কোম্পানিটি আরও বলেছে, অন্যান্য ঐতিহাসিক ব্যক্তিদের উত্তরাধিকারীরা বা তাদের প্রতিনিধিরাও চাইলে অনুরোধ করতে পারেন, যাতে সোরা’তে তাদের চেহারার ব্যবহার না হয়।