নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ঘিরে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অঙ্গনে ফের উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে ঘোষিত ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ ঘিরে দলটির অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং সরকার নিয়ে ক্রমবর্ধমান হতাশা এখন প্রকাশ্যে।

এই প্রেক্ষাপটে ইউনূস সরকারের নীতি ও দিকনির্দেশনা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন এনসিপির শীর্ষ চার নেতা। তারা হলেন- জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) চার শীর্ষ নেতা তাসনীম জারা, হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম এবং নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী। ৫ আগস্ট সকালে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অংশ না নিয়ে বিমানযোগে কক্সবাজার যান তারা। সেখানে রয়েল টিউলিপ হোটেলে গোপন বৈঠকে অংশ নেন। বিশ্লেষকদের মতে, এনসিপি বর্তমানে রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা সংকটে পড়েছে এবং বিদেশি দিকনির্দেশনার উপর নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে।

সাংবাদিক নাজমুস সাকিব তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, এ মুহূর্তে কক্সবাজারের রয়েল টিউলিপ হোটেলের (যেটি সি পার্ল বিচ রিসোর্ট হিসেবেও পরিচিত) একটা কক্ষে গোপন বৈঠকে বসেছেন এনসিপির হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম, নাসিরুদ্দিন পাটওয়ারী, এবং তাসনিম জারা। তাদের এ গোপন বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতির রহস্য পুরুষ, সাবেক মার্কিন অ্যাম্বাসেডর পিটার হাস এর সাথে। কোন ষড়যন্ত্রের জাল বুনছেন তারা? কক্সবাজারের সাংবাদিক ভাইদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

তার পোস্টে আরও বলা হয়, তাদের এ কক্সবাজার যাত্রার ব্যাপারে জেলা পুলিশকে আগে থেকে অবহিত করা হয়নি। পুলিশের আইজি বাহারের স্ত্রী হেলেন নিজের মোবাইল থেকে কক্সবাজার জেলা স্পেশাল ব্রাঞ্চের পুলিশকে ফোন করে তাদের প্রটোকল নিশ্চিত করেন। তারা পিটার হাসকে অনুরোধ করছেন যেন তিনি ড. ইউনূসকে আজ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা থেকে বিরত রাখার ব্যবস্থা করেন। ইতিমধ্যেই সাংবাদিক ও বিএনপির অনেক নেতাকর্মীর হোটেলের আশেপাশে ও এয়ারপোর্টে অবস্থানের তথ্য পেয়েছি।

নেতৃত্বে কোন্দল, চাঁদাবাজির অভিযোগ

গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করা এনসিপি এখন নানা বিতর্কের কেন্দ্রে। দলটির বিরুদ্ধে অর্থ কেলেঙ্কারি, চাঁদাবাজি ও অস্বচ্ছ অর্থব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠেছে। গুলশানে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদা চাইতে গিয়ে দলের তিন নেতা পুলিশের হাতে আটক হওয়ার ঘটনায় বিতর্ক আরও বাড়ে।

দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’র অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা দেন। তিনি অভিযোগ করেন, অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শহীদ পরিবার ও নেতা-কর্মীদের যথাযথ সম্মান না দিয়েই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হচ্ছে।

বিদেশ সফর ও রাষ্ট্রীয় ব্যয়ের সমালোচনা

সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্না অভিযোগ করেছেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ উপলক্ষে ১৬টি বিশেষ ট্রেন ভাড়া করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে, যার ব্যয় প্রায় ৩০ লাখ টাকা। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “একজন অনির্বাচিত সরকারের জন্য জনগণের করের টাকা কেন ব্যয় হবে?” এছাড়াও ড. ইউনূসের ১১টি বিদেশ সফরের বেশিরভাগই ব্যক্তিগত হলেও রাষ্ট্রীয় খরচে তা পরিচালিত হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

ইউনূসের দেশত্যাগ ও পদত্যাগের গুঞ্জন

বিশ্লেষকদের মতে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ড. ইউনূস পদত্যাগ করতে পারেন—যা অন্তর্বর্তী সরকারে বড় ধরনের ছন্দপতন ঘটাতে পারে। সূত্র বলছে, ইউনূসের ফ্রান্সে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা রয়েছে। এখন অপেক্ষা শুধু আমেরিকান গ্রিন সিগনালের।   

বিশ্লেষকেরা বলছেন, কোনো রাজনৈতিক দল জনগণের স্বার্থের চেয়ে বিদেশি সমর্থন নির্ভর কৌশল বেছে নেয়, তবে তাদের জনসমর্থন ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। ইউনূস সরকারের পক্ষপাতমূলক আচরণ এবং রোডম্যাপহীন রাজনৈতিক পরিবেশ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।