বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-রাকসু, হল সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনে ভোট দেবেন প্রায় ২৯ হাজার শিক্ষার্থী।
হতে সংগৃহিত
গত সাড়ে তিন দশকে পদ্মা নদী দিয়ে যেমন অনেক জল গড়িয়েছে; ঠিক তেমনি এর তীরে গড়ে উঠা উত্তরাঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে বড় মুখ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিতেও এসেছে অনেক পরিবর্তন আর বাঁকবদল।
এই পরিবর্তিত সময় আর পরিস্থিতির মধ্যেই বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-রাকসু, হল সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রায় ২৯ হাজার শিক্ষার্থী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
রাকসুর ইতিহাস বলছে, একসময় বামপন্থি সংগঠগুলোর ব্যাপক অধিপত্য ছিল এই ক্যাম্পাসজুড়ে। ছাত্র ইউনিয়ন, জাসদ ছাত্রলীগ, ছাত্রমৈত্রীর মত সংগঠনের নেতারা সেখানে শিক্ষার্থীদের নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
আশির দশক পর্যন্ত বামপন্থিদের সঙ্গে সমানতালে পাল্লা দিয়ে সেখানে রাজনীতি করেছে আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগও। বরং সেই তুলনায় তখন পিছিয়ে ছিল জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। নব্বইয়ের দশকে শেষ নির্বাচনে তারা গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে জয় পেয়েছিল।
আর ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রভাব তখন শুরু হলেও তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণেই সীমাবদ্ধ ছিলেন। ক্ষমতার স্বাদ কখনও পাননি।
কিন্তু এই ২০২৫ সালের শেষে এসে পরিস্থিতি ‘প্রায় পুরোটাই’ পাল্টে গেছে। নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকেই বামপন্থিদের সাংগঠনিক শক্তিতে ক্ষয় ধরেছে; তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তারা বহু ভাগে বিভাজিত হয়েছে। ফলে এবারের নির্বাচনে তাদের সরব উপস্থিতি থাকলেও ইতিহাসের ধারাবাহিকতা রক্ষার পথ ধরে তাদের হাঁটা এখন অনেকটা কঠিন বলেই মানছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
আর ২০২৪ সালের ৫ অগাস্টের পর ‘প্রতাপশালী’ ছাত্রলীগ তো ক্যাম্পাস ছেড়েই পালিয়েছে। ফলে এই নির্বাচনে তাদের প্রসঙ্গিকতাও নেই।
এবার নির্বাচনে এগারটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এর মধ্যে ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবির ছাড়া কোনো প্যানেলই পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করতে পারেনি। আলোচনায় রয়েছে ‘ডামি প্যানেল’ও।
এই পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ধারণা, ক্যাম্পাস ও সংলগ্ন এলাকায় ব্যাপক প্রভাব থাকার পরও রাকসুর ইতিহাসে কখনোই ইসলামী ছাত্রশিবির জয় পায়নি। তবে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতিতে তারা বেশ আলোচনায় আছেন বলে মনে করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
আর ৩৫ বছর পর পর ছাত্রদলের সামনে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অতীতের জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা। কারণ সবশেষ রাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে জয় পেয়েছিল ছাত্রদলের প্রার্থী।
