লেবুর রস দাঁতের ক্ষয় ঘটাতে পারে। আবার অ্যাসিডির সমস্যা তৈরিতেও ভূমিকা রাখে।
হতে সংগ্রহিত
দিনের শুরুতে এক গ্লাস লেবু পানি- এই অভ্যাস অনেকের প্রতিদিনের রুটিনের অংশ।
কেউ মনে করেন এতে ওজন কমে, কেউ বলেন ত্বক উজ্জ্বল হয়, আবার কেউ পান করেন শুধু একটু সতেজতা পাওয়ার জন্য।
তবে এই লেবু পানির আসল উপকারিতা কতটা, আর এর ক্ষতিকর দিকই বা কী?
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পুষ্টিবিদ লরেন মানেকার ও লরেন ও’কনর ‘ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে ব্যাখ্যা করেছেন যে, লেবু পানি দেহের নানান দিকে ইতিবাচক প্রভাব ফেললেও কিছু সতর্কতা মেনে চলা জরুরি।
শরীরকে আর্দ্র রাখে
প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়, দেহ পর্যাপ্ত পানি না পেলে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়, যার ফলে মাথা ঘোরা, কোষ্ঠকাঠিন্য বা ক্লান্তি দেখা দিতে পারে।
পুষ্টিবিদ লরেন মানেকারের মতে, “যদি লেবুর স্বাদে কেউ বেশি পানি পান করেন, তাহলে এটি শরীরকে আর্দ্র রাখার সহজতম উপায়।”
অর্থাৎ যারা শুধু পানি গ্রহণে অনীহা বোধ করেন, তারা লেবু যোগ করলে পানি পানের পরিমাণ বাড়াতে পারেন।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে
লেবু পানি সরাসরি ওজন কমায় না, তবে এটি শরীরের চর্বি ভাঙার প্রক্রিয়াকে সহায়তা করে।
‘ফ্রন্টিয়ার্স ইন নিউট্রিশন’ জার্নালে ২০১৬ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়- পর্যাপ্ত পানি গ্রহণ শরীরে সঞ্চিত চর্বিকে ‘গ্লিসারল’ ও ‘ফ্যাটি অ্যাসিডে’ ভেঙে শক্তিতে রূপান্তর করে।
মানেকারের মতে, “যদি শরীর পানিশূন্য থাকে, তখন এই প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়, ফলে ওজন কমানো কঠিন হয়।”
তাই লেবু পানি শরীরের প্রাকৃতিক বিপাকক্রিয়া সচল রাখে।
মানসিক অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারে
‘ডিহাইড্রেইশন’ বা পানিশূন্যতা শুধু শারীরিক দুর্বলতা নয়, মানসিক অবস্থাতেও প্রভাব ফেলে।
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, শরীরে পানির ঘাটতি মানসিক অবস্থাকে খারাপ করে তোলে। তাই লেবু পানির স্বাদ যদি কাউকে বেশি পানি পান করতে উদ্বুদ্ধ করে, তবে তা মানসিক ভারসাম্য রক্ষায়ও সহায়ক।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
লেবু ভিটামিন সি’র চমৎকার উৎস। একটি লেবুতে প্রায় ১৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে। প্রাপ্তবয়স্কদের দৈনিক চাহিদা বয়স ও লিঙ্গভেদে ৭৫ থেকে ১৩০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত।
লরেন মানেকার বলেন, “সকালে লেবু পানি পান করলে শরীরে ভিটামিন সি’র ঘাটতি কিছুটা পূরণ হয়, যা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।”
ঠাণ্ডা বা ‘ফ্লু’র মৌসুমে রোগ প্রতিরোধে সামান্য হলেও অবদান রাখে লেবু পানি। তবে দৈনিক প্রয়োজন মেটাতে অন্যান্য ভিটামিন সি–সমৃদ্ধ ফল, যেমন- কিউই বা পেয়ারা খাওয়া জরুরি।
অ্যাসিডিটি বা অম্বল বাড়াতে পারে
লরেন ও’কনরের মতে, “লেবুর প্রাকৃতিক পিএইচ দুই থেকে তিনের মধ্যে, যা অত্যন্ত অ্যাসিডিক। তাই যারা অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা অম্বলে ভোগেন, তাদের জন্য লেবু পানি ক্ষতিকর হতে পারে।”
এটি গলার জ্বালা বা হার্টবার্নও বাড়াতে পারে। তাই যাদের হজমে সমস্যা বা গ্যাস্ট্রিকের প্রবণতা আছে, তাদের খালি পেটে লেবু পানি এড়িয়ে চলাই ভালো।
দাঁতের ক্ষয় ঘটাতে পারে
লেবুর টক স্বাদের কারণই হল এর অম্লতা।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘লেক এরি কলেজ অব অস্টিওপ্যাথিক মেডিসিন’-এর ‘স্কুল অব ডেন্টাল মেডিসিন’–এর অধ্যাপক ডা. জ্যাক বলেন, “অ্যাসিডযুক্ত পানীয় দাঁতের এনামেল ধীরে ধীরে ক্ষয় করে দেয়।”
এনামেল ক্ষয় হলে দাঁত সংবেদনশীল হয়ে পড়ে এবং সহজেই ক্ষয় বা ক্যাভিটি হতে পারে। তাই লেবু পানি পানের পর মুখ ভালোভাবে কুলকুচি করা এবং ‘স্ট্র’ ব্যবহার করা ভালো।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে
মানেকার বলেন, “যদি কেউ লেবু পানির সঙ্গে রসুন মেশান, তবে এটি রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।”
‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব প্রিভেন্টিভ মেডিসিন’–এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে- যেসব ‘হাইপারলিপিডেমিক’ (রক্তে অতিরিক্ত ফ্যাট থাকা) ব্যক্তি প্রতিদিন ২০ গ্রাম রসুন ও এক টেবিল-চামচ লেবুর রস মিশিয়ে পান করেছেন, তাদের রক্তচাপ ও লিপিডের মাত্রা উন্নত হয়েছে।
লেবুতে থাকা ‘হেসপেরাইডিন’ নামক এক ধরনের ফ্লাভানয়েডস রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও র্যকর ভূমিকা রাখে।
বৃক্কে পাথর প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে
লেবুতে থাকা সিট্রিক নামক যৌগটি ক্যালসিয়ামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কিডনি বা বৃক্কে পাথর তৈরির ঝুঁকি কমায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘কম্প্রিহেন্সিভ কিডনি স্টোন সেন্টার’য়ের করা গবেষণার তথ্যানুসারে, নিয়মিত লেবুর রস বা লেমনেইড পান করলে বৃক্কের পাথর গঠনের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।
যদিও বেশিরভাগ গবেষণায় বিশুদ্ধ লেবুর রস নয়, বরং লেমনেইড বা লেবু পানি ব্যবহৃত হয়েছে, তবে ফলাফল প্রায় একই।
