“ভারত তাদের প্রয়োজনে কোন রকম সতর্ক বার্তা ছাড়াই গেট খুলে আমাদের পানিতে ডুবিয়ে মারছে; যা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।”
হতে সংগৃহিত
ভারতে মহানন্দা নদীর ফুলবাড়ী বাঁধের গেট খুলে দেওয়ায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার নদীর তীররক্ষা বাঁধের দুই পাশের প্রায় এক কিলোমিটার অংশ ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
সোমবার সকাল থেকে ভাঙন কবলিত উপজেলার বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের ঝাড়ুয়াপাড়া এলাকায় প্রাথমিকভাবে প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার বালিভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা শুরু হয়েছে বলে পঞ্চগড় জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশুতোষ বর্মণ জানান।
তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রশাসন থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, রোববার ভোররাতে অতি বৃষ্টির কারণে পাহাড়ি ঢলে মহানন্দার পানি বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছে যায়। তখন ভারত শিলিগুড়ি শহরের ফুলবাড়ি এলাকায় মহানন্দা নদীর ওপর নির্মিত বাঁধের নয়টি গেট এক সঙ্গে খুলে দেয়। এতে ১৫-২০ ফুট উঁচু থেকে পানি মহানন্দার বুকে আছড়ে পড়ে বাংলাদেশ সীমানায় নদীর তীরে আঘাত হানে।
ভারত এ দিন দুপুরের পর বাঁধের গেট বন্ধ করে দিলে নদীর পানি কমে যায়। কিন্তু বাংলাদেশ সীমান্তের ঝাড়ুয়াপাড়া এলাকায় তীররক্ষা বাঁধে তীব্র ভাঙন দেখা দেয়।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার আগে মহানন্দা নদীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তৃক ২০০৩-২০০৪ সালে নির্মিত সিসি ব্লক বাঁধের প্রায় এক কিলোমিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এছাড়া আরও কয়েক কিলোমিটার নদী তীররক্ষা সিসি ব্লক বাঁধে ফাটল দেখা দেয়।
এ সময় সীমান্তের ওপর লাগানো গাছপালা ও একটি টিনের ঘর ভেসে যায়। এতে ঝাড়ুয়াপাড়া, কাশিমগঞ্জ ও সন্ন্যাসীপাড়া গ্রামবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। নদী ভাঙন তীব্র আকার করার আতঙ্কে অনেক পরিবার নির্ঘুম রাত কাটায়।
ঝাড়ুয়াপাড়া গ্রামের দুলাল বলেন, ভারত ৯০ দশকের পর তাদের গ্রামসহ তিনটি বিদ্যুতের স্টিল পোল স্থাপন করে নদীর পানি প্রবাহ ঘুরিয়ে দেয়। তখন থেকে মহানন্দা নদীর পানি ওই গ্রোয়েন বাঁধে আঘাত পেয়ে বাংলাদেশ সীমান্ত তীরে আছড়ে পড়ে এবং তখন থেকে নদীর পাড়ের ফসলি জমি ভাঙতে শুরু হয়।
একই এলাকার নাজির বলেন, “ভারত তাদের প্রয়োজনে কোন রকম সতর্ক বার্তা ছাড়াই গেট খুলে আমাদের পানিতে ডুবিয়ে মারছে; যা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
বর্তমান সরকারের মাধ্যমে ভারতের এ আগ্রাসী মনোভাব থেকে রক্ষার জোর দাবি জানিয়েছেন ঝাড়ুয়াপাড়া গ্রামের নুর আলম ও রাশেদসহ অন্যরা।
বর্তমানে ভারতের বাঁধের গেট বন্ধ থাকায় মহানন্দা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে এবং স্থানীয় বান্দিাদের আতঙ্ক ‘অনেকটা কেটে গেছে’ বলে জানিয়েছেন তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আফরোজ শাহীন খসরু।
তিনি বলেন, “ভাঙন কবলিত এলাকায় রোববার এবং সোমবার পরিদর্শন করেছি। জিও ব্যাগে বালি ভরে প্রাথমিকভাবে বাঁধ রক্ষার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।”
ইতোমধ্যে ভাঙন কবলিত এলাকা মাপজোক করা হয়েছে জানিয়ে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশুতোষ বর্মণ বলেন, “প্রকল্প বরাদ্দের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেখান থেকে বরাদ্দ এলে পূর্ণাঙ্গভাবে কাজ শুরু করা হবে।”
রংপুর বিভাগীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মো. শফরাজ বাণ্ডা নদী তীর ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে ভাঙনরোধে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।
