কাতারে হামাস নেতাদের ওপর ইসরায়েলের হামলা এবং দখলকৃত পশ্চিম তীরে তাদের বসতি সম্প্রসারণ নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন মিত্রদের মধ্যে অবিশ্বাস ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।

হতে সংগৃহীত
কাতারে হামাস নেতাদের ওপর ইসরায়েলের হামলা এবং দখলকৃত পশ্চিম তীরে তাদের বসতি সম্প্রসারণ নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন মিত্রদের মধ্যে যে টানাপোড়েন ও অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তার মধ্যেই ইসরায়েল যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের শীর্ষ কূটনীতিক মার্কো রুবিও।
রওনা দেওয়ার আগে রুবিও সাংবাদিকদের বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কাতারে ইসরায়েলের হামলায় অসন্তুষ্ট।
যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও ইসরায়েলিদের সঙ্গে আলোচনায় হামাসের হাতে থাকে জিম্মিদের ফেরাতে, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে নির্মূল ও গাজা যুদ্ধ অবসানে ট্রাম্পের যে আকাঙ্ক্ষা তাতে এই হামলা কেমন প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে তিনি ইসরায়েলিদের সঙ্গে আলোচনা করবেন, বলেছেন মার্কিন এ পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
“যা হয়ে গেছে, হয়ে গেছে। আমরা তাদের সঙ্গে বসবো, আমরা ভবিষ্যতে কী কী হতে পারে তা নিয়ে কথা বলবো। এখনো ৪৮ জিম্মি আছে, যত দ্রুত সম্ভব, তাদের সবাইকে একসঙ্গে মুক্ত করতে হবে। এটা শেষ হলে আরও কঠিন কাজ বাকি, গাজাকে পুনর্গঠন করা, সেটাও এমনভাবে করতে হবে যেন তাদের চাহিদামতো জীবনমান পায়,” রুবিও এসব বলেছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
তবে এই পুনর্গঠন কে করবে, কে অর্থ দেবে এবং কে এই পুরো প্রক্রিয়ার দায়িত্বে থাকবে তা এখনও ঠিক হয়নি, বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কূটনীতিক রুবিও।
দিনকয়েকের মধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্টের ব্রিটেন সফর শুরু হওয়ার কথা, ইসরায়েল সফর শেষে রুবিও যুক্তরাজ্যে ট্রাম্পের সঙ্গে যোগ দেবেন।
প্রায় দুই বছর ধরে গাজায় চলা ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটির ৬৪ হাজার মানুষের প্রাণ গেছে বলে জানাচ্ছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষগুলো। তেল আবিবের এ যুদ্ধ গাজায় ভয়াবহ ক্ষুধাজনিত সঙ্কট তৈরি করেছে।
সাংবাদিকসহ বেসামরিকদের ওপর নির্বিচারে হামলা এবং ওই এলাকার মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যা সংঘটিত’ করার অভিযোগ আছে। চলতি মাসে এ অভিযোগদাতাদের তালিকায় যুক্ত হয়েছে গণহত্যা বিশেষজ্ঞদের সবচেয়ে বড় নেটওয়ার্ক আইএজিএস।
হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ ও জিম্মিদের মুক্তির চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর যারা মধ্যস্থতা করছে, তাদের মধ্যে কাতারও আছে। গত সপ্তাহের মঙ্গলবার হামাসের রাজনৈতিক নেতাদের হত্যার উদ্দেশ্যে ইসরায়েল দোহায় বিমান হামলা চালায়।
এ হামলার সমালোচনা করে মার্কিন কর্মকর্তারা পরে বলেন, এভাবে একতরফা উত্তেজনা বৃদ্ধিতে ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্র কারওই স্বার্থসিদ্ধি হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের খুবই ঘনিষ্ঠ এক মিত্রের ভূখণ্ডে তেল আবিবের হামলায় অন্যাান্য আরব দেশ কড়া নিন্দা জানিয়েছে। হামলাটি হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিমুক্তির আলোচনাও ভেস্তে দিয়েছে।
শুক্রবার হোয়াইট হাউসে রুবিও কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান আল-থানির সঙ্গে বৈঠক করেছেন; এতে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের পরস্পরবিরোধী স্বার্থের বিষয়টি ফের সামনে এসেছে, রুবিও তার এবারের সফরে এই পরস্পরবিরোধিতায় ভারসাম্য আনার চেষ্টা চালাবেন।
এ মাসের শেষদিকে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের একটি উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠক হতে যাচ্ছে, যেখানে ফ্রান্স, ব্রিটেনসহ বেশ কয়েকটি মার্কিন মিত্রদেশ ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তার আগে আগে রুবিওর ইসরায়েল সফর বিশ্বজুড়েই বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে।
ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার যে কোনো পদক্ষেপের বিরোধিতা করে আসছে ইসরায়েল। ওয়াশিংটনও বলছে, এ ধরনের স্বীকৃতি হামাসকে চাঙ্গা করবে এবং পশ্চিম তীরে বসতি সম্প্রসারণ চাওয়া কট্টরপন্থি ইসরায়েলিদের উসকে দেবে।
বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পশ্চিম তীরে বসতি সম্প্রসারণের পরিকল্পনা সংক্রান্ত একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ থেকে অবৈধ। ফিলিস্তিনিরা তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রে পুরো পশ্চিম তীরই চায়।
কয়েকদিন আগে সংযুক্ত আরব আমিরাত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণের ব্যাপারে সতর্ক করে বলেছিল, এমন কিছু হলে তাকে তারা ‘লাল দাগ অতিক্রম’ বিবেচনা করবেন এবং এই পদক্ষেপ আব্রাহাম চুক্তিকে ঝুঁকিতে ফেলবে।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া ওই চুক্তির মাধ্যমেই ২০২০ সালে আরব আমিরাত ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাভাবিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিল।