“একটা কাঠামো কাজ করছে না, সেই কাঠামো ভাঙতে গিয়ে এই সনদ আরেকটা নতুন কাঠামো তৈরি করেছে। যেটা সংস্কারের ক্ষেত্রে একটা অচল অবস্থা তৈরি করতে পারে,” বলেন জোবাইদা নাসরীন।
সংগৃহিত
যে জুলাই আন্দোলনকারীদের দাবিতে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন করা হয়েছে, তাদের বয়কট আর বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে ধোঁয়াশার মধ্যে সই হল রাষ্ট্র সংস্কারের এই রাজনৈতিক দলিল।
শুক্রবার ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ সঙ্গে পুলিশের সংঘাত আর বৃষ্টির কারণে বিলম্বে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে জুলাই সনদে সই করেছে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং ২৪টি রাজনৈতিক দল।
সনদ নিয়ে মতভিন্নতা নিরসন না হওয়ায় সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেয়নি জুলাই অভ্যুত্থানে সামনের সারির নেতাদের উদ্যোগে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং বাম ও মধ্যপন্থি পাঁচ রাজনৈতিক দল।
আমন্ত্রিত অতিথিদের সামনে বিএনপি-জামায়াতসহ রাজনৈতিক দলের নেতারা জুলাই সনদে সই করলেও জুলাই সনদ কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, সেটা নিয়ে তাদের মতভিন্নতা রয়ে গেছে।
‘ঐতিহাসিক দলিল’ হিসেবে অভিহিত করে জুলাই সনদকে বড় ধরনের ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছেন স্বাক্ষরকারী সরকার পক্ষ ও রাজনৈতিক দলের নেতারা।
তবে, জুলাই সনদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশ্লেষকদের কারও কারও মনে সন্দেহ জাগছে।
জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরের মাধ্যমে ‘নবজন্ম হল’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি, প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেছেন, “এ স্বাক্ষরের মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করলাম। এটা শুধু জাতির জন্য নয়, সারা পৃথিবীর জন্য একটা বড় রকমের উদাহরণ হয়ে থাকবে।”
অন্যদিকে, ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেছেন, মতপার্থক্য থাকলেও রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যে এই সনদের বাস্তবায়ন দ্রুততার সঙ্গে ঘটবে।
জুলাই সনদ স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের শুরু হল বলে মনে করছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সনদ বাস্তবায়নে দেরি হলে দেশে রাজনৈতিক সংকটের ‘আশঙ্কা’ দেখছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
জুলাই সনদে জাতীয় মূলনীতি পাল্টে দেওয়া এবং ইতিহাসে মুছে দেওয়ার উদাহরণ টেনে রাজনীতি বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরীন বলেছেন, “একটা কাঠামো কাজ করছে না, সেই কাঠামো ভাঙতে গিয়ে এই সনদ আরেকটা নতুন কাঠামো তৈরি করেছে। যেটা সংস্কারের ক্ষেত্রে একটা অচল অবস্থা তৈরি করতে পারে।
“সুতরাং জনগণের উপরেই নির্ভর করবে তারা এই দেয়ালটা কতটা ভাঙতে পারে, কারণ এই যে একটা সংস্কারের চিন্তা বা একটা অচল প্রতিষ্ঠানকে সচল করার যে আকাঙ্ক্ষা সেটা নির্ভর করবে জনগণ পরবর্তীতে নির্বাচিত সরকারের উপর কতটা চাপ তৈরি করতে পারে, সেটার উপর।”
দল হিসাব করে অনেক সংখ্যা দেখানো হলেও বহু রাজনৈতিক দলের নাম জনগণ না জানার কথা তুলে ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক বলেন, “এখন একটা বিষয় হল যে, এই সনদ কাদের সঙ্গে বসে করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে এই যে ৩০টি রাজনৈতিক দল।
“সাধারণ মানুষ প্রতিটা দলের নাম জানে? এই ২৫টা দল বেশিরভাগ দলেই হয় নতুন হয়েছে, না হয় নামমাত্র ছিল। সুতরাং আপনার রাজনৈতিক দল কতটা হয়েছে, সেটা দিয়ে কোনোভাবেই জুলাই সনদের বৈধতা মিলে না। যতক্ষণ পর্যন্ত সেটা, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ সেটাকে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্যতার দিকে না নিয়ে যায়।”
জনগণের সম্মতি পেতে গণভোট আয়োজনের বিষয়ে এক প্রশ্নে জোবাইদা নাসরীন বলেন, জুলাই সনদের বিষয়ে জনগণকে সম্পৃক্ত করার কাজটা করা হয়নি। এই যে সনদ পড়ে রায় দেবে, বাংলাদেশে কত শতাংশ মানুষ পড়াশোনা জানে? কত শতাংশ মানুষ এত পৃষ্ঠা পড়ে মতামত দিবে? কত শতাংশ মানুষ আসলে এটি বুঝবে?
“বুঝবে মানে, যে ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, বইয়ের ভাষা। সুতরাং এটি কোনোভাবেই জনগণ-বান্ধব বা আমরা যেটা বলছি, জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার মত সনদ নয়।”
পাঁচটি রাজনৈতিক দল ও বিশেষ করে এনসিপি অনুষ্ঠানে না আসায় ‘সামান্য অপূর্ণতা থাকলেও’ সার্বিকভাবে জুলাই সনদকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন আরেক রাজনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক কাজী মাহবুবুর রহমান।
তিনি বলেন, “আজকে ২৪টা দল সনদে সই করেছে, এটা তো একটা আশা তৈরি করেছে। অবশ্যই অধিকাংশ দলতো সনদে স্বাক্ষর করেছে এবং সনদে স্বাক্ষর করার টাইমও তো আছে। যেহেতু পরেও স্বাক্ষর করতে পারবে। বিশেষ করে জুলাই আন্দোলনের অগ্রভাগে যারা ছিল, তারা উপস্থিত থাকলে ভালো লাগত। কারণ গণভুত্থান তাদের নেতৃত্বে হয়েছে, যাদের নেতৃত্বে হয়েছে তারা যদি জুলাই সনদে না থাকে তাহলে তো জুলাই সনদে সামান্য অপূর্ণতা থেকেই যায়।”
“এই অপূর্ণতাসহ আমি মনে করি যে, যেহেতু তারা পুরো প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেছে, তারা অবশ্যই পরবর্তীতে তাদের যে সকল আপত্তিগুলো আছে, সেগুলো সমাধান হলে তারা জুলাই সনদ স্বাক্ষর করবে।”
রাজনৈতিক সমঝোতার ক্ষেত্রে জুলাই সনদের প্রক্রিয়াকে নতুন বার্তা হিসাবে অভিহিত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, “জুলাই সনদ তো আসলে প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো, ঐকমত্য কমিশন, সরকার-এদের মধ্যে যে একটা ঐকমত্য হওয়া যায়, পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছা যায়, এটার একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশ। এটা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নতুন ধারা তৈরি করেছে।”
বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে বিতর্ক প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটা নিরসন হয়ে যাবে। এতটুকু পর্যাপ্ত চলে আসছে সবাই আলোচনা করে। আমার কাছে মনে হচ্ছে, যেখানে জুলাই সনদে আমরা একমত হতে পেরেছি, সেখানে বাস্তবায়নের বিষয়গুলো সমাধান হয়েই যাবে। এটা অপূর্ণ থাকবে না। খুব দ্রুত আমরা দেখব যে, প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্ব কোনো একটা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সেটা সমাধান হয়ে যাবে।”
গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদের ভিত্তি তৈরির বিষয়ে যে আলোচনা, সে প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “অবশ্যই গণভোটের মাধ্যমে হতে হবে। কারণ গণভোট খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, নাগরিকের সম্মতি আছে কিনা সেটা যাচাই করতেই হবে। নাগরিকের সম্মতি ছাড়া এটা কোনোভাবে সম্ভব না। জনগণ যদি সম্মতি না দেয় কোনো কিছুই সাংবিধানিক আইনে রূপান্তরিত হয় না “
যেভাবে হল সনদ সইয়ের আনুষ্ঠানিকতা
শুক্রবার বিকাল ৫টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষরের এই আনুষ্ঠানিতা সারা হয়। বিকাল ৪টায় এ অনুষ্ঠান শুরুর করা থাকলেও বৃষ্টির কারণে তা আধা ঘণ্টার বেশি বিলম্বিত হয়।
ঠিক সাড়ে ৪টায় ব্যান্ডদলের বাদ্যের তালে মঞ্চে এসে উপস্থিত হন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তাকে স্বাগত জানান ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ।
অনুষ্ঠান মঞ্চে তার সঙ্গী হন জুলাই সনদ প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা। বিকাল ৪টা ৩৭ মিনিটে জাতীয় সংগীতে শুরু হয় অনুষ্ঠান।
এরপর জুলাই সনদ প্রণয়নে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনায় মূল দায়িত্ব পালন করা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজের বক্তব্য দেন।
