“শিক্ষা উপদেষ্টার ওপর শিক্ষকরা আস্থা হারিয়েছেন; আমরা চাই, অর্থ উপদেষ্টা বা উচ্চ পর্যায়ের কেউ আমাদের দাবি মেনে নিক,” বলেন হাবিবুল্লাহ্ রাজু।
হতে সংগৃহিত
বাড়ি ভাড়াসহ বিভিন্ন ভাতা বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা ঢাকায় শহীদ মিনারে সমাবেশ করছেন।
আন্দোলনের নবম দিন সোমবার সকালে এ কর্মসূচি শুরু করেছেন তারা। এর মধ্যে তাদের প্রায় একশজন আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছে।
শিক্ষক সংগঠনের নেতারা আশা করছেন, সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে দাবি মেনে নিয়ে দ্রুতই বিষয়টির ‘সুরাহা’ করা হবে।
মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া ভাতা, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের চিকিৎসাভাতা ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা করা এবং এমপিওভুক্ত কর্মচারীদের উৎসব ভাতা মূল বেতনের ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ শতাংশ করার দাবিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের ব্যানারে গত ১২ অক্টোবর থেকে আন্দোলন চলছে। এর মধ্যে গত ১৭ অক্টোবর সব বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবি যুক্ত করা হয়েছে।
সকালে শহীদ মিনারে ‘সি আর আবরার, আর নাই দরকার’, ‘সি আর আবরার, এই মুহূর্তে গদি ছাড়’, ‘৫ পারসেন্ট না, ২০ পারসেন্ট’—এমনসব স্লোগান দিতে দেখা গেছে শিক্ষক-কর্মচারীদের।
জোটের যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুল্লাহ্ রাজু সোমবার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা আগামী দুইদিন সরকারকে দাবি মেনে নেওয়ার সুযোগ দিচ্ছি। আশা করি, সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে বিষয়টি দ্রুত সুরাহা করা হবে।
“শিক্ষা উপদেষ্টার ওপর শিক্ষকরা আস্থা হারিয়েছেন। আমরা চাই, অর্থ উপদেষ্টা বা উচ্চ পর্যায়ের কেউ আমাদের দাবি মেনে নিক।”
আন্দোলনের মধ্যেই রোববার শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা মূল বেতনের ৫ শতাংশ অথবা সর্বনিম্ন ২ হাজার টাকা নির্ধারণ করে সরকার। তবে শিক্ষক-কর্মচারীরা মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া ভাতার দাবিতে অনড় রয়েছেন।
প্রায় একশ শিক্ষক অনশন করছেন জানিয়ে হাবিবুল্লাহ্ রাজু বলেন, “আমরা ৫ শতাংশ বা ২ হাজার টাকা বাড়িভাড়া ভাতা প্রত্যাখ্যান করেছি। আমরা চাই ২০ পারসেন্ট। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা শহীদ মিনার ছাড়বেন না, ক্লাসও শুরু হবে না।“
শিক্ষকদের আন্দোলনে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল আসছেন বলে জানান তিনি।
ইতোমধ্যে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ, গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। ডাকসু, জাকসু, বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েট শিক্ষার্থীরাও শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা ৫০০ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা করে সরকার। তবে তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনের ডাক দেয় এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোট।
এরপর ৬ অক্টোবর এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ভাতা দুই হাজার বা তিন হাজার টাকা করার প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপর রোববার মূল বেতনের ৫ শতাংশ অথবা সর্বনিম্ন ২ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া ভাতার সিদ্ধান্ত দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়।
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধাদি পেয়ে থাকেন। তারা মূল বেতনের সঙ্গে মাসে ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। আর বাড়ি ভাড়া পেতেন এক হাজার টাকা, যা দুই দফায় বাড়িয়ে ন্যূনতম ২ হাজার টাকা করা হয়েছে।
এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা আগে বছরে ২৫ শতাংশ হারে বছরে দুইটি উৎসব ভাতা পেলেও গত মে মাসে তা বাড়ানোর পর তারা মূল বেতনের ৫০ শতাংশ হারে উৎসব ভাতা পাচ্ছেন। আর এমপিওভুক্ত কর্মচারীরা আগে থেকেই ৫০ শতাংশ হারে উৎসব ভাতা পেয়ে আসছিলেন।
