“ভেতরে গিয়ে আমরা বিধ্বস্ত অবস্থা দেখলাম; ভয়াবহ অবস্থা দেখলাম। একেবারে আমদানির সেকশনটা পুড়ে গেছে। … ১৫ দিন থেকে ১ মাস লাগবে এটাকে আবার ব্যাক করার জন্য,” বলেন বিজিএমইএর এক নেতা।
হতে সংগৃহিত
শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন লেগে যেসব পণ্য পুড়েছে সেগুলোর মধ্যে ফতুল্লা অ্যাপারেলসের উদ্যোক্তা ফজলে শামীম এহসানের ৫০০ ডলারের লেস ছিল।
কিন্তু এই উদ্যোক্তা যখন হিসাব মেলাতে বসলেন, তার ক্ষতির অঙ্কটা গিয়ে দাঁড়াল ১৬ হাজার ডলারে।
শামীম এহসান বলছেন, দেশের সবচেয়ে বড় বিমানবন্দরে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পণ্য পোড়ার ক্ষতির যে হিসাব দাঁড়াবে, তার মত উদ্যোক্তাদের বেলায় এর প্রভাব ও ক্ষতির হিসাব দাঁড়াবে বহুগুণ বেশি।
“আপনাকে বলি, আমার ওখানে (কার্গো ভিলেজে) মাত্র ৫০০ ডলারের সমপরিমাণ লেস ছিল। এই লেসগুলো আগেই আইসা পড়ছে। বায়ার তার নিজের খরচেই এটা পাঠাইছে। এই লেস লাগবে আমার মাত্র ১৫ হাজার পিস টিশার্টে। এটার গড় দাম হিসাব করলে মোটামুটি দাঁড়াবে ১ লাখ ৫ হাজার ডলারের মত।”
আগুনের কারণে এখন তাকে আবার এসব লেস বিদেশ থেকে আনতে হবে। ক্রয়াদেশের সময়সূচি ঠিক রাখতে গিয়ে উড়োজাহাজে করে পাঠাতে গেলে গাঁটের পয়সা খরচ হবে ‘১৫-১৬ হাজার ডলার’। কিংবা দেরির জন্য ক্রেতার দাবি অুনযায়ী ২০ শতাংশ ছাড় দিলে পোশাকের বিক্রির দাম থেকে আয় কমে যাবে ২০ হাজার ডলার।
“আজকের দিনের যে রেট (ডলারের বিনিময় মূল্য) সে হিসাবে দেখেন, আপনি ক্ষতি ৫০০ ডলার বলবেন না ১৬ হাজার ডলার বলবেন?”
বছরে দুই কোটি ডলারের ওপর পোশাক পণ্য রপ্তানি করা এ উদ্যোক্তা এভাবেই তার ক্ষতির হিসাব তুলে ধরছিলেন। আর স্বল্প সময়ে সেসব পোশাক উৎপাদন করতে আরও যে বাড়তি খরচ হবে সেটির কথা বাদই দিয়েছেন তিনি।
এ ক্ষতির বাইরেও নতুন কাজ আটকে যাওয়ার আশঙ্কার কথা তুলে ধরলেন তিনি। বললেন, “আমার রপ্তানির নতুন কার্যাদেশের জন্য নমুনা আইসা আছে। আমরা এটা নিশ্চিত না। নমুনটা কি পুড়ছে নাকি এটা এখনও নামে নাই।“
এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ক্রেতারা একই নমুনা কয়েক দেশের সরবরাহকারীদের কাছে পাঠায়। তারা যার কাছে থেকে আগে পাবে, দামে বনিবনা হবে তাকেই কাজটা দেবে।
“এখন আমি যদি স্যাম্পল না পাই, আমি কেমনে বানাইয়া পাঠামু? এখন ভারত, ভিয়েতনাম ওদের একজনকে ক্রয়াদেশটা দিয়ে দিতে পারে। আমারে তেবে না,” যোগ করেন তিনি।
পোশাক রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীদের এ নেতার ভাষ্য, “এরকম আমাদের বিশাল একটা ইমপ্যাক্ট আসবে। এখন নগদ আপনি যদি বলেন কত ডলারের মাল গেছে আপনি যদি বলেন ৫০০ ডলার গেছে কিন্তু আসলে তা না। এটা কয়েকশ গুণ বেশি “
এজন্য বিমানবন্দরকে পোশাক খাতের জরুরি সেবায় ‘আইসিইউয়ের’ সঙ্গে তুলনা করে এর গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে চান তিনি।
দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর শাহজালালের কার্গো ভিলেজে শনিবার দুপুরের ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বলতে গিয়ে তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে ব্যবসায়ীরা কী ধরনের ক্ষতির মুখোমুখি হতে পারেন তা তুলে ধরছিলেন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান।
সাত ঘণ্টার বেশি সময় ধরে জ্বলা আগুনে পুড়ে যাওয়া কার্গো ভিলেজ দেখে আসার পর পোশাক খাতের রপ্তানিকারকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ইনামুল হক সেখানকার অবস্থা রোববার সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “আমরা ভেতরে গেলাম, ভেতরে গিয়ে আমরা বিধ্বস্ত অবস্থা দেখলাম; ভয়াবহ অবস্থা দেখলাম। একেবারে সম্পূর্ণ আমদানির সেকশনটা পুড়ে গেছে।
