বিজ্ঞাপনের মন ভুলানো কথায় না ভুলে বরং বাস্তব সম্মত প্রসাধনী ব্যবহার করলে ফল মিলবে ঠিকঠাক।
হতে সংগৃহিত
সৌন্দর্যচর্চার জগতে চোখে পড়ে হাজারও প্রসধনী। টোনার, এসেন্স, নেক ক্রিম, সেলুলাইট লোশন, লিপ মাস্ক ইত্যাদি।
প্রতিটি পণ্য এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যে, মনে হয় প্রতিটি বোতলেই লুকিয়ে আছে সৌন্দর্যের গোপন রহস্য।
তবে এসব পণ্যের মধ্যে কতটুকু সত্যিই দরকারি? আর একটি পণ্যের বিকল্প কি অন্যটি হতে পারে?
সুগন্ধযুক্ত পণ্যকে ভয় নয়
অনেকেই মনে করেন, সুগন্ধযুক্ত বডিওয়াশ বা ময়েশ্চারাইজার ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। তবে কারও আসলেই ত্বকের অ্যালার্জি বা সংবেদনশীলতা না থাকে, তাহলে সুগন্ধযুক্ত বডিওয়াশ বা লোশন ব্যবহার করা ক্ষতিকর নয়।
বরং এটি দৈনন্দিন গোসলের সময়কে একটু আনন্দদায়ক করে তোলে।
রূপ বিশেষজ্ঞ এবং বিন্দিয়া এক্সক্লুসিভ বিউটি কেয়ার-এর প্রধান শারমিন কচির মতে, “নিজের পছন্দের ঘ্রাণের বডি লোশন বা ওয়াশ ব্যবহার করলে মনেও ভালো প্রভাব পড়ে। সবকিছু ‘ফ্র্যাগরেন্স-ফ্রি’ হতে হবে এই ধারণা ভুল।”
টোনার ও এসেন্সের বিকল্প
টোনার একসময় ছিল স্কিনকেয়ারের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে আজকালকার আধুনিক অনেক ক্লিনজারে টোনারের উপকার পাওয়া যায়। যা ত্বক পরিষ্কার রাখার জন্য যথেষ্ট।
তাই টোনার ব্যবহার করতেই হবে তা নয়। এই পণ্যের বিকল্প রয়েছে।
অন্যদিকে ‘এসেন্স’ মূলত টোনারেরই আরেক রূপ, যার চেহারা একটু ঝলমলে।
আলাদা ‘নেক ক্রিম’ কেন?
কচি বলেন, “মুখের ময়েশ্চারাইজারও গলার ত্বকের জন্য যথেষ্ট হতে পারে। যদিও ময়েশ্চারাইজারে এমন কোনো উপাদান না থাকে যা ‘নেক ক্রিমে’ আছে, তাহলে আলাদা বিষয়।”
তাই কেনার আগে উপাদান দেখে ও বুঝে কেনা বুদ্ধিমানের কাজ- পরামর্শ দেন এই রূপবিশেষজ্ঞ।
চোখের ক্রিম— আসলেই কি দরকার?