এবার মূল দলগত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের নাম সামনে এসেছে বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা। ছাত্রদল এবং ছাত্র শিবিরের মধ্যেই এবার মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এ ছাড়া দলীয় প্যানেলের বাইরেও কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন, যাদের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে যারা জুলাই-অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় সক্রিয় থেকেছেন এবং ক্যাম্পাসে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
ভোটের তথ্য
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত নয়টি ভবনের ১৭টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ চলবে। ভোটগ্রহণ শেষে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে ভোটের ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
নির্বাচনে মোট ২৮ হাজার ৯০১ জন ভোটার। এর মধ্যে নারী ভোটার ১১ হাজার ৩০৫। আর পুরুষ ভোটার ১৭ হাজার ৫৯৬ জন। সব মিলিয়ে ৮৬০ জন প্রার্থীর পক্ষে তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। মোট ভোটারের ৩৯.১ শতাংশ নারী এবং ৬০.৯ শতাংশ পুরুষ বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
এই নির্বাচন শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক চর্চা, নেতৃত্ব বিকাশ এবং দায়িত্ববোধ গঠনের এক অসাধারণ সুযোগ এনে দিয়েছে বলে মনে করছে নির্বাচন কমিশন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম বলেন, “নির্বাচন কমিশন এরই মধ্যে নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। আমাদের মূল লক্ষ্য একটি অংশগ্রহণমূলক, স্বচ্ছ, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়া।
“তাই প্রতিটি ধাপে নির্বাচনকে বিতর্কমুক্ত রাখতে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। আইন-শৃঙ্খলা, ভোটার, প্রার্থী এবং নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাইরে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি মোতায়ন করা হয়েছে।”
রাকসুর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের যারা অধ্যয়নরত অবস্থায় আছেন, তারাই কেবল ভোটার হতে পেরেছেন। আর ভোটার হতে পারলেই তিনি রাকসু বা হল সংসদে প্রার্থী হওয়ার যোগ্য অর্জন করেছেন।
নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা কামাল আকন্দ জানিয়েছেন, একজন প্রার্থী নির্দিষ্ট কেন্দ্রে ঢুকে পোলিং কর্মকর্তার কাছে সই করে ছয়টি ব্যালট পেপার পাবেন। এসব ব্যালট গোপন বুথে নিয়ে তা পূরণ করে স্বচ্ছ বাক্সে জমা দিতে হবে।
প্রথম ব্যালট পেপারে থাকছে সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) প্রার্থীর তালিকা। দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ব্যালটে আছে বিভিন্ন সম্পাদকীয় পদপ্রার্থীদের নাম। পঞ্চম ব্যালটে থাকছে সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি পদপ্রার্থীদের নাম। আর ষষ্ঠ ব্যালটে থাকছে হল সংসদের প্রার্থীদের নাম।
যার যা প্যানেল
|
কোন প্যানেলে প্রার্থী কারা |
||||
|
ছাত্র সংগঠন |
প্যানেল |
ভিপি |
জিএস |
এজিএস |
|
