“ল্যুভে ডাকাতি আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্যের ওপর আক্রমণ। আমরা চুরি যাওয়া জিনিসগুলো উদ্ধার করবো, এবং যারা জড়িত তাদের বিচারের আওতায় আনবো,” এক্সে লিখেছেন ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ।
হতে সংগৃহিত
ক্রেন দিয়ে উপরতলার জানালা গুঁড়িয়ে প্যারিসের বিখ্যাত ল্যুভ জাদুঘরে মুখোশ পরে ঢোকা চোরেরা ফরাসী রাজপরিবারের রত্ন যেখানে থাকে সেখান থেকে অমূল্য সব জিনিসপত্র নিয়ে মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
ডাকাতির এই ঘটনা জাদুঘরটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে অস্বস্তিকর প্রশ্নও তুলছে; ‘মোনালিসা’র মতো অমূল্য সব শিল্পকর্ম থাকা বিশ্বখ্যাত স্থাপনাটিতে বিনিয়োগের ঘাটতি নিয়ে কর্মকর্তারা আগেই সাবধান করেছিলেন।
কেবল ২০২৪ সালেই ৮৭ লাখ মানুষ ল্যুভ জাদুঘর পরিদর্শনে গিয়েছিলেন, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
“ল্যুভে ডাকাতি আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্যের ওপর আক্রমণ। আমরা চুরি যাওয়া জিনিসগুলো উদ্ধার করবো, এবং যারা জড়িত তাদের বিচারের আওতায় আনবো,” এক্সে এমনটাই লিখেছেন ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ।
প্যারিসের কৌঁসুলি লোর বেকো বিএফএম টিভিকে বলেছেন, রোববার স্থানীয় সময় সাড়ে ৯টার দিকে গ্যালারি ড্যাপোল ভবনে ডাকাতির ঘটনাটি ঘটে, সেসময় জাদুঘরটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল।
৬ থেকে ৭ মিনিটের মধ্যে ডাকাতিটি হয়, যে চারজন এতে জড়িত ছিলেন তারা সশস্ত্র ছিলেন না, তবে তারা অ্যাঙ্গেল গ্রাইন্ডার (লোহা বা জানালার গ্রিল কাটতে ব্যবহৃত হয়) দিয়ে জাদুঘরের রক্ষীদের ভয় দেখিয়েছিল, বলেছেন বেকো।
“মোট ৯টি জিনিস অপরাধীদের নিশানায় ছিল. তবে ৮টি চুরি করতে পেরেছে। তারা পালিয়ে যাওয়ার সময় নবম জিনিস, নেপোলিয়নের তৃতীয় স্ত্রী রানি ইউজিনের মুকুটটি ফেলে গেছে,” বলেছেন তিনি।
দ্রুও নিলামঘরের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দ্রে গিকেলো রয়টার্সকে বলেন, “কেবল মুকুটটিরই দাম কয়েক কোটি ইউরো, যদিও আমার বিবেচনায় চুরি যাওয়া সেটি-ই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস নয়।”
চোরেরা কেন গ্যালারি ড্যাপোল ভবনে থাকা রেজেন্ট হীরা নেয়নি ‘তাও এক রহস্য’ বলে মন্তব্য করেছেন বেকো। সোথেবি নিলামঘরের হিসাবে ওই হীরার আনুমানিক দাম ৬ কোটি ডলারের বেশি।
“আমার কাছে কোনো ব্যাখ্যা নেই। যখন তাদেরকে ধরা হবে এবং তদন্ত কর্মকর্তাদের মুখোমুখি তখনই আমরা জানতে পারবো তাদের প্রতি কী ধরনের নির্দেশ ছিল এবং তারা কেন ওই (রেজেন্ট হীরার) জানালাকে নিশানা বানায়নি,” বলেছেন এই কৌঁসুলি।
