ট্রাম্পের এমন নির্দেশনার পরও গাজায় ইসরায়েল বোমাবর্ষণ করেছে বলে জানা গেছে।

হতে সংগৃহিত
ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস গাজা যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া প্রস্তাবের কিছু শর্ত মানতে ও জিম্মিদের মুক্তি দিতে রাজি হওয়ার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলকে তাৎক্ষণিকভাবে বোমাবর্ষণ বন্ধ করতে বলেছেন।
শুক্রবার ট্রাম্পের এমন নির্দেশনার পরও গাজায় ইসরায়েল বোমাবর্ষণ করেছে বলে জানা গেছে। হামাস কিছু শর্ত মানতে রাজি হলেও তাদের আত্মসমর্পণের বিষয়টি সুরাহা না হওয়ায় মার্কিন পরিকল্পনা আদৌ বাস্তবায়িত হবে কিনা, তা নিয়েও সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।
হামাসের প্রতিক্রিয়ার পর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে তারা ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনার প্রথম পর্ব ‘শিগগির বাস্তবায়নে’ প্রস্তুত।
এরপর ইহুদি সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির রাজনৈতিক মহলও সামরিক বাহিনীকে গাজায় অভিযানের তীব্রতা কমিয়ে আনার নির্দেশ দেয় বলে ইসরায়েলি সংবাধমাধ্যমের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ট্রাম্প এর আগে তার ২০ দফা পরিকল্পনা নিয়ে সিদ্ধান্ত জানাতে হামাসকে রোববার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন, তার কিছুক্ষণ পরই ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীটি তাদের প্রতিক্রিয়া জানায়।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের পরিকল্পনায় গাজায় দ্রুত যুদ্ধবিরতি, ইসরায়েলের হাতে বন্দি ফিলিস্তিনিদের বদলে হামাসের কাছে থাকা সব জিম্মির মুক্তি, গাজা থেকে ধাপে ধাপে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার, হামাসের অস্ত্র সমর্পণ এবং একটি আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষের নেতৃত্বে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে অন্তর্বর্তীকালীন এক সরকার প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে।
এর প্রতিক্রিয়ায় হামাস জানিয়েছে, তারা গাজায় যত দ্রুত সম্ভব যুদ্ধ বন্ধ, বন্দি বিনিময় ও ত্রাণ ঢোকাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়নে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের পাশাপাশি আরব, ইসলামিক দেশ ও আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাচ্ছে।
“প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাবে থাকা বন্দি বিনিময়ের যে ফর্মুলা তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, বন্দি বিনিময়ের ক্ষেত্রে মাঠপর্যায়ের প্রয়োজনীয় শর্ত বাস্তবায়নসহ জীবিত-মৃত সব বন্দিকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি অনুমোদন করা হয়েছে,” বলেছে সশস্ত্র এ গোষ্ঠীটি।
“এই প্রেক্ষিতে (হামাস) আন্দোলন পুরো প্রক্রিয়ার বিস্তারিত নিয়ে আলোচনা করতে মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে শিগগির বসার ব্যাপারে প্রস্তুত থাকার কথাও জানাচ্ছে,” বলেছে তারা।
ফিলিস্তিনি এ স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীটি আরও বলেছে, ফিলিস্তিনিদের ঐকমত্য এবং আরব ও ইসলামিক দেশগুলোর সমর্থনের ভিত্তিতে তারা গাজা ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণভার স্বতন্ত্রদের (টেকনোক্র্যাট) দিয়ে বানানো একটি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরে প্রস্তুত।
গাজায় হামাস আর কোনো ধরনের রাজনৈতিক চর্চা করতে পারবে না, ট্রাম্পের এমন শর্তের ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু না বলে তারা জানিয়েছে, গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে কোনো আলোচনা হলে সেখানে তাদের ‘রাখা এবং কাজ করার সুযোগ দেওয়া উচিত’।
হামাস এর আগেও সব জিম্মিকে মুক্তি এবং গাজার নিয়ন্ত্রণভার অন্যের হাতে ছাড়ার প্রস্তাব দিয়েছিল।
ট্রাম্পের পরিকল্পনার ব্যাপারে তাদের প্রতিক্রিয়ার কপি রয়টার্স দেখেছে। সেখানে হামাসের নিরস্ত্রীকরণ ও গাজাকে পুরোপুরি অসামরিক অঞ্চলে পরিণত করার প্রস্তাব নিয়ে স্পষ্ট কোনো জবাব নেই বলেই জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় হামাসের আত্মসমর্পণের ওপর জোর দিয়ে এলেও অতীতে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী এ গোষ্ঠীটি বলেছিল, আর যাই ঘটুক না কেন, তারা অস্ত্র সমর্পর্ণ করবে না।
তারা গাজা থেকে ধাপে ধাপে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারেরও বিরোধিতা করে আসছে। তারা চাইছে যত দ্রুত সম্ভব সব ইসরায়েলি সেনা যেন ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটি ছাড়ে, এবং আন্তর্জাতিক ত্রাণ প্রবেশের সুযোগ উন্মুক্ত হয়।
হামাসের এ প্রতিক্রিয়ার পরপরই ট্রাম্প বলেন, হামাস দেখিয়েছে তারা দীর্ঘস্থায়ী শান্তির জন্য প্রস্তুত, এখন বল নেতানিয়াহু সরকারের কোর্টে।
“ইসরায়েলকে অবশ্যই অবিলম্বে গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ করতে হবে, যাতে আমরা জিম্মিদের নিরাপদে ও দ্রুত মুক্ত করতে পারি। আমরা এরই মধ্যে বিস্তারিত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনায় ঢুকেছি। এটি কেবল গাজা-সংক্রান্ত বিষয় নয়, বহুল প্রতীক্ষিত মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে,” বলেছেন তিনি।
কিন্তু ট্রাম্পের এ বার্তার পরও ইসরায়েলি ট্যাংকগুলো গাজা সিটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তালাতানি সড়কজুড়ে সমানে গোলাবর্ষণ করেছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা।
হামাসের বিবৃতির পর গাজা সিটিতে ইসরায়েলি বোমাবর্ষণের তীব্রতা বেড়েছে, রেমাল এলাকায় একাধিক বাড়িতে বোমা পড়েছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
খান ইউনিসে হামলা হলেও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি, বলেছেন গাজার বাসিন্দারা।
এদিকে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এক্সে এক পোস্টে বলেছেন, তারা ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনা নিয়ে মধ্যস্থতাকারী মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয়ের কাজ শুরু করেছেন।