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল |
ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম |
নূর উদ্দিন আবির |
নাফিউল জীবন |
জাহিন বিশ্বাস এষা |
|
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির |
সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট |
মোস্তাকুর রহমান জাহিদ |
ফজলে রাব্বি মো. ফাহিম রেজা (সাবেক সমন্বয়ক) |
এস এম সালমান সাব্বির |
|
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ইউনাইটেড স্টুডেন্টস ডেমোক্রেটিক ফোরাম (ইউএসডিএফ) |
সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ |
তাসিন খান |
রাজন আল আহমেদ |
মাহায়ের ইসলাম |
|
– |
আধিপত্যবিরোধী ঐক্য |
মেহেদী সজীব |
সালাউদ্দিন আম্মার |
– |
|
গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট |
গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ |
ফুয়াদ রাতুল (আহ্বায়ক, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট) |
কাউছার আহম্মেদ (কোষাধ্যক্ষ, ছাত্র ইউনিয়নের একাংশ) |
নাসিম সরকার (আহ্বায়ক, গণমঞ্চ) |
|
ছাত্র অধিকার পরিষদ ছাত্র ফেডারেশন |
রাকসু ফর রেডিক্যাল চেঞ্জ |
মেহেদী মারুফ (সভাপতি, ছাত্র অধিকার পরিষদ) |
আফরিন জাহান (সাবেক সভাপতি, উত্তরণ লেখক ও পাঠক সূতিকাগার) |
আল শাহরিয়ার শুভ (সাধারণ সম্পাদক, ছাত্র অধিকার পরিষদ) |
|
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ |
সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ |
মাহবুর আলম |
শরিফুল ইসলাম শরীফ |
পারভেজ আকন্দ |
|
ছাত্র ইউনিয়নের একাংশ |
অপরাজেয়-৭১, অপ্রতিরোধ্য-২৪ |
মাসুদ কিবরিয়া |
পরমা পারমিতা |
সানজিদ |
|
‘সাধারণ’ শিক্ষার্থী |
স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী জোট |
তাওহিদুল ইসলাম |
নুসরাত জাহান নুপুর |
জান্নাত আরা নওশীন |
ফাঁকা ক্যাম্পাসে ভোটারের উপস্থিতি নিয়ে কথা
পরিবহন চত্বরে সাধারণ দিনগুলোতেও অন্তত কয়েকশ শিক্ষার্থী আড্ডায় মেতে থাকলেও ভোটের আগের দিন সেই পরিববহন চত্বর ছিল অনেকটাই ফাঁকা। দুপুর-বিকালে চত্বরটিতে যাদের দেখা গেছে, তাদের অধিকাংশই সংবাদকর্মী এবং নির্বাচনকে ঘিরে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সঙ্গে যুক্ত।
যাদের ঘিরে রাকসু নির্বাচন; সেই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি খুব একটা ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলা, টুকিটাকি চত্বর, বুদ্ধিজীবী চত্বর থেকে চারুকলা- সব জায়গায় যেন সুনসান নিরবতা।
নির্বাচনে ভোটের প্রচার শেষ হয়েছে মঙ্গলবার রাত ১২টায়; ভোটের আগের দিন প্রার্থীদের দৃশ্যমান কোনো প্রচারের সুযোগ ছিল না। তবে ক্যাম্পাসে কয়েকজন প্রার্থীর উপস্থিতি দেখা গেছে।
পরিবহন চত্বরে দাঁড়িয়ে কথা হয় শহীদ শামসুজ্জোহা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী রাকিবুল হাসানের সঙ্গে। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “রাকসু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর থেকে এই নির্বাচন নিয়ে কিছুটা উন্মাদনা থাকলেও, ভোটের দিন যত ঘনিয়ে এসেছে, উন্মাদনাও যেন কমেছে।”
