“অনেক বছর পর রাকসু নির্বাচন হচ্ছে। নির্বাচনে যে-ই জিতুক, রাকসু নির্বাচন প্রতি বছর হোক,” বলেন এক শিক্ষার্থী।
হতে সংগ্রহীত
হাতে প্রচারপত্র, আর কণ্ঠে গান। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডের পাশে আমতলায় দাঁড়িয়ে এভাবেই ভোটারদের কাছে ভোট চাইছিলেন ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেলের সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদপ্রার্থী শাহরিয়ার আলম।
মঙ্গলবার বিকালে রাকসু নির্বাচনের প্রচারের শেষ দিনে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলটির এই প্রার্থী যখন গানে গেয়ে প্রচার চালাচ্ছিলেন, তখন চায়ের দোকানে তখন আড্ডায় মেতেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী।
তাদের একজন ফারজানা তান্নি, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির তাপসী রাবেয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
তান্নি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ক্যাম্পাসে ভোটের আমেজ দেখে ভালো লাগছে। অনেক বছর পর রাকসু নির্বাচন হচ্ছে। নির্বাচনে যে-ই জিতুক, রাকসু নির্বাচন প্রতি বছর হোক।”
পরিবহন চত্বরের পাশে ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেল থেকে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী সালাউদ্দিন আম্মার কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে প্রচার চালাচ্ছিলেন। তার হাতে ছিল চিঠির খামের আদলে তৈরি করা প্রচারপত্র। ভোটারের কাছে সেই খাম তুলে দিয়ে ভোট চাইছিলেন এই তিনি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের হাতেও একটি খাম এসেছে; এটি খুলতেই দেখা যায়, ভোটারদের উদ্দেশ্যে লেখা খোলা চিঠি। তাতে সালাউদ্দিন আম্মার লিখেছেন, “আপনার একটি ভোট আমার জন্য কেবল একটি সংখ্যা নয়। এটি হবে আমার কাছে অমূল্য দায়িত্ব ও ভালোবাসা এবং আপনার আস্থার প্রতীক।”
চিঠির অপর পৃষ্ঠায় রয়েছে ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেলের পরিচিতি।
কেবল আমতলা কিংবা পরিবহন চত্বর নয়। পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই দেখা যায়, প্রার্থীরা শেষ মুহূর্তের প্রচারের ব্যস্ত। ক্যাম্পসের বুদ্ধিজীবী চত্বর, টুকিটাকি চত্বর, শহীদ মিনার চত্বর এবং প্রধান ফটকগুলি ঘুরে দেখা যায়, প্রার্থীদের সরব প্রচার।
কেউ প্রচারপত্র দিয়ে ভোট চাইছেন, কেউবা ভোটারদের দৃষ্টি কাড়তে বাহারি সাজে সেজেছেন। গত কয়েকদিনে ভোটারদের নজর কাড়তে নবাব সিরাজউদ্দৌল্লার সাজেও দেখা গেছে কোনো কোনো প্রার্থীকে।
সব মিলিয়ে রাকসু নির্বাচন ঘিরে ক্যাম্পাসে উৎসবের পরিবেশ দেখা গেছে।
গেল ২৮ জুলাই তফসিল ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে নির্বাচনি প্রচারণা শুরু হয়েছিল।
তবে ২২ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত রাকসু নির্বাচন কমিশনের জরুরি সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ১৬ অক্টোবর নির্বাচনের নতুন তারিখ ঘোষণা করা হয়।
সংশোধিত সময়সীমা অনুযায়ী মঙ্গল রাত ১২টায় শেষ হয়েছে নির্বাচনি প্রচার।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পযর্ন্ত নয়টি ভবনের ১৭টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ চলবে। ভোটগ্রহণ শেষে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে ভোটের ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
নির্বাচন বিধি অনুযায়ী, বুধবার কোনো ধরণের প্রকাশ-প্রচার করার সুযোগ নেই।
আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী আসিয়া আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফেপার ডটকমকে বলেন, “রাকসু নির্বাচন, এজন্য জরুরি- যে এই নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের নেতা নির্বাচন করার সুযোগ পাচ্ছে।
“বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কথা বলার জন্য এই নির্বাচনটা প্রতি বছর হওয়াটা জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখার জন্যও এই নির্বাচন হওয়া উচিত।”