তিনি বলেন, “আজকে এ দিন দেশের ইতিহাসের একটি অভূতপূর্ব ও অনন্য সময়। একটি ক্রান্তিকালে দেশের জন্য দীর্ঘপথ যাত্রার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক।”
ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি, প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে কমিশনের সদস্যরা এবং ২৪টি রাজনৈতিক দলের নেতারা সনদে সই করেন।
কূটনীতিক ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার আমন্ত্রিত প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
দর্শক সারিতে দেখা গেছে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁনকেও। ছিলেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরাও।
‘জুলাই যোদ্ধাদের’ সঙ্গে সংঘাত, শেষ মুহূর্তেও সংশোধন
জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, আইনি সুরক্ষা, পুনর্বাসনের দাবিতে এদিন দুপুরে ‘জুলাই যোদ্ধা’ ব্যানারে একদল লোক জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মঞ্চের সামনে এসে অবস্থান নেন।
অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ মঞ্চে এসে তাদের দাবি পূরণে জুলাই সনদে সংশোধনী আনার ঘোষণা দেন।
সে প্রতিশ্রুতির পরও ‘জুলাই যোদ্ধারা’ সেখান থেকে না সরলে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে ও লাঠিপেটা করে সেখান থেকে তাদের সরিয়ে দেয়। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেডও ব্যবহার করে পুলিশ।
এ সময় ‘জুলাই যোদ্ধারা’ সংসদ ভবনের বাইরে কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করে। সড়কে টায়ার ও কাঠ এবং অনুষ্ঠানের জন্য বাইরে বানানো ছোট ছোট তাঁবু একসঙ্গে করে তারা আগুন ধরিয়ে দেন।
পুলিশের লাঠিপেটায় আহত কয়েকজনকে এ সময় হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধাওয়ায় বিক্ষোভকারীরা খামারবাড়ি মোড় ও আসাদ গেইটের দিকে অবস্থান নেন।
এরপর জুলাই সনদ স্বাক্ষরের আগ মুহূর্তে সনদের পঞ্চম দফাতে পরিবর্তন আনার কথা জানায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তা জানানোর আগে জুলাই সনদ সইয়ের অনুষ্ঠান মঞ্চে এসে সংশোধনের ঘোষণা দেন কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ।
সংশোধিত রূপটি এই রকম: “গণঅভ্যুত্থানপূর্ব বাংলাদেশে ১৬ বছরের আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামে গুম, খুন ও নির্যাতনের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের এবং ২০২৪ সালের জুলাই-অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানকালে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্যদের দ্বারা সংঘটিত সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার, শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান ও শহীদ পরিবারকে এবং জুলাই আহতদের রাষ্ট্রীয় বীর, আহত জুলাই বীর যোদ্ধাদের যথোপযুক্ত সহায়তা প্রদান যেমন মাসিক ভাতা, সুচিকিৎসা, পুনর্বাসন ব্যবস্থা এবং শহীদ পরিবার ও আহত বীর যোদ্ধাদের আইনগত দায়মুক্তি, মৌলিক অধিকার সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবো।”
যা আগে ছিল, “গণঅভ্যুত্থানপূর্ব ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামে গুম, খুন ও নির্যাতনের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের এবং ২০২৪ সালের জুলাই-অগাস্টের গণঅভ্যুত্থানকালে সংঘটিত সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার, শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান ও শহীদ পরিবারগুলোকে যথোপযুক্ত সহায়তা প্রদান এবং আহতদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করবো।”
এদিকে, ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ উপর পুলিশের হামলায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, “এরা জালিমের হাতে মার খেয়েছে, আজকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পুলিশের হাতে যদি মার খায়, এই লজ্জা আমি কোথায় রাখব।”