কেন শিক্ষার্থীদের মাঝে উৎসাহ নেই, প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “দফায় দফায় নির্বাচনের তারিখ পেছানোর কারণেই হয়তো শিক্ষার্থীদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ কমে গেছে।”
ভোটের দিন শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী কামরুজ্জামান রাজু। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, “আজকে (বুধবার) ক্যাম্পাস একটু বেশিই ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।”
ভোট এবং শুক্র-শনিবার মিলিয়ে ক্যাম্পাসে চার দিনের ছুটির কারণে আশপাশের জেলার শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ হয়ত বাড়ি চলে গেছেন।
কামরুজ্জামান বলেন, “আমার সঙ্গে মেসে থাকা দুজন শিক্ষার্থী বাড়ি চলে গেছে। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাড়ি একজনের, সে বলেছে ভোটের দিন দুপুরে আসবে। আরেকজন ভোট দিতে আসবে না। ফলে ভোটার উপস্থিতি এবার কম হতে পারে।”
ভোটের আগের দিন ক্যাম্পাস ফাঁকা থাকলেও নির্বাচন কমিশন বলছে, রাকসু নির্বাচনকে ঘিরে ক্যাম্পাসে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
তারা ‘সুষ্ঠ’ ও ‘গ্রহণযোগ্য’ নির্বাচন আয়োজনের আশ্বাসও দিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনার ড. এনামুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, “সুষ্ঠ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। ক্যাম্পাসেও নির্বাচনকে ঘিরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। আশা করি একটি সুন্দর নির্বাচনের দৃষ্টান্ত দেখাতে পারবো।”
যে ৯ ভবনে ভোটগ্রহণ
|
কোন কেন্দ্রে কত ভোট |
|||||
|
ভবনের নাম |
কেন্দ্র |
বুথ |
টেবিল |
পোলিং কর্মকর্তা |
ভোটার |
|
সৈয়দ ইসমাঈল হোসেন সিরাজী ভবন |
জুলাই-৩৬ হল উত্তর গেট, কক্ষ: ১২৮ |
৮০ |
৮ |
১৬ |
২৪৭২ |
|
রোকেয়া হল দক্ষিণ-পূর্ব, কক্ষ ১২২ |
৭০ |
৭ |
১৪ |
২১৭৩ |
|
|
রবীন্দ্র ভবন |
তাপসী রাবেয়া হল পূর্ব মধ্য গেট, কক্ষ: ১৪৬ |
৪৫ |
৪ |
৮ |
১২৪১ |
|
বেগম খালেদা জিয়া হল পূর্ব-দক্ষিণ গেট, কক্ষ: ১১৯ |
৪৫ |
৪ |
৮ |
১২৭৫ |
|
|
রহমতুন্নেসা হল দক্ষিণ-পশ্চিম গেট, কক্ষ: ১২৩ |
৬০ |
৬ |
১২ |
১৭৬৬ |
|
|
ডীনস কমপ্লেক্স |
মন্নুজান হল কক্ষ: ১১০ (ক্যান্টিন) |
৭৫ |
৮ |
১৬ |
২৩৭৮ |
|
ড. শহীদুল্লাহ কলা ভবন |
শহীদ জিয়াউর রহমান হল কক্ষ: ১৫০ (গ্যালারি) |
৬৫ |
৬ |
১২ |
১৯৬৩ |
|
সত্যেন্দ্রনাথ বসুবিজ্ঞান ভবন (প্রথম বিজ্ঞান ভবন) |
শেরে বাংলা ফজলুল হক হল কক্ষ: ১২৯ (গ্যালারি) |
৪০ |
৩ |
৬ |
৯৯৩ |
|
মতিহার হল কক্ষ: ২০৮ |
৬০ |
৬ |
১২ |
১৮৭১ |
|
|
জাবির ইবনে হাইয়ান বিজ্ঞান ভবন (দ্বিতীয় বিজ্ঞান ভবন) |
শহীদ হবিবুর রহমান হল কক্ষ: ১৩৩ |
৮০ |
৮ |
১৬ |
২৪৪৬ |
|
শহীদ শামসুজ্জোহা হল কক্ষ: ১০১ |
৫০ |
৪ |
৮ |
১৩০৪ |
|
|
জগদীশ চন্দ্র বসু বিজ্ঞান ভবন (তৃতীয় বিজ্ঞান ভবন) |
মাদার বখশ হল দক্ষিণ-পূর্ব গেট: টিচার্স লাউঞ্জ |
৬০ |
৬ |
১২ |
১৮৭৪ |
|
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল দক্ষিণ-পশ্চিম দিক, কক্ষ: ১০৫ |
৬০ |
৬ |
১২ |
১৮৬১ |
|
|
জামাল নজরুল ইসলাম বিজ্ঞান ভবন (চতুর্থ বিজ্ঞান ভবন) |
বিজয় ২৪ হল সিএসএল, কক্ষ: ১২৫ |
৫৫ |
৫ |
১০ |
১৫২৯ |
|
নবাব আব্দুল লতিফ হল দক্ষিণ-পশ্চিম দিক, কক্ষ: ১১৬ |
৪৫ |
৪ |
৮ |
১১১৩ |
|
|
জুবেরী ভবন |
সৈয়দ আমীর আলী হল হল রুম পূর্ব |
৪৫ |
৪ |
৮ |
