শুরুতে সিনেমা করলেও জুন লকহার্টকে তারকা খ্যাতি এনে দেয় টেলিভিশন।
সংগৃহিত
যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক প্রজন্মের দর্শকের কাছে নিজেকে মাতৃরূপে প্রতিষ্ঠা করা অভিনেত্রী জুন লকহার্ট আর নেই।
টেলিভিশনের ‘ল্যাসি’, ‘লস্ট ইন স্টেস’সহ আরো বহু টেলিভিশন সিরিজের এই অভিনেত্রী অনন্তলোকে পাড়ি দিয়েছেন বৃহস্পতিবার; তার বয়স হয়েছিল একশো বছর।
সিএনএন লিখেছে, ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা মনিকার বাড়িতে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান এই অভিনেত্রী। তার পরিবারের মুখপাত্র লাইল গ্রেগরি শনিবার লকহার্টের চলে যাওয়ার খবর সংবাদমাধ্যমের কাছে প্রকাশ করেছেন। অভিনেত্রীর পরিবারের সঙ্গে গ্রেগরির বন্ধুত্ব প্রায় চার দশকের মত।
তিনি বলেছেন, লকহার্ট তার জীবনের শেষদিন পর্যন্ত হাসিখুশি ছিলেন। তিনি নিয়মিত ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ এবং ‘এলএ টাইমস’ পড়তেন।
গ্রেগরি বলেন, “মনোযোগের সঙ্গে দিনের খবরাখবর জানতে চাওয়ার বিষয়টি জুন লকহার্টের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।”
লকহার্ট একটি সংস্কৃতিমনা পরিবার থেকে অভিনয় জগতে এসেছিলেন। তার বাবা ছিলেন প্রখ্যাত অভিনেতা জিন লকহার্ট। ক্যারিয়ারের শুরুতে সিনেমা করলেও জুন লকহার্টকে তারকা বানিয়েছিল টেলিভিশন।
১৯৫৮ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত এই অভিনেত্রীকে পাওয়া গেছে জনপ্রিয় সিবিএস সিরিজ ‘ল্যাসিতে’ রুথ মার্টিনের চরিত্রে। আর ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত লকহার্ট কাজ করেছেন অ্যাডভেঞ্চার সিরিজ ‘লস্ট ইন স্পেস’ এ। সেখানে তিনি ছিলেন রবিনসন পরিবারের মা। যে চরিত্রটি মহাকাশে ভ্রমণ করেছিল।
তরুণ দর্শকদের কাছে লকহার্ট বরাবর একজন মমতাময়ী মায়ের চরিত্রে নিজেকে ‘যোগ্য প্রমাণ করেছেন’।
১৯৯৪ সালে এক সাক্ষাৎকারে লকহার্ট বলেছিলেন, “আমি আমার খ্যাতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। কিন্তু ভাবমূর্তি নয়। কারণ আমার ভাবমূর্তি হল সেটাই, যেভাবে আপনি আমাকে দেখবেন।”
নিজের অভিনীত চরিত্র এবং ব্যক্তিসত্তার পার্থক্য বোঝাতে তিনি বলেছিলেন, “আমি ‘রক অ্যান্ড রোল’ এবং কনসার্টে যেতে ভালোবাসি। আমি সেনাবাহিনীর ট্যাঙ্ক চালিয়েছি। গরম বাতাসের বেলুন উড়েছি। আমি এমন অনেক কাজ করি যা আমার ভাবমূর্তির সঙ্গে মিলে না।”
বহু সিনেমায় লকহার্ট অভিনয় করেছেন। সেগুলোর মধ্যে আছে-‘লক দিস অ্যান্ড হেভেন টু’, ‘অ্যাডাম হ্যাড ফোর সন্স’, ‘সার্জেন্ট ইয়র্ক’, ‘মিস অ্যানি রুনি’, ‘ফরএভার অ্যান্ড আ ডে’ এবং ‘মিট মি ইন সেন্ট লুইস’ ।
চলচ্চিত্রে লকহার্টের ক্যারিয়ার থমকে যায় এক সময়ে। তখন তিনি বেছে নেন টেলিভিশনের পর্দা। কাজ করেছেন গেইম এবং টক শোতেও।
জ্যান ক্লেন্টন এবং ক্লোরিস লিচম্যানের পর তিনি সেই তৃতীয় জন, যিনি ‘ল্যাসি’তে মূল নারী চরিত্রটি পান।
‘লস্ট ইন স্পেস’ নাটকের পরও লকহার্টের ব্যস্ত সময় কেটেছে টেলিভিশনের নাটকে অভিনয় নিয়ে। তিনি ‘জেনারেল হসপিটাল’, ‘নাইট সোপ’, ‘নটস ল্যান্ডিং’ এবং ‘দ্য কলবিস’ নাটকে অভিনয় করেছেন।
অভিনয় ছাড়াও নানা কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন লকহার্ট। যেমন রাষ্ট্রপতির কুচকাওয়াজ, সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় তাকে পাওয়া গেছে।
“তবে তার মূল আবেগ ছিল সাংবাদিকতায়’, বলেন গ্রেগরি।
তিনি বলেন, “লকহার্ট হোয়াইট হাউসের ব্রিফিং রুমে যেতে ভালোবাসতেন।”
নিউ ইউর্কে ১৯২৫ সালের ২৫ জুন জন্ম হয় লকহার্টের। তার ১০ বছর বয়সে পরিবারটি চলে আসে হলিউডে। ৮ বছর বয়সে মঞ্চে অভিনয়ে আত্মপ্রকাশ করেন লকহার্ট। মেট্রোপলিটন অপেরা হাউসে শিশুদের ব্যালেতে নাচ পরিবেশন করেন।
তার প্রথম সিনেমা ‘আ ক্রিসমাস ক্যারল’ মুক্তি পায় ১৯৩৮ সালে। সেখানে ছোটখাট একটি চরিত্র পেয়েছিলেন লকহার্ট।
ব্যক্তিজীবনে দুইবার বিয়ে করেছিলেন লকহার্ট। দুবারই বিচ্ছেদ হয়েছে।
লকহার্ট তার ক্যারিয়ারে বহু নাটক সিনেমা করলেও বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে ‘ল্যাসি’ তাকে পৌঁছে দিয়েছিল অনন্যমাত্রায়।লকহার্ট একবার বলেছিলেন, “ব্যাপারটা চমৎকার। অনেকেরই ক্যারিয়ারে এমন একটি ভূমিকা আসে, যার জন্য তিনি পরিচিতি পান। অনেক অভিনয়শিল্পী সারা জীবন ধরে অনেক কাজ করলেও, কখনো এমন একটি চরিত্র পান, যা একসময়ে তার নিজের হয়ে যায়।”
