‘অতি গোপনীয়’ শ্রেণিভুক্ত নথি সরানো ও ২০২৩ সাল থেকে লাগাতার চীনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের অভিযোগ আনা হয়েছে ভারতে জন্ম নেওয়া অ্যাশলি টেলিসের বিরুদ্ধে।
হতে সংগৃহিত
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মীর বিরুদ্ধে নিরাপত্তার ঘেরাটোপে থাকা স্থান থেকে ‘অতি গোপনীয়’ নথি সরানো ও ২০২৩ সাল থেকে লাগাতার চীনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের অভিযোগ আনা হয়েছে।
যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই অ্যাশলি টেলিস পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অবৈতনিক ঊর্ধ্বতন উপদেষ্টা ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামগ্রিক মূল্যায়ন দপ্তরের চুক্তিভিত্তিক কর্মী ছিলেন বলে জানিয়েছে মার্কিন বিচার মন্ত্রণালয়।
সম্প্রতি যুদ্ধ মন্ত্রণালয় নাম নেওয়া প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামগ্রিক মূল্যায়ন দপ্তরে তিনি ভারত ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সুনির্দিষ্ট বিষয় সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞের ভূমিকায় ছিলেন।
টেলিস ২০০১ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কাজ শুরু করেন বলে আদালতে জমা পড়া নথির বরাত দিয়ে জানিয়েছে ফক্স নিউজ।
তার ‘অতি গোপনীয়’ স্থানে প্রবেশাধিকার এবং সংবেদনশীল তথ্য পাওয়ার সুযোগ ছিল, আদালতের নথিতে বলেছে কৌঁসুলিরা।
থিঙ্ক ট্যাঙ্ক কার্নেগি এনডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসে ঊর্ধ্বতন ফেলো হিসেবেও চাকরি করেছেন টেলিস।
ভার্জিনিয়ার ভিয়েনাতে তার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ‘অতি গোপনীয়’ ও ‘গোপনীয়’ লেখা হাজারো পৃষ্ঠার নথি মিলেছে বলে আদালতে জমা পড়া নথিতে বলা হয়েছে।
কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, এ বছরের ১২ সেপ্টেম্বর সরকারি স্থাপনায় কাজ করা এক সহকর্মী টেলিসের জন্য একাধিক ‘গোপন শ্রেণিভুক্ত’ নথি প্রিন্ট করেছিলেন।
২৫ সেপ্টেম্বর টেলিস নিজেই সামরিক উড়োজাহাজের সক্ষমতা সংশ্লিষ্ট মার্কিন বিমান বাহিনীর নথি প্রিন্ট করেন বলেও অভিযোগ করা হচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই কর্মী গত কয়েক বছরে চীনা সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ করেছেন বলে দাবি মার্কিন ফেডারেল কৌঁসুলিদের।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ভার্জিনিয়ার একটি রেস্তোরাঁয় চীনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করার সময় টেলিসের হাতে একটি ম্যানিলা খামও ছিল বলে কৌঁসুলিদের ভাষ্য।
পরের বছরের ১১ এপ্রিল একটি রেস্তোরাঁয় খাবার খেতে খেতে চীনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে টেলিসকে ইরানি-চীনা সম্পর্ক ও উদীয়মান প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা করতেও শোনা গেছে, বলেছে কর্তৃপক্ষ।
এ বছরের ২ সেপ্টেম্বর চীনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি একটি উপহারের ব্যাগও গ্রহণ করেন বলে আদালতের নথিতে বলা হয়েছে।
তার বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আনা হয়নি, কারণে তিনি কোনো নথি বা তথ্য পাচার করেছেন এমনটা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে একাধিক মার্কিন গণমাধ্যম।
তবে এ নিয়ে তদন্ত এখনও চলছে।
গোপনীয় নথি বেআইনিভাবে নিজের কাছে রাখার অভিযোগ প্রমাণিত হলে টেলিসের ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও আড়াই লাখ ডলার পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে বলে এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
শনিবার ভার্জিনিয়ার বাড়ি তল্লাশি করে গোপন নথি পাওয়ার পরপরই ৬৪ বছর বয়সী টেলিসকে গ্রেপ্তার করা হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ কর্মকর্তার সেদিনই রোম যাওয়ার কথা ছিল বলে নথিতে জানানো হয়েছে।
ভারতে জন্ম নেওয়া এ মার্কিন কর্মকর্তা প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। ভারতের সঙ্গে বুশ প্রশাসনের বেসামরিক পারমাণবিক চুক্তির মধ্যস্থতায় তিনি সহায়ক ভূমিকা রাখেন। ওই চুক্তি বিশ্বের শীর্ষ দুই গণতান্ত্রিক দেশকে কাছাকাছি এনে দেয়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে ভারতের দহরম মহরম ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সৃষ্ট দূরত্ব নিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারের সমালোচনা করে আসছিলেন টেলিস। ভারত শিগগিরই চীনের সমান সক্ষমতা অর্জন করতে পারবে না বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