১২৩৩ |
|
শাহ মখদুম হল হল রুম পশ্চিম |
৫৫ |
৫ |
১০ |
১৪০৯ |
|
|
মোট |
৯৯০ |
৯৪ |
১৮৮ |
২৮৯০১ |
|
সন্ধ্যায় গান-আড্ডায় উৎসবের আমেজ
সন্ধ্যা ৭টার পর যেন হঠাৎ পালটে যায় পরিবহন চত্বরের চিত্র। শিক্ষার্থীদের একটি অংশকে দেখা যায়, গান-আড্ডায় মেতে থাকতে।
তবে পরিবহন চত্বর ছাড়া ক্যাম্পাসের আমতলা, টুকিটাকি এবং বুদ্ধিজীবী চত্বর সন্ধ্যায়ও ছিল নিরুত্তাপ, জনমানবহীন।
পরিবহন চত্বরে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন বিজয় ২৪ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী অমিত সাহা। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজকে ক্যাম্পাসে লোক সমাগম একটু কমই। তবে সন্ধ্যায় পরিবহন চত্বরে একটু যেন প্রাণ এসেছে।”
সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী শামীন ত্রিপুরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গতকাল থেকে প্রচার শেষ হওয়ায়, আজকে সারাদিন অনেক শিক্ষার্থী নিজের রুমেই সময় কাটিয়েছে। সন্ধ্যায় পরিবহন গান-আড্ডার খবর পেয়ে অনেকেই এসেছেন।”
পরিবহন চত্বরের জায়গাটি ক্যাম্পাসের আন্দোলন-সংগ্রামেরও সূতিকাগার বলে মনে করেন শামীন। তিনি বলেন, “বিগত জুলাই অভ্যুথানেও এই পরিবহন চত্বর থেকেই আন্দোলন পরিচালিত হয়েছে। কাল রাকসু নির্বাচন। এজন্য এখানেই আড্ডাটা জমেছে।”
বুথের কাজে ধীরগতি
বিকাল ৫টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসের ১৭টি কেন্দ্রের মধ্যে আটটি কেন্দ্রে সরজমিনে দেখা যায়, তখনও বুথ নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ সম্পন্ন হয়নি।
সত্যেন্দ্রনাথ বসু একাডেমিক ভবনে বিকাল ৪টায় দেখা যায়, কয়েকজন নির্মাণ শ্রমিক বাঁশ দিয়ে কেন্দ্রে বুথ নির্মাণের কাজ করছিলেন। তাদের একজন জানিয়েছেন, রাত ৯টার মধ্যে আমরা কাজ শেষ করতে পারব। এরপর আরও দুইটা কেন্দ্রে তারা বুথ নির্মাণের কাজ করবেন।
নির্বাচন কমিশন থেকে সাংবাদিকদের জন্য যে প্রবেশ পাস দেওয়া হয়েছে, তার মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কেউ কেউ বলেছেন, এমন প্রবেশ পাস খুব সহজেই যে কেউ কম্পিউটারে প্রিন্ট করে নিতে পারবে। সেই প্রবেশ কার্ডও বিকাল ৫টা পর্যন্ত, নির্বাচন কমিশন থেকে সবাইকে সরবরাহ করতে পারেনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এনামুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টফোর ডটকমকে বলেন, “নির্বাচন নিয়ে অন্যান্য কাজের ব্যস্ততার কারণে সাংবাদিকদের জন্য যে প্রবেশ কার্ড করা হয়েছে, তার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পরে আমরা আলোচনা করে সেই কার্ডের সঙ্গে ‘কার্ড হোল্ডার’ দিয়েছি।”
ভোটকেন্দ্র প্রস্তুত করার বিষয়ে তিনি বলেন, “রাতের মধ্যেই সব কেন্দ্রে বুথের কাজ শেষ করা হবে। আমরা বিকালের মধ্যেই শেষ করতে পারব ভেবেছিলাম। কিন্তু একটু দেরি হয়েছে।”
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও ছয়জন নির্বাচন কমিশনার নিয়ে নির্বাচনি কার্যক্রম পরিচালনা করছে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচনে একজন প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ছয়জন রিটার্নিং কর্মকর্তা এ নির্বাচনের চালিকাশক্তি হিসেবে রাতদিন কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানায় নির্বাচন কমিশন।