“আমাদের কতদিন লাগবে আমরা ঠিক জানি না, ১৫ দিন থেকে ১ মাস লাগবে এটাকে আবার ব্যাক করার জন্য।”
শনিবার দুপুরে লাগা আগুন সাত ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আর ২৭ ঘণ্টা পর তা পুরোপুরি নেভানো যায়।
এ ঘটনায় পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।
‘বড় ক্ষতি’ ওষুধ শিল্পে, সরবরাহ ঘাটতির শঙ্কা
সাধারণত কিছু বিশেষ ও জরুরি পণ্য আনার জন্য আকাশপথ ব্যবহার করেন ব্যবসায়ীরা। সেইসঙ্গে তৈরি পোশাকের নমুনা পাঠানোর ও আনার জন্য এ সুবিধা ব্যবহার করে।
এছাড়া আন্তর্জাতিক কুরিয়ার পরিষেবাগুলোর পণ্যও কার্গো ভিলেজের মাধ্যমে আনা নেওয়া করা হয়।
ক্লান্ত ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের বসে থাকতে দেখা যায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্সের বারান্দায়। ছবি: আব্দুল্লাহ আল মমীন
এ আগুনে বড় আকারের ক্ষতির মুখ দেখতে পারে ওষুধ শিল্পও। এ খাতের কোম্পানিগুলো কাঁচামাল ও জরুরি পণ্য আমদানির জন্য অনেক সময় আকাশপথ ব্যবহার করে।
সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, ইনসুলিন, ক্যান্সারের ওষুধ ও টিকার মত জনস্বাস্থ্যের গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামালের চালান আনতে ব্যবহার করা হয় আকাশপথ। কার্গো ভিলেজে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সুবিধা থাকায় এসব পণ্য আনার প্রধানতম পথ এটিই।
শাকসবজি এবং অন্যান্য পচনশীল পণ্য রপ্তানি ও আমদানির ক্ষেত্রেও আকাশপথে চালানের উপর নির্ভর করার তথ্য দেন তারা।
ডেল্টা ফার্মা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাকির হোসেন বলেন, “কালকের (শনিবার) ঘটনার পর আজকে সকাল বেলা যখন আমি চেক করলাম। দেখা গেল যে আমার এই তিন-চার দিনেই দেখা যাচ্ছে- বিমানবন্দরে প্রায় সাড়ে তিন লাখ ডলারের কাঁচামাল আমার এসেছিল। একটা ৫০ হাজার ডলারের একটা কাঁচামাল দুপুর ২টা ৪০ (শনিবার) এ নামতে যাইয়া পরে কলকাতা চলে গেছে। নয়ত সেটাও ক্ষতি হত।”
প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকার কাঁচামাল ‘ভষ্মীভূত’ হওয়ার দাবি করে তিনি বলেন, “লাকিলি আমার এক্সপোর্টের সোয়া কোটি টাকার জিনিস ছিল, শ্রীলঙ্কা যাওয়ার। ওইটা কালকে রাতের বেলা চলে গেছে। ওইটায় আমি ক্ষতির মুখে পড়ি নাই।”
তার কোম্পানি মাঝারি আকারের হওয়ায় ক্ষতির পরিমাণ ছিল কম। তার ভাষ্য, বড় কোম্পানিগুলোর ২০-৫০ কোটি টাকার কাঁচামাল ক্ষতি হয়েছে।
ওষুধ কোম্পানিগুলো সচরাচর দামি ও জরুরি কিংবা অল্প পরিমাণের কাঁচামাল আকাশপথে আনে বলে তুলে ধরে জাকির হোসেন বলেন, খরচ একটু বেশি হলেও এতে নানারকম ঝামেলা কমে যায়। দ্রুত পণ্য উৎপাদন করা যায়।
“আমারই গড়ে ১ লাখ ডলারের মত কাঁচামাল আসে। আর স্কয়ার, ব্যাক্সিমকো, ইনসেপ্টা তো ধরেন বড় কোম্পানি।”
ভয়াবহ এ আগুনে দেশের প্রধান বিমানবন্দরটির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত অংশ পুড়ে যাওয়ায় ওষুধ শিল্পের সবচেয়ে সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা তার।
এছাড়াও জনস্বাস্থ্যের গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের সরবরাহে ঘাটতি দেখা যেতে পারে বলেও তার ভাষ্য।
“আমরা (কোম্পানিগুলোর সংশ্লিষ্টরা) চেষ্টা করতেছি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের মাধ্যমে বা আমরা নিজেরাও যেয়ে যেয়ে খবর নিতেছি যে আমাদের কাঁচামালগুলো কী অবস্থায় আছে।
“এখন যদি এয়ারপোর্টের এই অংশ ধ্বংস হয়ে যায়, তাহলে আমাদের পণ্য আসার পর কীভাবে আমরা ডেলিভারি নিব?”