ডাকাতিতে জড়িত একজনের পরনে হলুদ নিরাপত্তা জ্যাকেট ছিল, পরে তদন্ত কর্মকর্তারা সেটি উদ্ধার করেছেন। পালিয়ে যাওয়ার সময় একটি ছোট ট্রাকের পেছনে থাকা ক্রেনে আগুন ধরানোর চেষ্টা করেও ডাকাতরা ব্যর্থ হন, জানিয়েছেন তিনি।
ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লরঁ নুনেস বলেছেন, নামকরা ডাকাতির ঘটনা সমাধানে দক্ষ পুলিশের একটি বিশেষ ইউনিটকে ল্যুভের ঘটনাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তদন্ত কর্মকর্তারা সব দিক বিবেচনায় নিয়েছেন। তবে মনে হচ্ছে, কোনো এক সংগ্রাহকের নির্দেশে এই ডাকাতি হয়েছে, তেমন কিছু ঘটলে জিনিসগুলো ভালো অবস্থাতেই উদ্ধার করার সম্ভাবনা থাকবে। নাহলে সেই চোরদের হাতে এটি পড়েছে যাদের আগ্রহ থাকে মূল্যবান রত্ন ও দামি দামি অলঙ্কারে। এই ডাকাতির ঘটনায় বিদেশি যোগসাজশের সম্ভাবনা খুব একটা দেখা যাচ্ছে না, বলেছেন বেকো।
“আমরা সংগঠিত অপরাধের ব্যাপারটাই ভালো করে দেখছি। মাদক পাচারে এখন যে পরিমাণ টাকা, তাতে এখনকার দিনে যে কোনো কিছুর সঙ্গে মাদক চোরাকারবারিদের যোগসাজশ বের হতে পারে,” বলেছেন তিনি।
নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন
ডাকাতির ঘটনার পর ল্যুভ কর্তৃপক্ষ এক্সে জানায়, তারা ‘নজিরবিহীন কারণে’ দিনের বাকি অংশ জাদুঘরটি বন্ধ রাখছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা ক্রুজ থেকে সেদিন জাদুঘরটিতে গিয়েছিলেন জোয়ান ও জিম কার্পেন্টার। যখন তারা ‘মোনালিসা’ দেখতে যাচ্ছিলেন তখনই তড়িঘড়ি তাদের গ্যালারি থেকে বের করে নেওয়া হয়।
“যখন আপনি ল্যুভে ডাকাতি করবেন, ফ্রান্সের জন্য তখন এটি অবশ্যই বড় কিছু, তারা যখন আমাদের পুরো জাদুঘর থেকে বের করে দিচ্ছে, আমি তখনই বুঝেছিলাম যে কিছু একটা হয়েছে,” বলেছেন জোয়ান কার্পেন্টার।
১৯১১ সালে এমনই এক বেপরোয়া চুরির ঘটনায় জাদুঘর থেকে ‘মোনালিসা’ হাপিশ হয়ে গিয়েছিল। ওই ঘটনায় জাদুঘরেরই সাবেক এক কর্মী জড়িত ছিলেন। পরে তিনি ধরা পড়েন, দুই বছর পর ‘মোনালিসা’ও জাদুঘরে ফেরে।
অগণিত শিল্পকর্মের সুরক্ষা বৃদ্ধি এবং জাদুঘরের পুরনো হলগুলোর সংস্কার ও পুনর্গঠনে চলতি বছরের শুরুর দিকেই ফরাসী সরকারের কাছে জরুরি সহায়তা চেয়েছিলেন ল্যুভের কর্মকর্তারা।
এক্সে মাক্রোঁ লিখেছেন, ল্যুভ জাদুঘরের জন্য জানুয়ারিতে ঘোষিত নতুন সরকারি পরিকল্পনায় ‘নিরাপত্তা জোরদারের ব্যবস্থা’ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
সংস্কৃতিমন্ত্রী রাশিদা দাতি বলেছেন, জাদুঘরের নিরাপত্তা প্রসঙ্গটি নতুন নয়।
“৪০ বছর ধরে, প্রধান প্রধান জাদুঘরের দিকে মনোযোগ খুবই কম দেওয়া হয়েছে। দুই বছর আগে ল্যুভের প্রেসিডেন্ট পুলিশকে নিরাপত্তা পর্যালোচনা দিতে অনুরোধ করেছিলেন। কেন? কারণ জাদুঘরগুলোকে এখন নতুন ধরনের অপরাধ মোকাবেলায় প্রস্তুত হতে হবে। বর্তমানে যা হয়, সেটি হচ্ছে সংগঠিত অপরাধ, পেশাদাররা জড়িত থাকে এখানে,” বলেছেন তিনি।