রাকসুর ২৩টি পদে মোট ৩০৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, যার মধ্যে রয়েছে সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদ। সিনেটে পাঁচটি পদে ৫৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
অন্যদিকে ১৭টি হল সংসদের ২৫৫টি পদে মোট ৫৫৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
ভোটগ্রহণ করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তারা। মোট ২১২ জন শিক্ষকের মধ্যে ১৭ জন প্রিসাইডিং অফিসার এবং অন্য শিক্ষকেরা সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে ভোট পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন।
এ ছাড়া ৯১ জন কর্মকর্তা পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
কঠোর নিরাপত্তা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি ও হল সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে প্রশাসন।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান জানিয়েছেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে মোতায়েন থাকবেন দুই হাজার পুলিশ সদস্য, ১২ প্লাটুন র্যাব ও ছয় প্লাটুন বিজিবি।
কমিশনার বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ১৫, ১৬ ও ১৭ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দায়িত্ব পালন করবেন। প্রয়োজন হলে এই মেয়াদ আরও বাড়ানো হবে। র্যাব ও বিজিবি সদস্যরা ক্যাম্পাস এলাকায় অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করবেন।
তিনি জানান, এখন পর্যন্ত কোনো অঘটনের গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া যায়নি, ক্যাম্পাসের সার্বিক পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ ও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
আগের ভিপি-জিএস যারা
|
রাকসুর নেতৃত্বে ছিলেন যারা |
||
| ১. ভিপি: মুহা. মনিরুজ্জামান মিয়া
জিএস: আবদুর রাজ্জাক খান |
১৯৫৬-৫৭ |
ছাত্র ইউনিয়ন |
| ২. আবুল কালাম চৌধুরী
আব্দুল জব্বার খান |
১৯৫৭-৫৮ |
ছাত্র ইউনিয়ন |
| ৩. শেখ মুহা. রুস্তম আলী
মুহা. বজলুল করিম |
১৯৬২-৬৩ |
অগ্রগামী |
| ৪. সৈয়দ মযহারুল হক বাকী
মুহা. আব্দুর রউফ |
১৯৬৩-৬৪ |
ছাত্রলীগ |
| ৫. মুহা. আব্দুর রাজ্জাক
বায়েজিদ আহমেদ |
১৯৬৪-৬৫ |
ছাত্র ইউনিয়ন |
| ৬. আবু সাইদ
সরদার আমজাদ হোসেন |
১৯৬৫-৬৬ |
ছাত্রলীগ |
| ৭. বায়েজিদ আহমেদ
আব্দুস সাত্তার |
১৯৬৬-৬৭ |
ছাত্র ইউনিয়ন |
| ৮. এ এফ এম জামিরুল ইসলাম
মুহা. আব্দুর রহমান |
১৯৬৭-৬৮ |
ছাত্র ইউনিয়ন ছাত্রলীগ |
| ৯. মুহা. আবদুর রহমান
জালাল উদ্দিন সেলিম |
১৯৬৮-৬৯ |
ছাত্রলীগ |
| ১০. মীর শওকত আলী
আব্দুস সামাদ |
১৯৬৯-৭০ |
ছাত্রলীগ |
| ১১. মুহা. হায়দার আলী
আহম্মদ হোসেন |
১৯৭২-৭৩ |
ছাত্র ইউনিয়ন |
| ১২. নুরুল ইসলাম ঠান্ডু
শামসুল হক টুকু |
১৯৭৩-৭৪ |
ছাত্রলীগ |
| ১৩. ফজলুর রহমান পটল
রফিকুল ইসলাম |
১৯৭৪-৭৫ |
ছাত্রলীগ ছাত্রলীগ (জাসদ) |
| ১৪. ফজলে হোসেন বাদশা
জাহাঙ্গীর কবির রানা |
১৯৮০-৮১ |
ছাত্র মৈত্রী ছাত্রলীগ |
| ১৫. রাগীব আহসান মুন্না
রুহুল কুদ্দুস বাবু |
১৯৮৮-৮৯ |
ছাত্র মৈত্রী ছাত্রলীগ (জাসদ) |
| ১৬. রিজভী আহমেদ
রুহুল কুদ্দুস বাবু |
১৯৮৯-৯০ |
ছাত্রদল ছাত্রলীগ (জাসদ) |
