উত্তর-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে আড়াই হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ খাঁড়িগুলো পরীক্ষা করে সমুদ্রের গভীরে এমন প্রাণের সন্ধান পেয়েছেন গবেষকরা।

সমুদ্রের তলদেশে অদ্ভুত প্রাণী খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের দাবি, প্রাণ সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের বর্তমান ধারণাকে আমূল বদলে দিতে পারে এটি।
প্রশান্ত মহাসাগরের প্রায় ১০ হাজার মিটার গভীরে ডুব দিয়ে ‘টিউব ওয়ার্ম’ ও শামুক জাতীয় প্রাণী খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে, এসব প্রাণী শক্তি সংগ্রহ করে মূলত রাসায়নিক বিক্রিয়া থেকে।
এ থেকে ইঙ্গিত মেলে, আমাদের ধারণার চেয়েও কঠিন পরিবেশে প্রাণ টিকে থাকতে ও বিকাশ লাভ করতে পারে এবং এমন আরও অনেক অদ্ভুত প্রাণী ভবিষ্যতে খুঁজে পাওয়াও যেতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট।
কয়েকজন গবেষক বলছেন, এই ধরনের চরম পরিবেশে টিকে থাকা প্রাণীদের অধ্যয়ন করলে শুধু পৃথিবী নয়, মহাবিশ্বের অন্য কোথাও, যেমন ভিনগ্রহে, জীবনের অস্তিত্ব সম্পর্কে মূল্যবান ধারণা পাওয়া যেতে পারে। এমনকি, একে ঘিরেই গড়ে উঠতে পারে ভিনগ্রহে প্রাণ অনুসন্ধানের নতুন পদ্ধতি।
গবেষকরা বলছেন, চরম পরিবেশে বাস করা প্রাণীদের টিকে থাকার জন্য বিকল্প শক্তির উৎস খুঁজে নিতে হয়। আমাদের পরিচিত বেশিরভাগ প্রাণী সূর্যের আলো ব্যবহার করে সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে শক্তি তৈরি করে বাঁচে। কিন্তু গভীর সমুদ্রের এসব প্রাণী সূর্যের আলো থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত।
ফলে তারা শক্তি সংগ্রহের জন্য ব্যবহার করে ‘কেমোসিনথেসিস’ নামের একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে তারা চারপাশের রাসায়নিক উপাদান থেকে শক্তি উৎপাদন করে বেঁচে থাকে। এটি প্রাণের বিকাশের এক ভিন্নধর্মী পথ, যা পৃথিবীর বাইরের জীবন নিয়েও নতুন ভাবনার জন্ম দেয়।
এ কেমোসিনথেসিসনির্ভর অনেক জীব সম্প্রদায় সমুদ্রের গভীরে পাওয়া যেতে পারে, যা সমুদ্রতলের ফাটল থেকে বের হওয়া হাইড্রোজেন সালফাইড ও মিথেন গ্যাস থেকে শক্তি নিয়ে বৃদ্ধি পায় ও বেঁচে থাকে এরা।
উত্তর-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে দুই হাজার পাঁচশ কিলোমিটার দীর্ঘ খাঁড়িগুলো পরীক্ষা করে সমুদ্রের গভীরে এমন প্রাণের সন্ধান পেয়েছেন গবেষকরা।
গবেষণার ফলাফল প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার’-এ। গবেষণার জন্য পানির নিচে চলে ‘ফেনদৌঝে’ নামের এক ডুবোযান ব্যবহার করে সমুদ্রের গভীরে কয়েক ঘণ্টা ধরে কাজ করেছেন গবেষকরা।
গবেষণায় খুঁজে পাওয়া প্রাণীদের ‘সমৃদ্ধ সম্প্রদায়’ হিসেবে বর্ণনা করেছে ‘চাইনিজ একাডেমি অফ সায়েন্সেস’-এর ‘ইনস্টিটিউট অফ ডিপ সি সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং’য়ের গবেষকদের তৈরি দলটি।
গবেষণাটির প্রধান গবেষক ড. শিয়াওটং পেং বলেন, “এটি একটি রোমাঞ্চকর গবেষণা, বিশেষত যেখানে কখনও মানুষের পা পড়েনি, এমন গভীর জায়গায় যেসব সমুদ্রবিজ্ঞানী অনুসন্ধান চালান, তাদের জন্য।
নতুন কিছু আবিষ্কারের এ এক অনন্য সুযোগ, আর আমরা যা পেয়েছি তা সত্যিই বিষ্ময়কর।”
“অতল সমুদ্রের উচ্চচাপের পরিবেশে টিকে থাকতে এই প্রাণীদের বিশেষ অভিযোজন ক্ষমতা থাকতেই হবে,” বলেন ড. মেগ্রান ডু। “এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কৌশল কী? সেটাই আমরা খুঁজছি।”
এই অদ্ভুত প্রাণীর খোঁজ বিজ্ঞানীদের দীর্ঘদিনের ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছে। যে ধারণা অনুসারে এত গভীর, চরম চাপের পরিবেশে প্রাণ টিকে থাকা সম্ভব নয়।
গবেষকরা বলছেন, এই জীব কেবল বিরলই নয়, বরং সমুদ্রের অতল গহ্বরে বিস্তৃত পরিসরে ছড়িয়ে রয়েছে—যা গভীর সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়ায় নতুন আলো ফেলেছে।