এজন্য ঢাকা কাস্টম হাউজে বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির তরফে চিঠি দিয়ে আলাদা ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করার কথা বলেছেন জাকির হোসেন, যিনি সংগঠনের মহাসচিব।
আগুনের কারণে ওষুধের দ্রুত সরবরাহের চেইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “আমার একটা নারকোটিক আইটেম পুড়ে গেছে। এখন আবার এটার আমদানির অনুমতি নেওয়া, নারকোটিক্স অ্যান্ড ড্রাগস থেকে পাস করাইয়া বিদেশ থেকে আনা তিন থেকে চার মাস সময়ের ব্যাপার। অনেক লম্বা সময়।”
বণিক সমিতিগুলো কী বলছে?
দেশে রপ্তানি আয়ের ৮৫ শতাংশের মত আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এককভাবে সর্বোচ্চ রপ্তানি আয়ের এ খাতও এর ক্ষতি নিরূপণ এখনই করতে পারেনি। যেমনটা করতে পারেনি ওষুধ খাত অন্যান্য খাতও।
তবে এর একটা ধারণা দিয়েছে পোশাক প্রস্তুতকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ। সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ইনামুল হকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনা পরিদর্শন করে।
সেখান বেরিয়ে ইনামুল বলেন, “আমাদের সদস্যরা প্রায় সবাই আকাশপথে পণ্য পাঠান। প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০টি কারখানার পণ্য আকাশপথে রপ্তানি হয়। সেই হিসাবে ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি।
“বিজিএমইএ দ্রুত তথ্য-উপাত্ত নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, বিমানবন্দর, বেসামরিক পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ও অন্যান্যদের সঙ্গে সমন্বয় সভা করছে।”
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান এ ঘটনায় অন্তত ২৫০ থেকে ৩০০ পোশাক রপ্তানিকারক ক্ষতিগ্রস্থ হবেন বলে মনে করছেন।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের ‘আগুন পরিকল্পিত’ বলে মনে করছে ঢাকা কাস্টমস এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন।
রোববার সংগঠনের সভাপতি মিজানুর রহমানের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়, “এটি শুধু দুর্ঘটনা নয়, বরং দেশের শিল্প-কারখানা, আমদানি-রপ্তানি খাত এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ক্ষতি করে জাতীয় অর্থনীতিকে অচলের নীলনকশার অংশ হতে পারে।”
ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে এতে বলা হয়, আমদানি পণ্যের গুদামে সংরক্ষিত সব পণ্য ‘ভস্মীভূত’ হয়েছে। কিছু পণ্য অবিকৃত দেখা গেলেও তাপ ও ধোঁয়ার কারণে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
যন্ত্র পুড়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্ররও
এ বন্দর দিয়ে কী পরিমাণ পণ্য আসে তা জানতে কথা হয়, ঢাকা কাস্টমস এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। দীর্ঘ অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এখানে আমাদের একটা মাল এমন না যে দিনের মাল দিনে সরবরাহ হয়। একটা মাল সরবরাহ হতে পাঁচ থেকে সাত দিনও লেগে যায়। তো গড়ে দেখা যায় যে প্রায় সাত দিনের পণ্য মজুত থাকে।”
সাত দিনের পণ্যের পরিমাণের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমার মনে হয়, যেটা বলা যেতে পারে- ছোট-বড় মিলে প্রায় ১০ হাজার শিপমেন্ট ছিল।”
এখানে কী পণ্য বেশি আসে জানতে গিয়ে তার নিজের ক্ষতির কথায় উঠে আসে বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্র পোড়ার তথ্যও। বলেন, “এইখানে আমাদের ফার্মা কোম্পানিগুলোর কাঁচামাল বেশি আসে। ফার্মাগুলোর কাঁচামালের বেশিরভাগই আসে এয়ারে। আর যে পণ্যগুলা টেম্পারেচার কন্ট্রোল করতে হয় ওই পণ্যগুলা বাই এয়ারে বেশি আসে।
ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে রোববার সকালেও অগ্নিনির্বাপণে তৎপর ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। ছবি: আব্দুল্লাহ আল মমীন
