“নীতিমালা না মেনে ভবনটির চারটি ফ্লোরে পণ্য গুদামজাত করা হয়েছিল। যেসব পণ্য পুড়ে রাসায়নিকে পরিণত হয়। যাতে আগুন ভয়াবহ আকার ধারণ করে।”
হতে সংগৃহিত
চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলে (সিইপিজেড) আগুনে ভষ্মীভূত কারখানা ভবনটির অগ্নি নিরাপত্তার কার্যকারিতা ‘সনদ নেই’ বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
অগ্নি নিরাপত্তা সনদের জন্য কর্তৃপক্ষ আবেদন করলেও, পরবর্তী ধাপের কার্যক্রম শেষ করা হয়নি। এছাড়া ভবনটি নির্মাণে ‘বিল্ডিং কোডের নিয়মও মানা হয়নি’ বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
শুক্রবার সকালে পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই তথ্য জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী।
আগুনের কারণ অনুসন্ধানে একটি ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে; যে কমিটি প্রতিবেদন জমা দিতে ১৫ কার্য দিবস সময় পেয়েছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের এই পরিচালক।
ভবনটির অগ্নি নিরাপত্তা সনদ ছিল কি না প্রশ্নের উত্তরে তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “এই ভবনে উনারা আবেদন করেছেন। কিন্তু পরবর্তী কার্যক্রম করা হয়নি। আবেদন করলে ডিজাইন জমা দিতে হয়। তারপর আমাদের পরিদর্শন কমিটি করা হয়। কমিটির পরিদর্শনে যাচাই বাছাই করে ডিজাইনের সাথে সামঞ্জ্যসতা দেখা হয়।
“তারপর এনওসি দেওয়া হয়। এরপর উনাদের সময় দেবোয়া হয়, সেফটি এনসিওর করে তারপর কার্যকারিতা সনদ পেতে হয়। এনওসিতে ফায়ার সেফটির যে শর্তগুলো দেওয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়ন করেছে কিনা সেটা দেখে কার্যকারিতা সনদ দেওয়া হয়। কার্যকারিতা সনদ পেলে আপনি নিরাপদ। এখানে আবেদন হয়েছে কিন্তু বাদবাকি কার্যক্রম হয়নি।”
সিইপিজেড এলাকায় ১ নম্বর সেক্টরের ৫ নম্বর সড়কের আটটলা ভবনের সাততলার অ্যাডামস ক্যাপ অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেড এবং জিহং মেডিকেল কোম্পানি নামের দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় বৃহস্পতিবার দুপুরে। অ্যাডামস ক্যাপ নামের প্রতিষ্ঠানে টাওয়েল ও ক্যাপ এবং জিহং মেডিকেল সার্জিকেল গাউনসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম তৈরি করে।
তবে ভবনটির অষ্টম তলা খালি ছিল। সেখানে টিনের সিলিং দেওয়া ছিল।
বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে লাগা আগুন শুক্রবার সকাল ৭টা ২৫ মিনিটের দিকে নিয়ন্ত্রণে আসে বলে ফায়ার সার্ভিসের আগ্রাবাদ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়। এই ভবনে যখন আগুন লাগে তখন দুপুরের খাবারের বিরতি থাকায় কারখানার শ্রমিকরা বেশিরভাগই তখন ভবন থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছিলেন।
কারখানার কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলেছেন, আগুন জ্বলার সময় ‘ভবনে কোন শ্রমিক ছিল না’।
অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী আরও জানিয়েছেন, নীতিমালা না মেনে ভবনটির চারটি ফ্লোরে পণ্য গুদামজাত করা হয়েছিল।