সনদে সই করলেন যারা
রাজনৈতিক দলের স্বাক্ষরকারী-
১. বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ
২. জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার
৩. লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নেয়ামুল বশির
৪. খেলাফত মজলিস আমির আব্দুল বাছিত আজাদ এবং মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের
৫. রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম ও মিডিয়া সমন্বয়ক সৈয়দ হাসিবউদ্দীন
৬. আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ
৭. নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ও সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার
৮. জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ ও মহাসচিব মোমিনুল আমিন
৯. বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির ইউসুফ আশরাফ ও মহাসচিব জালালুদ্দীন আহমদ
১০. গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল
১১. জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন ও সিনিয়র সহসভাপতি তানিয়া রব
১২. গণঅধিকার পরিষদের (জিওপি) সভাপতি নুরুল হক নুর ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ রাশেদ খাঁন
১৩. বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ও রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য বহ্নিশিখা জামালী
১৪. জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ফরিদুজ্জামান ফরহাদ এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান
১৫. ১২ দলীয় জোট প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার, জোটের মুখপাত্র শাহাদাত হোসেন সেলিম
১৬. ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান
১৭. জাকের পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া ও জহিরুল হাসান শেখ
১৮. জাতীয় গণফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক আমিনুল হক টিপু বিশ্বাস ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মঞ্জুরুল আরেফিন লিটু বিশ্বাস
১৯. বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সিনিয়র নায়েবে আমির আবদুল মাজেদ আতহারী ও মহাসচিব মুসা বিন ইযহার
২০. বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব খন্দকার মিরাজুল ইসলাম
২১. ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম (বাবলু) ও মহাসচিব মোহাম্মদ আবু ইউসুফ (সেলিম)
২২. জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি আব্দুর রব ইউসুফী ও মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী
২৩. ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের ও মহাসচিব সাখাওয়াত হোসাইন রাজী
২৪. আমজনতার দল সভাপতি মিয়া মশিউজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ তারেক রহমান
সরকারের পক্ষে-
১. জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি, প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস
২. জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ
৩. জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্য মো. আইয়ুব মিয়া
৪. জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন
৫. জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার
৬. জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান, বিচারপতি এমদাদুল হক
৭. জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান।
যে কারণে সনদে সই করেনি ছয় দল
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম পর্যায়ের সংলাপে ৩৩ দল ও জোট যোগ নিলেও পরের ধাপে ৩০টি অংশ নেয়। তাদের মধ্যে ২৪ দল ও জোট সনদে সই করেছে।
