অধ্যাপক আ-আল মামুন নবনির্বাচিত রাকসু হল সংসদ প্রতিনিধিদের শপথ অনুষ্ঠানে নারী প্রতিনিধিদের একটি ছবি তার ফেইসবুকে পোস্ট করেন।
সংগৃহিত
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে (রাকসু) নির্বাচিতদের শপথ অনুষ্ঠানে নারী প্রতিনিধিদের বোরখা পড়া ছবি নিয়ে ফেইসবুকে পোস্ট করায় বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
এ ঘটনাকে ‘পর্দার অবমাননা’ অ্যাখ্যা দিয়ে পোস্টদাতা গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ-আল মামুনের বহিষ্কারের দাবিও জানান বিক্ষোভকারীরা।
সোমবার রাতে মেয়েদের আবাসিক হল থেকে শুরু করে সিরাজী ভবনের সামনে এসে এই বিক্ষোভ শেষ হয়।
এ সময় রাকসুর মহিলা সম্পাদক সায়েদা হাফসা বলেন, “হিজাব পড়েও নারীরা যখন অপ্রতিরোধ্য, তখন একটা পক্ষ তাদের বাধা দিয়ে, কটুক্তি করে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
“শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত নারী প্রতিনিধিদের ছবি যুক্ত করে বলেছেন টু কোয়াটার ও মদের বোতল নিয়ে ক্লাসে আসতে চান। টু কোয়াটার আর মদের বোতল কী সমাজ মূল্যায়ণ করে? একইভাবে বোরখাকে নিয়ে কী সামাজিকভাবে অবমূল্যায়ন করা হয়?
হাফসা আরও বলেন, “তিনি যা করতে চেয়েছেন, এখন তা করে দেখাক। এমন কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের জন্য তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে এবং তাকে বহিষ্কার করতে হবে।”
এ বিষয়ে রাকসু জিএস সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, “যদি তার মেরুদণ্ড সোজা থাকেন অবশ্যই অবশ্যই তিনি বিভাগে মদের বোতল ও হাফ প্যান্ট পড়ে আসবেন, অন্যথায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে বহিষ্কার করবে। আমরা কাল তার বিভাগের সামনে অবস্থান নেব। তিনি তিন সেকেন্ড ধরে পোস্ট রেখেছিল না তিন মিনিট রেখেছিল তা আমাদের বোঝার বিষয় নয়।”
এর আগে সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ-আল মামুন নবনির্বাচিত রাকসু হল সংসদ প্রতিনিধিদের শপথ অনুষ্ঠানে নারী প্রতিনিধিদের বোরখা পড়া ছবি তার ফেইসবুকে একটি পোস্ট করেন।
ছবির ক্যাপশনে তিনি লিখেন, “এই ব্যক্তিগত স্বাধীনতা আমি এন্ডর্স করছি। কাল আমি এরকম ব্যক্তিগত স্বাধীনতা পরে ও হাতে নিয়ে ক্লাসে যাবো। পরবো টু-কোয়াটার, আর হাতে থাকবে মদের বোতল। মদ তো ড্রাগ না! মদ পান করার লাইসেন্সও আমার আছে! শিবির আইসেন, সাংবাদিকরাও আইসেন!”
কিছুক্ষণ পর তিনি পোস্টটি ডিলিটও করেন। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই পোস্টের স্ক্রিনশট বিভিন্ন গ্রুপে ছড়িয়ে পড়লে বিতর্ক শুরু হয়। রাতেই পর্দা অবমাননার অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আ-আল মামুন বলেন, “আমি পোস্টটি ডিলিট করিনি। আমি ফেইসবুকে এরকম পোস্ট করি এবং ‘অনলি মি’ করে রাখি। এটা আমি তাৎক্ষণিক পোস্ট করি এবং ‘অনলি মি’ করে দেই। এটা এই কারণেই করি যাতে আমি ওইটা নিয়ে পরে ভাবতে পারি। কিছু মানুষ বড়শি ফেলে বসে আছে।”
তিনি আরও বলেন, “পোষাকের স্বাধীনতা ন্যারেটিভ নিয়ে গত ১৫ বছর ধরে আমি লড়াই করছিলাম। একটা মেয়ে হিজাব পরে তার বাচ্চাকে নিয়ে খেলছে, এটা নিয়ে সেকুলাররা খুব ক্রিটিক করেছিল। হু ডিফেন্ডেড দ্য ক্রিটিক? আই মাইসেল্ফ ওয়াজ দেয়ার। পোশাকের স্বাধীনতা ইজ আ স্ট্যান্ডার্ড, দ্যাট উই হ্যাড টু থিংক আ ডিফারেন্ট ওয়ে।”
পোস্টটি ‘অনলি মি’ করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সঠিক বা বেঠিক, এর কোনোটাই আমি মনে করছি না। এখানে এ রকম কোনো প্রশ্ন নেই। এই ভাবনাটা নিয়ে আরও ভাবতে হবে। দ্যাট ইজ মাই পয়েন্ট।
“এই কারণে ওই পোস্টটি আমি করেছি এবং সেভ করেছি (অনলি মি) করেছি। ফেইসবুক এ সুযোগ চালু হওয়ার পর থেকেই আমি এটা করি।”
পরে রোববার বেলা সোয়া ১০টার দিকে ফেইসবুকে দেওয়া আরেকটি পোস্টে দুঃখপ্রকাশ করেছেন এই শিক্ষক।
পোস্টে তিনি লিখেছেন, “পোশাক বিষয়ে আমার ভাবনা পরিষ্কার-পোশাকের কারণে আমি কাউকে বড় বা ছোট করে দেখি না। ‘হিজাব’ ডিফেন্ড করার মতো অনেক পোস্ট পাবেন আমার। এ শিক্ষা আমার ‘সন্ত্রাসবিরোধী অনন্ত যুদ্ধ’র ক্রিটিক করতে গিয়েই হয়েছে। ফলে আপনারা যা ভাবছেন- সে রকম কোনো উপহাস বা তাচ্ছিল্য আমি করি না।”
তিনি আরও লিখেন, “তারপরও কেউ আঘাত পেয়ে থাকলে, আমি দুঃখিত। আমি সবসময়ই শিক্ষার্থীদের জন্য শুভকামনা করি। আশা করি বিভ্রান্তিকর উত্তেজনা এবার প্রশমিত হবে। আমি চাই না, আমাকে কেন্দ্র করে যে উত্তেজনা ছড়িয়েছে তার প্রেক্ষিতে আমার বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী কোন প্রকার অসুবিধার সম্মুখীন হোক, বা অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের সাথে কলহে জড়াক!”