“যেসব পণ্য পুড়ে রাসায়নিকে পরিণত হয়। যাতে আগুন ভয়াবহ আকার ধারণ করে।”
তিনি বলেন, “ভবনটি মিশ্র ব্যবহারের। প্রথম তিনতলা অ্যাডামস ক্যাপসের। পরের চারটা ফ্লোরই ছিল স্টোর। স্টোরের যে প্রিন্সিপাল তা রক্ষা করে করা হয়নি। এখানকার প্রোডাক্টগুলো পুড়ে আরেকটা রাসায়নিক এজেন্টে পরিণত হয়েছে।
“সেখানে ডাক্তারদের অ্যাপ্রন, মেডিকেল গাউনসহ অনেক কিছু ছিল। এটা রাসায়নিক কারণে পুড়েছে অনেকক্ষণ ধরে। আপনারা আগুনের শিখা যদি খেয়াল করেন, তাহলে দেখতে পাবেন শিখা নীলাভ ছিল। ফুয়েল এত বেশি ছিল যে পুড়ে ক্ষয়প্রাপ্ত পর্যায়ে আসতে অনেক সময় লেগেছে। খুব অল্পতেই ডেভেলপ স্টেজে ছিল। যার কারণে আমাদের খুব বেগ পেতে হয়েছে।”
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “ভবনটা যদি খেয়াল করেন, দুই দিক থেকে এটি খোলা। কিন্তু বাদ বাকি দুই দিকটা যে সেইফ গার্ড দরকার, মানে বিল্ডিং কোডের যে নিয়ম সে নিয়ম মেনে করা হয়নি।
“পাশের ভবনটা ছিল খুবই সন্নিকটে। এটার সেইফ গার্ডটা ছিল না। যার কারণে ফায়ার ফাইটাররা ওখানে পজিশন নিতে পারেননি।”
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর কারখানা ভবনটির পরিস্থিতি জানিয়ে তিনি বলেন, “এই ভবনটি দীর্ঘক্ষণ ধরে পুড়ছিল। ৮০০ থেকে ১ হাজার ডিগ্রি সিসি তাপমাত্রা হলে যা হয়, আরসিসি কলামের স্ট্র্যেংথ ছেড়ে দিয়েছে। বিশেষ করে পঞ্চম তলা থেকে অষ্টম তলা স্যান্ডউইচ হয়ে ফ্লোরগুলো সব একাকার হয়ে গেছে এবং ভেঙে এটা নিচে পড়েছে।
“যার কারণে আমাদের জন্য কষ্টসাধ্য ছিল। দূরত্ব বজায় রেখে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কার্যক্রম করেছি। এতে আমাদের একটু সময় লেগেছে। তবে আমাদের কারো কোন ক্ষতি হয়নি।”
তিনি বলেন, “এই ভবনটি ছাড়া আরেকটি ভবনের কিছু ক্ষতি হয়েছে। এক চতুর্থাংশ ক্ষতি হয়েছে, উপর থেকে ভগ্নাংশ পড়ে। তবে সিইপিজেডের অন্য কোন ভবনকে এই আগুনের সাথে লিংক হতে আমরা দিইনি। রাসায়নিক ও মিশ্র আগুন হওয়া স্বত্ত্বেও এটা লিংক করে অন্য কোন ভবনে যায়নি। এটা আমাদের বড় সফলতা।
“অন্যান্য ভবনের যাদের কমপ্লায়েন্স নেই তারা যেন দ্রুত কমপ্লায়েন্সে চলে আসে। যাতে করে আর এ ধরণের সম্পদ বিনষ্ট না হয়। এটা শুধু মালিকের না দেশের ক্ষতি। প্রাণ রক্ষা ও সম্পদ যেন বাঁচে।”
আগুনের কারণ অনুসন্ধানে একটি ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে জানিয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “এটা তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা কারণ বলতে পারছি না। কমিটিকে ১৫ কার্য দিবস সময় দেয়া হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে।
“এখানে কোন মৃত্যু বা আহত নেই। এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য নেই। কোন ধরণের ক্যাজুয়ালটি হয়নি।”
অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখায় ইপিজেড কর্তৃপক্ষ, সেনা বাহিনী, নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, আনসার আগুন নির্বাপনে সবাই সহযোগিতা করায় তাদের ধন্যবাদ জানান ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী।
