ঘুম ভালো হওয়ার জন্যেও রাতের খাবার নির্দিষ্ট সময়ে খেতে হয়।
বিস্তারিত কমেন্টে
একদিনের দীর্ঘ কর্মব্যস্ততা শেষে রাতের খাবার ঠিক সময়ে খাওয়া অনেকের কাছেই কঠিন মনে হয়।
অফিসের কাজ, যানজট বা ব্যস্ত সময়সূচির কারণে কেউ দেরিতে খান, কেউ আবার অনেক আগে।
তবে রাতের খাবার আসলে কখন খাওয়া সবচেয়ে ভালো?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এর সঠিক সময় জানলে শুধু হজমই ভালো হয় না, ঘুমও আরও আরামদায়ক হয়।
রাতের খাবারের আদর্শ সময়
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পুষ্টিবিদ মারিসা কার্প রিয়েলসিম্পল ডটকম-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেন, “সাধারণভাবে রাতের খাবার খাওয়ার আদর্শ সময় বিকাল ৫টা থেকে ৭টার মধ্যে। যদি এই সময়ে খাওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে ঘুমানোর কমপক্ষে তিন ঘণ্টা আগে খাবার খাওয়া উচিত।”
মার্কিন পুষ্টিবিদ এলিজাবেথ ব্রাউন ব্যাখ্যা করেছেন, “ঘুমানোর অন্তত তিন ঘণ্টা আগে খেলে, খাবার সহজে হজম হয় এবং গ্যাস্ট্রিক বা অম্বল হওয়ার ঝুঁকি কমে।”
তিনি বলেন, “এভাবে খাবার খেলে শরীরের হজম প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয় এবং ঘুমের সময় পাকস্থলীতে চাপ পড়ে না।”
তবে ব্রাউনের মতে, “খাবারের ধরন ও পরিমাণও এখানে গুরুত্বপূর্ণ।”
যেমন- যদি কেউ খুব চর্বিযুক্ত খাবার খান, যেমন- বড় বার্গার ও ফ্রাই তাহলে সেটি হজম হতে ছয় ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় লাগতে পারে।
এতে পাকস্থলীতে অ্যাসিড বৃদ্ধি পায়, যা অম্বল বা বুক জ্বালার পাশাপাশি ঘুম নষ্ট করতে পারে।
খুব আগে বা দেরিতে খাওয়া— দুটা-ই যে কারণে ক্ষতিকর
খুব আগে রাতের খাবার খেলে রাতে ঘুমানোর সময় শরীরে ক্ষুধা তৈরি হয়, ফলে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
মারিসা কার্প বলেন, “এক্ষেত্রে ঘুমানোর আগে হালকা খাবার খাওয়া যেতে পারে, যাতে কার্বোহাইড্রেইটস, প্রোটিন ও সামান্য ফ্যাট থাকে।”
এলিজাবেথ ব্রাউন যোগ করেন, “কার্বোহাইড্রেইটস ঘুমের জন্য প্রয়োজনীয় হরমোন মেলাটোনিনের পূর্বধাপ সেরোটোনিন উৎপাদনে সাহায্য করে। তাই একেবারে না খেয়ে ঘুমানোও ভালো নয়।”
অন্যদিকে, যদি খুব দেরিতে অর্থাৎ ঘুমানোর আগ মুহূর্তে খাওয়া হয়, তখনও ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়।
মারিসা কার্পের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, “শরীরের হজমতন্ত্র ঘুমের সময় বিশ্রাম নেয়। তবে ঘুমানোর ঠিক আগে খেলে শরীর একই সঙ্গে হজম ও বিশ্রাম দুই কাজ করতে বাধ্য হয়, যা স্বাভাবিক ঘুমে বাধা দেয়।”
দেরি করে কাজ শেষ হয়? খাওয়ার রুটিন ঠিক রাখতে হবে
অনেকের কাজের সময় রাতে শেষ হয়। তারা ভাবেন, তাই তো দেরি করে খাওয়া ছাড়া উপায় নেই।
তবে মারিসা কার্প পরামর্শ দেন, সারাদিনে নির্দিষ্ট সময় ধরে খাওয়া অভ্যাস করা জরুরি।
তিনি বলেন, “যদি দিনভর নিয়মিত ও পরিপূর্ণ খাবার না খান, তাহলে রাতে খুব ক্ষুধা লাগবে। এতে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা বা কম স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নেওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।”
তার পরামর্শ- দিনের প্রথমভাগেই প্রোটিন, ফ্যাট ও আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে। এতে দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা থাকবে এবং রাতে অতিরিক্ত খাওয়ার ইচ্ছা কমবে।
তিনি আরও বলেন, “মাঝে ক্ষুধা লাগলে কিছু স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস খেতে পারেন, যেমন- আপেলের সঙ্গে চিনাবাদাম বাটার।”
প্রতিদিন একই সময়ে খাওয়ার উপকারিতা
মানবদেহের একটি নিজস্ব ছন্দ আছে, যাকে বলা হয় ‘সার্কাডিয়ান রিদম’ বা দেহঘড়ি। এই ঘড়ি শরীরের ঘুম, হজম ও শক্তির ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে।
মারিসা কার্প বলেন, “শরীর রুটিন পছন্দ করে। প্রতিদিন একই সময়ে রাতের খাবার খেলে দেহঘড়ি সঠিকভাবে কাজ করে, ফলে হজম ও ঘুম দুটোই ভালো হয়।”
‘ফ্রন্টিয়ার্স ইন নিউট্রিশন জার্নাল’য়ে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়- খাবার দেহঘড়িকে নিয়ন্ত্রণ করার অন্যতম প্রধান সংকেত। বিজ্ঞানীরা একে বলেন ‘জাইটগেবার’, অর্থাৎ এমন একটি পরিবেশগত সংকেত যা শরীরের সময়চক্র ঠিক রাখে। (প্রধান জাইটগেবার হলো আলো।)
গবেষণায় আরও বলা হয়, যদি দেহঘড়ি ও খাবারের সময় একে অপরের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তাহলে মেটাবলিজম বা বিপাকক্রিয়ায় সমস্যা দেখা দিতে পারে। এতে ডায়াবেটিস ও হৃদ্রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
রুটিন বজায় রাখার সহজ উপায়
যাদের সময়সূচি অনিয়মিত, তাদের জন্য প্রতিদিন একই সময়ে খাবার খাওয়া কঠিন হতে পারে।
তবে মারিসা কার্প বলেন, “কিছু অভ্যাস বদল আনলে এটা সহজ করা সম্ভব।”
আগে থেকে রান্না করে রাখা: সাপ্তাহিক মেনু তৈরি করে নির্দিষ্ট সময়ের খাবার আগেই প্রস্তুত রাখলে রাতের খাবারের সময় আর সিদ্ধান্ত নিতে হয় না।
সহজ খাবার বেছে নেওয়া: হালকা ও দ্রুত তৈরি হয় এমন খাবার বেছে নিলে দেরি কমে।
নিয়মিত বিরতিতে খাওয়া: সারাদিনে ছোট ছোট খাবার খেলে রাতের খাবারে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে।
ঘুমানোর আগে অন্তত তিন ঘণ্টা বিরতি: এটি হজম প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিক রাখে এবং ঘুমকে আরামদায়ক করে।
