“ঘর তোলার টাকাও নাই। সব শ্যাষ হইয়া গেল।”
হতে সংগৃহীত
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায় পদ্মার তীব্র ভাঙনে শত শত পরিবার তাদের ঘরবাড়ি ও আবাদি জমি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
চলতি বছরের জুন থেকে এ পর্যন্ত উপজেলার চরাঞ্চল লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের হরিহরদিয়া, গঙ্গাধরদী, সেলিমপুর, জয়পুর ও পাট গ্রামের শত শত বিঘা ফসলি জমির পাশাপাশি তিন শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বলে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন জানিয়েছেন।

পাট গ্রামের গৃহবধূ আরজিনা বেগম বলেন, “অনেক কষ্টে পাকা একটা ঘর দিছিলাম। এইটাও যে কোন সময় পদ্মায় বিলিন হইয়া যাইব।
“আমগো সব শ্যাষ হইয়া যাইতেছে, কেউ চাইয়া দেখতেছে না।”
একই এলাকার ৮৫ বছর বয়সী বেলায়েত আলী বলেন, “২০ বিঘা জমি আছিল, সব ভাইঙ্গা গেছে কিছু নাই।”

জয়পুর এলাকার গৃহবধূ জোৎস্না বেগম বলেন, “একটা পাকা ঘর বানাইছিলাম ১৪ লাখ টাকা খরচ করে। ভাইঙ্গা নদীর ওইপার নিছি। এখন ঘর তোলার টাকাও নাই। আমগো সব শ্যাষ হইয়া গেল।”
স্থানীয়রা বলছেন, গত তিন বছরে হরিরামপুর উপজেলার লেছড়াগঞ্জ, আজিমনগর ও সুতালড়ি ইউনিয়নের আট শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি পদ্মায় তলিয়ে গেছে।
গত বছর লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের হরিহরদিয়ার নটাখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও গঙ্গাধরদীর পাঠানকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পদ্মায় হারিয়ে যায়।
বর্তমানে নটাখোলা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, নটাখোলা আফরোজা উচ্চ বিদ্যালয় ও লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ ভবন ঝুঁকিতে রয়েছে।

গত তিন বছরে চরাঞ্চলের একমাত্র এমপিওভুক্ত আজিমনগর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় চারতলা ভবন, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, হাতিঘাটা ও সোয়াখাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং সুতালড়ি ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনও পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, “এ বছর ইউনিয়নের সাতটি মসজিদ, সেলিমপুর, হরিহরদিয়া ও গঙ্গাধরদী বাজারসহ তিন শতাধিক বাড়িঘর ভেঙে নদীতে বিলিন হয়ে গেছে।”

হরিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তৌহিদুজ্জামান খান বলেন, সেলিমপুর, হরিহরদিয়া ও হরিনাঘাট এলাকায় ২০০ হেক্টর ফসলি জমি পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে।
চরাঞ্চলের ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আখতারুজ্জামান বলেন, “খুব দ্রুত ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”