দুটি পৃথক অবস্থান থেকে জুলাই সনদে সই করেনি এনসিপি, বাম ধারার চার রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল–বাসদ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) ও বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল–বাংলাদেশ জাসদ ও গণফোরাম।
আর গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. মিজানুর রহমান অনুষ্ঠানে এলেও সনদে সই করেননি চূড়ান্ত সনদের কিছু বিষয় নিয়ে মতভিন্নতার কারণে।
জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির নিশ্চয়তা এবং সেই ভিত্তি দেওয়ার ধরণ সম্পর্কে পূর্ব ধারণা না পেলে সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে না থাকার ঘোষণা আগের দিন বৃহস্পতিবারই দিয়েছিলেন এনসিপির সভাপতি নাহিদ ইসলাম।
তিনি বলেন, যেই আইনি ভিত্তির কথা এনসিপি বলেছিল, সেই আদেশ জারির আগে এমন স্বাক্ষর একটি আনুষ্ঠানিকতা। জুলাই সনদ ইতোমধ্যেই প্রণীত হয়েছে। সেই সাংবিধানিক আদেশের ভিত্তিতে গণভোট হবে এবং পুরো প্রক্রিয়া আগাবে।
এর আগে জুলাই ঘোষণাপত্রেরও ‘আইনি ভিত্তি’ দেওয়ার কথা বলার কথা তুলে ধরে নাহিদ বলেন, “সেটা হয়নি। জুলাই ঘোষণাপত্রের টেক্সট বা শব্দচয়নেও একটা একটা প্রতারণা করা হয়েছে। সেটা আমাদেরকে দেখানো হয়নি। আগে যেটা দেখানো হয়েছে ঘোষণাপত্র পাঠের সময় সেটা অনেক পরিবর্তিত ছিল এবং অনেক কমপ্রোমাইজ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
“ফলে আমরা আরেকটা ঘটনার সাক্ষী হতে চাই না যেটার কোনো মিনিং নাই। আমরা আইনি ভিত্তি ও আদেশের নিশ্চিয়তা ছাড়া সনদে স্বাক্ষর করলে মূল্যহীন হবে। পরবর্তীতে সরকার কিসের ভিত্তিতে আদেশ দেবে সেই নিশ্চিয়তা পাচ্ছি না। এই বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা জুলাই সনদে স্বাক্ষরের অনুষ্ঠানে অংশীদার হব না।”
শুক্রবার সনদ সইয়ের অনুষ্ঠানে আগে আগে এক সমাবেশে অন্তর্বর্তী সরকার ছেড়ে রাজনীতিতে নামা নাহিদ বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্যের’ নামে কিছু রাজনৈতিক দল জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে একটি কাগজে স্বাক্ষর করছে।
তিনি বলেন, “কিছু মানুষ মনে করে কয়েকটি দল একত্রিত হলেই বোধ হয় জাতীয় ঐক্য হয়ে যায়। আজকেও জুলাই সনদ নামে একটা সনদে কিছু রাজনৈতিক দল একত্রিত হয়ে স্বাক্ষর করবে এবং এর নাম তারা দিতে চায় জাতীয় ঐক্য।
“আমরা মনে করি এটা কোনো জাতীয় ঐক্য নয়। যেখানে ছাত্র-শ্রমিক ও নানান পেশাজীবী মানুষ একত্রে অবস্থান করবে, সেটাই হবে জাতীয় ঐক্য।”
অন্যদিকে, বিদ্যমান সংবিধানের চার মূলনীতি ও স্বাধীনতার ঘোষণা বাদ দেওয়া, মৌলিক অধিকার পরিপন্থি অঙ্গীকার রাখাসহ সাত কারণে তারা সনদে স্বাক্ষর না করার কথা বলেছে বামপন্থি চারটি দল।
দলগুলোর তরফে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তিকে প্রকারন্তরে ‘অস্বীকার’ করা হচ্ছে এই সনদে। আদালতে প্রশ্ন করা যাবে না, এমন বিষয়ে অঙ্গীকার করে সনদে স্বাক্ষর করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, বিদ্যমান সংবিধানের চার মূলনীতি- গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ এবং ১৫০(২) অনুচ্ছেদের ক্রান্তিকালীন বিধানের তফসিল পরিবর্তনে সম্মতি প্রদান ও আদালতে প্রশ্ন করা যাবে না, বলে অঙ্গীকার করতে হয় যে সনদে তাতে ভিন্নমত দিয়ে চার দল স্বাক্ষর করতে পারে না।
সনদ স্বাক্ষরের প্রতিক্রিয়ায় দলগুলোর তরফে বলা হয়েছে, তাদের আপত্তির বিষয়গুলো জনগণের সামনে তুলে ধরে তারা আন্দোলনে নামবে।
তার আগে বুধবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি মুহাম্মদ ইউনূসের ডাকা জরুরি বৈঠকের পর গণফোরাম চার বাম দলের সঙ্গে একই কারণ দেখিয়ে সনদে স্বাক্ষর না করার কথা বলেছিল।