অনেকে বিশ্বাস করেন, চোখের চারপাশের ত্বক আলাদা যত্ন চায়। তবে অনেক ‘আই ক্রিমে’ আসলে সাধারণ মুখের ক্রিমের উপাদানই থাকে শুধু বোতলটা ছোট এবং দাম বেশি।
তাই আই ক্রিমে কী কী উপাদান আছে যা আপনার মুখের ক্রিমে নেই তা জেনে নিতে হবে।
স্ট্রেচমার্ক ক্রিমের সত্যতা
বাজারে নানান পণ্য আছে যা দাবী করে যে, ‘চর্বি গলিয়ে ফেলবে’ বা ‘স্ট্রেচমার্ক মুছে দেবে’।
তবে কোনো লোশন কি সত্যিই ‘ফ্যাট’ গলাতে পারে? এসব ক্রিম কি অল্প সময়ের জন্য ত্বক মসৃণ করে নাকি স্থায়ী ফল দেয়, তা জেনে বুঝেই ব্যবহার করতে হবে।
‘স্ট্রেচমার্কে’র ক্ষেত্রেও প্রয়োজনে চিকিৎসা বা লেজার ট্রিটমেন্ট নেওয়া যেতে পারে। কোনো তেল কাজ করে কিনা তা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের পর ব্যবহার করা উচিত।
লোমকূপ ছোট করার পণ্য
“ত্বকের রন্ধ্রের আকার স্থায়ীভাবে ছোট করা যায় না। তবে ভালো স্কিনকেয়ার রুটিন রন্ধ্রের আশপাশ পরিষ্কার রাখে, ফলে দেখতে ছোট লাগে। তবে আসলে তা ছোট হয় না। তাই পণ্য কেনার আগে তা জেনেই কিনতে হবে” বলেন এই বিশেষজ্ঞ।
ডিটক্স মাস্ক— বাস্তব নাকি প্রতীকী যত্ন
‘ডিটক্স’ শব্দটি শুনলেই অনেকে ভাবেন এটি শরীর বা ত্বক পরিশুদ্ধ করবে।
তবে ত্বককে ‘ডিটক্সিফাই’ করার কোনো মাস্ক আসলেই আছে কি?
“আমাদের শরীরের লিভার বা যকৃত ও কিডনি বা বৃক্ক এই কাজ মূলত করে। ফেইসমাস্ক মূলত ‘স্পা ডে’-এর আনন্দ বাড়ায় আর ত্বকের ওপরের অংশের ময়লা দূর করে”- বলেন কচি।
দামি ক্রিমের বদলে বিজ্ঞাননির্ভর যত্ন
মৌলিক যত্নের জন্য একটি সাধারণ ক্লিনজার, ময়েশ্চারাইজার, ভিটামিন সি সেরাম এবং সানস্ক্রিন যথেষ্ট হতে পারে।
তবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শে বিশেষ পণ্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
প্রাকৃতিক উপাদান মানেই নিরাপদ নয়
‘অল ন্যাচারাল’ বা ‘অর্গানিক’ লেখা পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। তবে সব প্রাকৃতিক জিনিস ত্বকের জন্য ভালো নাও হতে পারে।
প্রাকৃতিক লেবেল দেখে নয়, উপাদানের বৈজ্ঞানিক কার্যকারিতা দেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
মেইকআপ ওয়াইপস’য়ের বিকল্প পরিষ্কার পানি ও ক্লিনজার
মেইকআপ ওয়াইপস অনেকেই ব্যবহার করেন দ্রুত মুখ পরিষ্কারের জন্য। এরপরেও আসলে ত্বকে ময়লা রয়ে যেতে পারে।
মেইকআপ তুলতে ক্লিনজিং বাম বা মাইল্ড ফোম ক্লিনজার ব্যবহার করা ভালো।
সস্তা রেড লাইট মাস্কের ভ্রান্তি
রেড লাইট থেরাপি এখন জনপ্রিয়। তবে এই প্রযুক্তি আসলেই কার্যকর হতে হলে মানসম্মত যন্ত্র দরকার।
নিম্নমানের লাইট মাস্কে শুধু আলো জ্বলে, কাজ হয় না বরং মুখে ক্ষতি হতে পারে।
লিপ মাস্ক নয়, চিকিৎসা দরকার
যদি কারও ঠোঁট এতটাই শুকনা হয় যে প্রতিদিন রাতে ‘লিপ মাস্ক’ দরকার পড়ে, তাহলে সেটা কোনো প্রসাধনী নয় বরং চিকিৎসার বিষয়। এমন অবস্থায় একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
জেল ম্যানিকিউরের বিকল্প
বেশি বেশি জেল ম্যানিকিউর ব্যবহার নখকে দুর্বল, পাতলা করে ফেলতে পারে। ফলে একসময় জেল ছাড়া থাকা সম্ভব হয় না। তাই টেকসই সাধারণ পলিশ ব্যবহার করাই ভালো।