“এখানে এয়ারপোর্টে কোল্ড রুম আছে। এখানে টেম্পারেচার কন্ট্রোল করে ওইগুলা আসে। আর কমার্শিয়াল পণ্য যেগুলা চায়না থেকে ডোর টু ডোর করে ওগুলা বাই এয়ারে বেশি আসে। পাওয়ার প্লান্টের কিছু মানে জরুরি পণ্য থাকে- এই পণ্যগুলা বাই ইয়ারে বেশি আসে। আর গার্মেন্টসের তো আছেই।”
তার কোটি টাকার মত পণ্যের ক্ষতি হওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এরমধ্যে ইউনাইটেড ময়মনসিংহ পাওয়ার, জামালপুর ইউনাইটেড পাওয়ার প্লান্ট ও ইউনাইটেড আশুগঞ্জ এনার্জি লিমিটেডের মেশিনারি ও স্পেয়ার পার্টস ছিল। পাশাপাশি বিআরবি গ্রুপের, ডিবিএস গ্রুপের, ফিলিপ মরিসের পণ্য ছিল।
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) প্রশাসক সাইফ উদ্দিন আহম্মদ এ খাতের সমস্যা কী হতে পারে তা খতিয়ে দেখার কথা বলেন।
ই-ক্যাবের আগের কমিটির নির্বাহী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম শোভন বলেন, “দুটো প্রভাব পড়বে এ খাতে। একটা হচ্ছে ক্ষণস্থায়ী। যাদের মালামাল ওখানে পুড়ে গেছে তারা তো একটা বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এগুলো নিয়ে সরকার যদি কোন ডিসিশন না নেয়, নিলেও ক্ষতির সম্মুখীন হবে। কাস্টমাররা যে প্রোডাক্ট অর্ডার দিয়েছে সেটা তো আর আসবে না।
“আরেকটা ক্ষতি হবে যদি সরকার দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়। এতে দীর্ঘমেয়াদে অনেকেই হয়তো এ ধরনের ব্যবসাগুলো থেকে ঝড়ে পড়বে। যাদের মূলধন কম ছিল, তারা একটা ধাক্কা খাবে।”
দুষলেন সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরকে
কাস্টম হাউসের শুল্কায়ন ও বন্দর থেকে পণ্য খালাস ছুটির দিনে বন্ধ থাকার সমালোচনা করে ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব জাকির হোসেন বলেন, “ওনারা যদি ছোট উইন্ডো আকারেও একটা সার্ভিস চালু রাখতো তাইলে কিন্তু মিনিমাম ৮০ শতাংশ কাঁচামাল এই সময়ের ভেতরে (বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে ঘটনার দিন দুপর) বের হয়ে চলে যায়।
“আমরা তো পে করি। যদি দরকার পড়ে আমরা শুক্র-শনিবারে ডেলিভারি নেওয়ার জন্য যদি বেশি পেমেন্ট করতে হয়, আমরা সেটা দিতে রাজি আছি।”
কাস্টমস হাউজের কর্মকর্তা বলেন, রোববার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ঢাকা কাস্টমস হাউসে পুরোদমে পণ্য আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চলে। ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার বন্ধ থাকে। তবে শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পণ্য খালাস কার্যক্রম চালু থাকে।
এই সময়ে তাই অন্যান্য দিনের তুলনায় কার্গো ভিলেজে পণ্য বেশি জমা হয়। অনেক সময় বৃহস্পতিবারের শুল্ক-কর পরিশোধ করা পণ্য চালান ও খালাস হতে রোববার লেগে যাওয়ায় কার্গো ভিলেজে পণ্যের পরিমাণ বেশি থাকে এ সময়ে বাড়তি থাকে।
আগুন নেভাতে সময় বেশি লাগার ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনায় ‘কো-অর্ডিনেশন’ ছিল না বলে দুষছেন বিকেএমইএ নেসতা ফজলে শামীম।
তার ভাষ্য, “দিনের বেলা আগুন লাগছে। দেখছে মানুষ। ডাকবে, আইসা নিভাই ফালাইব। ফোমের গাড়ি আছে। পানির গাড়ি আছে। আগুন দেখব, দেখে নিভাইতে পাঁচ মিনিটের ব্যাপার। এটা নিভাইতে পারে নাই। আগুন বড় হইছে। বাইরের থেকে গাড়ি আসছে। বাইরে থেকে গাড়ি আইসা বইসা আছে, গেইট দিয়ে ঢুকতে দেয় না।”
তিনি পোশাক শিল্পে যেভাবে পশ্চিমা বিশ্বের ক্রেতারা চাপ দিয়ে সবধরনের ‘কমপ্লায়েন্স’ মানতে বাধ্য করেছে, সেভাবে দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতেও চাপ তৈরির কথা বলেন।
একই সঙ্গে কেউ দায়ী হলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির কথাও বলেন। নয়ত এভাবে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটতে থাকবে বলে তার ভাষ্য।