“আমাদের দাবি সরকার না মানা পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকব।”
হতে সংগৃহিত
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও নিয়োগ না পাওয়া প্রার্থীরা ‘বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি’ জারির দাবিতে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) দপ্তরের সামনে অবস্থান নিয়েছেন।
আন্দোলনরত প্রার্থীদের প্রতিনিধি আক্তারুজ্জামান সোমবার দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তাদের এটি প্রতিনিধি দলকে ভেতরে ডাকার হয়েছে। বৈঠকে কী ফল আসে, তা জানার অপেক্ষায় রয়েছেন তারা।
“আমাদের দাবি যদি মেনে নেওয়া হয়, আমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করব। না হলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাব।
১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েও ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগ সুপারিশ না পাওয়া প্রার্থীরা রোববার সারাদিন শাহবাগে ‘মহাসমাবেশ ও বিক্ষোভ’ কর্মসূচি পালন করেন।
এরপর রাতে প্রজ্বালিত মোমবাতি হাতে শাহবাগে মিছিল করেন। জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে মিছিলটি টিএসসি মোড় ঘুরে আবার জাদুঘরে ফিরে আসে। পরে সেখানে কিছু সময় অবস্থান করেন তারা।
নিয়োগ প্রার্থীদের নেতা খোরশেদ আলম সে সময় ঘোষণা দেন, সোমবার সকালে এনটিআরসিএ কার্যালয়ের দিকে ‘লং মার্চ’ করবেন তারা।বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি জারি না করলে এনটিআরসিএ কার্যালয় বন্ধ করে দেওয়ারও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
খোরশেদ আলম বলেন, বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজে শিক্ষক ও প্রভাষক পদে নিয়োগ পেতে ১৮ লাখ ৬৫ হাজার আবেদনকারীর মধ্যে ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় ৬০ হাজার ৫২১ জন প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
“গত জুন মাসে ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি জারি হলে আমরাও আবেদন করি। গণবিজ্ঞপ্তির ফলাফল অনুযায়ী লক্ষাধিক পদের বিপরীতে মাত্র ৪১ লাখ ৬২৭ জন প্রার্থী সুপারিশপ্রাপ্ত হয়। এত বিপুল সংখক শূন্য পদ থাকা সত্ত্বেও আমরা ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১৬ হাজার ২১৩ জন প্রার্থীর শিক্ষক পদে নিয়োগ সুপারিশ পাইনি।”
এই গণবিজ্ঞপ্তিতে শূন্য থাকা পদের সঙ্গে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত শূন্য পদ যুক্ত করে তাদের নিয়োগ দিতে অক্টোবরের মধ্যেই বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি চাইছেন আন্দোলনকারীরা।
খোরশেদ আলম বলেন, “এনটিআরসিএ বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি দিলে আমরা যারা উত্তীর্ণ প্রার্থী, তারা শিক্ষকতার সুযোগ পাব।”
দুই দফা দাবি–
১. এ বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শূন্যপদ যুক্ত করে দ্রুত সময়ের মধ্যে ‘বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি’ দিতে হবে।
২. নীতিমালা পরিবর্তনের আগে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ ও সুপারিশবঞ্চিত ১৬,২১৩ জন প্রার্থীর বিষয়ভিত্তিক তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে নিয়োগ দিতে হবে।
আন্দোলনরত প্রার্থীরা ঘোষণা অনুযায়ী সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করলে চার দিনে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় আশপাশের সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
এ সময় ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাই নাই’, ‘দালালি না মেধা, মেধা, মেধা’, ‘থাকার কথা পাঠশালায়, আমরা কেন রাস্তায়’, তুমি কে আমি কে, সনদধারী, সনদধারী’–ইত্যাদি স্লোগান দিচ্ছিলেন আন্দোলনকারীরা।
বেলা ১২টার দিকে তারা শাহবাগের অবস্থান ছেড়ে মিছিল নিয়ে ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ের দিকে যান। সেখান থেকে এগিয়ে যান বাংলামোটরের দিকে। তাদের এই মিছিলের কারণে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে যান চলাচল ব্যহত হয়।
পরে বাংলামোটর ঘুরে তারা পরীবাগে এনটিআরসিএ ভবনের সামনে অবস্থান নেন। পকে পর্যায়ে তাদের একটি প্রতিনিধি দলকে উপরে ডেকে নেওয়া হয়।
আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি আলতাফ রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা গতকাল থেকে আন্দোলন করে যাচ্ছি। আমাদের দাবি সরকার না মানা পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকব।”
গত ১৬ জুন জারি করা ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিভিন্ন এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শূন্য থাকা ১ লাখ ৮২২টি শিক্ষক পদে নিয়োগের আবেদন চায় এনটিআরসিএ। ২২ জুন থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত চলে আবেদন প্রক্রিয়া।
গত ১৯ অগাস্ট ৪১ হাজার ৬২৭ জন প্রার্থীকে নিয়োগ সুপারিশ করে গণবিজ্ঞপ্তির ফল প্রকাশ করা হয়। গত ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সুপারিশ পাওয়া প্রার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক পদে যোগ দেওয়ার সুযোগ ছিল।
৩০ সেপ্টেম্বর এনটিআরসিএ আয়োজিত এক কর্মশালায় সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, “খালি চোখে মনে হয় বিপুল পদ খালি, এদিকে প্রার্থীরাও সুপারিশ পাননি, কিন্তু বিষয়টি এমন না। কারণ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় প্রার্থীরা কোনো একটি নির্দিষ্ট পদের বিপরীতে উত্তীর্ণ হন।
“দেখা যায় একটি বিষয়ে প্রার্থী বেশি কিন্তু পদ কম, এ ক্ষেত্রে সুপারিশ না পাওয়া প্রার্থী থেকে যান। আবার আরেকটি বিষয়ে শূন্য পদ বেশি কিন্ত প্রার্থী কম, সে ক্ষেত্রে পদ খালি থেকে যায়।”