নির্বাচন যেন ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ না হয়
বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনের সামনে পাওয়া গেল নির্বাচন কমিশনার পারভেজ আজহারুল হককে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমরা নির্বাচনের সবরকম প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। নির্বাচনে ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ করতে ক্যাম্পাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি ব্যালট জালিয়াতি রোধেও ব্যবস্থা নিয়েছি।
“এছাড়াও ভোট গণনার সময় তিনটি বড় পর্দায় সরাসরি দেখানো হবে। অর্থাৎ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার কোন সুযোগ নেই।”
নির্বাচন ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ হবে না বলে নির্বাচন কমিশনার আশ্বস্ত করলেও, প্রার্থীদের মধ্যে কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন নির্বাচন নিয়ে আগে থেকেই প্রশাসন ‘একপাক্ষিক’ আচরণ করেছে।
‘রাকসু ফর রেডিক্যাল চেঞ্জ’ প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী মেহেদী মারুফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, “প্রশাসন শুরু থেকেই বিভিন্ন সময়ে একপাক্ষিক আচরণ করেছে। সেক্ষেত্রে একটা আশঙ্কা তো আছেই যে নির্বাচন কতটুকু সুষ্ঠু হবে। তবে আমরা আস্থা রাখতে চাই, নির্বাচন যেন কোনোভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। তার জন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।”
শেষ দিনের প্রচারের বিষয়ে তিনি বলেন, “নির্বাচনি প্রচারের শেষ দিনে আমরা চেষ্টা করেছি সবার কাছে আমাদের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরার। শিক্ষার্থীরাও এক্ষেত্রে ইতিবাচক সাড়াই দিয়েছেন। আমরা আশাবাদী। ভোটারেরা সঠিক নেতৃত্বকেই বেছে নেবেন।”
গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের প্যানেল ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’ থেকে ভিপি পদপ্রার্থী ফুয়াদ রাতুল বলেন, “আমরা শেষ সময়ে এসেও প্রার্থীদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি। ভোটাররাও বিরক্ত না হয়ে ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছেন।”
তিনি অভিযোগ করেছেন, নির্বাচনের প্রচারে কেউ কেউ ‘টাকা ছড়াচ্ছে’। তারা টাকা দিয়ে ‘ভোট কিনতে’ চাইছে। তবে নির্দিষ্ট কোনো প্রার্থীর নাম তিনি বলেননি।
ফুয়াদ রাতুল বলেন, “আমরা দেখেছি রাকসুতে অর্থের ছড়াছড়িও হচ্ছে। তবে সেটি আমাদের ভোটারদের প্রভাবিত করতে পারবে না। ভোটাররা আমাদের শিক্ষার্থীবান্ধব কার্যক্রমের ভিত্তিতেই প্রার্থী বেছে নেবেন বলে বিশ্বাস করি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টাকা দিয়ে কেনা যাবে না।”
এবারের রাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার ২৮ হাজার ৯০১ জন। রাকসুর ২৩টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৪৭ জন প্রার্থী, হল সংসদ নির্বাচনে ৬০১ জন এবং সিনেট প্রতিনিধি পদে ৫৮ জন প্রার্থী ভোটে লড়ছেন।
ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির ছাড়াও নির্বাচনে আরও নয়টি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। প্যানেলগুলো হলো- ছাত্র অধিকার পরিষদ ও ছাত্র ফেডারেশনের ‘রাকসু ফর র্যাডিক্যাল চেঞ্জ’; গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’; ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের ‘সচেতন শিক্ষার্থী পরিষদ’; ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের ‘অপরাজেয় ৭১, অপ্রতিরোধ্য ২৪’; বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক তিন সমন্বয়কের নেতৃত্বে ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’; সামাজিক সংগঠন ইউনাইটেড স্টুডেন্টস ডেমোক্রেটিক ফোরামের (ইউএসডিএফ) ‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’; সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী জোট’; ‘ইউনাইটেড ফর রাইটস’ এবং ‘ইন্ডিপেনডেন্ট স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্স’।